খুলনা: ‘মশার যন্ত্রণায় ঘরে থাকা দুষ্কর, বাচ্চা নিয়ে অনেক বড় বিপদে আছি। মশারিও এখন মশা থেকে নিরাপত্তা দিচ্ছে না, মশার এমন রাজত্ব খুলনা শহরে আগে কখনো দেখিনি।
মশার অত্যাচারে অতিষ্ট খুলনার ময়লাপোতা এলাকার বাসিন্দা অ্যাডভোকেট হেলাল হোসেন বৃহস্পতিবার (২৩ ফেব্রুয়ারি) বাংলানিউজকে এসব কথা বলেন।
নগরীর সিমেন্ট্রি রোডের বাসিন্দা শেখ লুৎফুন্নাহার পলাশী বলেন, মশার উপদ্রব থেকে বাঁচতে চাই। জনজীবন অতিষ্ঠ হয়ে গেছে। বিশেষ করে শহরের প্রতিটা বাড়ির পাশ দিয়ে গেছে ছোট বড় অনেক ড্রেন। যেগুলো সিটি কর্পোরেশন সাধারণতো পরিষ্কার করে না। বাসাবাড়ি ও হোটেলের ময়লা আবর্জনাসহ নানা রকম বর্জ্য দ্বারা ড্রেনগুলো প্রতিনিয়ত ভর্তি হচ্ছে। ফলে মশাসহ নানারকম কীট-পতঙ্গ জন্ম নিচ্ছে সেগুলোতে। মশার কয়েল ধরানোয় বাড়িতে থাকা শ্বাসকষ্টের রোগীর ভয়াবহ ক্ষতি হচ্ছে।
তিনি বলেন, মেয়রের কাছে বিনীত অনুরোধ, অন্তত মাসে একবার করে হলেও ড্রেনগুলো যেন পরিষ্কার করা এবং মশা নিধনের যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হয়।
খালিশপুরের বাসিন্দা উদীয়মান যুব সমাজের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি মো. রবিউল গাজী উজ্জল বাংলানিউজকে বলেন, ১২ নম্বর ওয়ার্ডে ড্রেন পরিষ্কার করে না প্রায় ৩-৪ বছর হয়েছে। করোনার আগে আমরা স্থানীয়রা চাঁদা তুলে সব ড্রেন পরিষ্কার করে কাউন্সিলরকে বুঝিয়ে দিয়েছিলাম। সেই সঙ্গে বলেছিলাম যেন ড্রেন গুরো নিয়মিত পরিষ্কার করা হয়। কিন্তু দুয়েক মাস পরিষ্কার করার পর আর করেনি। ড্রেনগুলোর ভয়াবহ অবস্থা। এই ওয়ার্ডে প্রায় ৪০ হাজার মানুষ বসবাস করেন। এত ঘনবসতিপূর্ণ এলাকায় ড্রেনের অবস্থা এত খারাপ যে, গন্ধে থাকা যায় না। চায়ের দোকানে বসে এককাপ চা খাওয়া যায় না গন্ধে। খোলা ড্রেন হওয়ায় দুর্ভোগ আরও বেশি। ময়লা আবর্জনা হয়ে যাওয়ার কারণে মশার উপদ্রব বেড়েছে। যারা পরিষ্কার করতে আসবে তারাই ঢুকতে পারবে না ড্রেনে। তাই আসেও না, পরিষ্কার করেও না। স্থানীয় কাউন্সিলরকে অনেক অনুনয় বিনয় করেও কাজ হয় না।
খোঁজখবর নিয়ে জানা যায়, ৪৫.৬৫ বর্গ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের দেশের তৃতীয় বৃহত্তম শহর খুলনায় সম্প্রতি মশার উপদ্রব চরম অসহনীয় পর্যায়ে পৌছেছে। মশার উপদ্রবে টেকা দায় হয়ে উঠেছে নগরবাসীর।
স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, মশা নিধনে সিটি কর্পোরেশন কার্যকর পদক্ষেপ না নেওয়ায় এমন অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। এতে করে চরম ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে তাদের। আগে শুধু রাতেই মশার উৎপাত ছিল। এখন দিনের বেলায়ও মশার যন্ত্রণায় অতিষ্ঠ জনজীবন। শিক্ষার্থীদের পড়াশোনায় ব্যাঘাত ঘটছে।
নাগরিক নেতারা বলছেন, স্বাভাবিক সময়ের চেয়ে বর্তমানে মশার উপদ্রব অনেক বেশি। প্রতি বছরই এসময় এমন পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। এ কারণে দায়িত্বপ্রাপ্ত সংস্থা সময় মতো ব্যবস্থা নিলে নগরবাসীকে এমন ধকল সইতে হতো না। বাসাবাড়ি-কর্মস্থান কোথাও নিস্তার মিলছে না। কার্যকরভাবে পূর্বপ্রস্তুতি না নেওয়ায় এমন অবস্থা সৃষ্টি হয়েছে।
তাদর অভিযোগ— নিয়মিত পরিষ্কার না করায় সিটি কর্পোরেশনের অধিকাংশ খাল ও ড্রেন এখন মশার প্রজননস্থলে পরিণত হয়েছে।
খুলনা নাগরিক সমাজের সদস্য সচিব অ্যাডভোকেট মো. বাবুল হাওলাদার বলেন, মশার উপদ্রব থেকে রক্ষা পেতে হলে প্রথমত মশানাশক ওষুধের গুণগত মান নিশ্চিত করতে হবে, সংশ্লিষ্টদের কাজে থাকতে হবে স্বচ্ছতা-জবাবদিহিতা। বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় গতি আরও বাড়াতে হবে। মশার প্রজনন স্থানগুলো চিহ্নিত করে নিয়মিত ওষুধ ছেঁটাতে হবে। ড্রেন পরিস্কার-পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে এবং নগরীকে পলিথিন মুক্ত করা মশা নিধনের ক্ষেত্রে একটি জরুরী বিষয়।
কেসিসির প্রধান বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কর্মকর্তা মো. আবদুল আজিজ বাংলানিউজকে বলেন, মশা নিধোনের ক্রাশ প্রোগ্রাম বর্তমানে খালিশপুরে চলছে। শুক্রবার থেকে খুলনা সদরসহ ১৫টি ওয়ার্ডে শুরু হবে। ক্রাশ প্রোগ্রাম ছাড়াও নগরীতে মশা নিধোন কার্যক্রম চলমান রয়েছে। ৩১টি ওয়ার্ডে মশা নিধন কার্যক্রম পরিচালনা করছেন ৭৫ জন কর্মী। আরও জনবল প্রয়োজন। আধুনিক বর্জ্য পরিশোধনাগার নির্মাণ কাজ শেষ হলে নগরের বর্জ্য দ্রুত অপসারণ হয়ে যাবে। এতে মশার উপদ্রত কমে আসবে।
বাংলাদেশ সময়: ১২২৫ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২৩, ২০২৩
এমআরএম/এমএমজেড