ঢাকা, বুধবার, ২০ কার্তিক ১৪৩১, ০৬ নভেম্বর ২০২৪, ০৪ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

রেলের জমি ‘দখল করে’ যুবলীগ নেতার পিকনিক স্পট

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২০১০ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২২, ২০২৩
রেলের জমি ‘দখল করে’ যুবলীগ নেতার পিকনিক স্পট

পাবনা: পাবনার ঈশ্বরদীর পাকশী হার্ডিঞ্জ ব্রিজ এলাকায় রেলওয়ের জমি দখল করে পিকনিক স্পট তৈরি করছেন বলে অভিযোগ উঠেছে এক ইউনিয়ন যুবলীগ নেতার নামে।  

অভিযুক্ত ওই যুবলীগ নেতার নাম মোক্তার হোসেন মুক্ত।

তিনি উপজেলার পাকশী ইউনিয়ন যুবলীগের সাবেক সহসভাপতি। যদি ওই যুবলীগ নেতার দাবি, তার বাবার লিজ নেওয়া জমিতে কফিশপ ও পিকনিক স্পট নির্মাণ করছেন তিনি।

সরেজমিনে দেখা গেছে, লালন শাহ সেতুতে উঠতেই ডানে সড়ক ও জনপথ বিভাগের পরিদর্শন বাংলো। বাংলোর হার্ডিঞ্জ ব্রিজমুখী ফটকের সামনে একটি কফিশপ। ওই কফিশপ ঘিরে তৈরি হচ্ছে পিকনিক স্পট। চলছে বসার বেঞ্চ, টেবিল ও ঘর তৈরির কাজ। নাম দেওয়া হয়েছে ‘হার্ডিঞ্জ সেতু পিকনিক স্পট অ্যান্ড লালন শাহ কফিশপ’।

স্থানীয়রা জানিয়েছেন, জমিটি পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ের। দুই বছর আগে যুবলীগ নেতা মোক্তার হোসেন জমিটির এক কোণায় একটি টং দোকান বানিয়ে দখল নেন। দিনে দিনে দোকানটির পরিধি বাড়তে থাকে। টং দোকান থেকে তৈরি হয় বিশাল কফিশপ। এরপর পরিধি বাড়িয়ে বানানো হচ্ছে পিকনিক স্পট। প্রথমে ছোট একটি কফিশপ বানিয়ে জমিটি দখলে নেন মোক্তার। এখন ইট দিয়ে সীমানাপ্রাচীর বানিয়ে বেঞ্চ, টেবিল ও ঘর বানানোর কাজ চলছে সেখানে।  

এলাকাবাসী বলছেন, প্রকাশ্যেই দিনদুপুরে চলছে এ নির্মাণ কাজ। রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ রহস্যজনক কারণে বিষয়টি দেখেও না দেখার ভান করছে।

তবে অভিযুক্ত যুবলীগ নেতা মোক্তার হোসেনের দাবি, হার্ডিঞ্জ ব্রিজ, লালন শাহ সেতু দেখতে আসা পর্যটকদের কথা ভেবে জনস্বার্থে এই কফিশপ ও পিকনিক স্পটটি তৈরি করছেন তিনি। রেলওয়ের জমি দখল করে এটি করছেন না বলেও দাবি তার।

মোক্তার হোসেন মুক্তি বলেন, আমার বাবা প্রয়াত আব্দুস ছাত্তার মোল্লা পাকশী রেলওয়ের নিরাপত্তা বাহিনীর কমান্ডিং পদে চাকরি করতেন। তার নামে ৯৯ বছরের জন্য রেলওয়ের কাছ থেকে এই জমি লিজ নেওয়া আছে। বাবা বেঁচে থাকাকালীন সময় থেকে এখানে লালনশাহ সেতুর নিচে লিচু বাগানসহ এই জায়গা আমরাই দেখভাল করছি। কোনো জমি দখলে যাইনি।

তবে কেন রেলওয়ের জমিতে পিকনিক স্পট?

জবাবে এ যুবলীগ নেতা বলেন, প্রতিদিন শত শত মানুষ হার্ডিঞ্জ ব্রিজ, লালন শাহ সেতু ও রূপপুরে নির্মাণাধীন পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্প দেখতে আসেন। কিন্তু সেখানে তাদের বসার বা ওয়াস রুমে যাবার ন্যূনতম ব্যবস্থাও নেই। অনেকে হাতমুখ ধুতে পানি চেয়েও পান না। তাই পর্যটকদের কথা ভেবে জনস্বার্থে এই কফিশপ ও পিকনিক স্পটটি তৈরি করছি।  

 টয়লেট, হাতমুখ ধোয়ার ব্যবস্থা না থাকায় তারা ভোগান্তিতে পড়তেন।

রেলওয়ের জমি ব্যবহারের অনুমতি নিয়েছেন কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, লিজ তো আগেই নেওয়া আছে আমার বাবার নামে। আর এই কাজের জন্য রেলওয়ে মন্ত্রণালয়ের কাছে আবেদন করা হয়েছে। খুব দ্রতই অনুমতি পেয়ে যাব। আর অনুমতি না দিলে কাজ বন্ধ করে দেব।

কিন্তু এমন কোনো অনুমতি কাউকে দেওয়া হয়নি এবং দেওয়া হবেও না বলে জানালেন পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ের পাকশী বিভাগী প্রকৌশলী-২ বীরবল মণ্ডল।  

তিনি বলেন, হার্ডিঞ্জ ব্রিজ এলাকায় কোনো পাকা স্থাপনা নির্মাণের জন্য কাউকে অনুমতি দেওয়া হয়নি। আর পিকনিক স্পটের জন্য অনুমতি আমরা দিইও না। সেখানে পাকা স্থাপনা নির্মাণের কোনো অনুমতি নেই। খুব শিগগিরই ওটা ভেঙে দেওয়া হবে।

জমিটি লিজ নেওয়া আছে কিনা প্রশ্নে এ প্রকৌশলী বলেন, ওই ব্যক্তির বাবার নামে কোনো লিজ আছে কিনা আমার জান নেই।  

একই বক্তব্য পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ের পাকশী বিভাগের ভূ-সম্পত্তি কর্মকর্তা মো. নুরুজ্জামানের।

হার্ডিঞ্জ ব্রিজ এলাকায় কোনো পাকা স্থাপনা নির্মাণের প্রশ্নই আসে না বলে মন্তব্য তার। তিনি জানালেন, ওই জমিতে কোনো পিকনিক স্পট তৈরির অনুমতি দেওয়া হয়নি কাউকে।  

হার্ডিঞ্জ ব্রিজ এলাকার নিরাপত্তায় নির্মাণাধীন পিকনিক স্পটের মাত্র ১০০ গজ দূরে একটি পুলিশ ফাঁড়ির অবস্থান। দখলের বিষয়টি দেখে নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা পুলিশও কিছু বলেছে না।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে ঈশ্বরদী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা অরবিন্দ সরকার বলেন, হার্ডিঞ্জ ব্রিজ অবকাঠামোর নিরাপত্তার বিষয়টি পাকশী ফাঁড়ির সদস্যরা দেখভাল করেন। এর সব দায়িত্ব রেলওয়ের। এরপরও খোঁজ নিয়ে দেখা হবে। সংশ্লিষ্ট দপ্তর অথবা বিভাগ আমাদেরকে জানালে আমরা তদন্ত করে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

এলাকাবাসীর দাবি, যুবলীগ নেতা মোক্তার হোসেন স্থানীয়ভাবে বেশ প্রভাবশালী। প্রভাব খাঁটিয়ে রেলওয়ের জমিটি দখলে নিয়েছেন।  

এ কথা তুললে পাকশী ইউনিয়ন যুবলীগের সভাপতি আনোয়ার হোসেন বলেন, মোক্তার হোসেন ইউনিয়ন যুবলীগের সাবেক সহ-সভাপতি। বর্তমানে দলের কোনো পদে নেই তিনি। শুনেছি পাকশী রেলওয়ের কাছ থেকে ৯৯ বছরের জন্য ওই জায়গা ও লিচু বাগান লিজ নেওয়া আছে। এই তথ্য সঠিক না হলে প্রশাসন ব্যবস্থা গ্রহণ করুক। তবে যদি নিয়ম অনুসরণ করে অনুমতি নিয়ে থাকে তবে আমরা তার সঙ্গে আছি। জনস্বার্থে তিনি ওখানে ভালো কাজই করছে বলে মনে হয়েছে। তবে দলীয় পরিচয় ব্যবহার করে অবৈধ কিছু করলে সেই দায়িত্ব তার নিজের, যুবলীগের নয়।

বাংলাদেশ সময়: ২০০০ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২২, ২০২৩
এসএএইচ
 

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।