ঢাকা: ন্যূনতম মজুরি ২৪ হাজার টাকা ঘোষণা করে নতুন মজুরি বোর্ড গঠনসহ ৬ দাবি জানিয়েছে গার্মেন্টস শ্রমিকরা।
রোববার (২৬ ফেব্রুয়ারি) জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে গার্মেন্টস শ্রমিক ও শিল্পরক্ষা জাতীয় মঞ্চ আয়োজিত শ্রমিক সমাবেশে তারা এসব দাবি জানান।
সমাবেশে বক্তারা বলেন, শ্রম আইনের ১৩৯ ধারা অনুযায়ী প্রতি পাঁচ বছর অন্তর নিম্নতম মজুরি নির্ধারনের বিধান এবং ১৪০ (ক) ধারার বিশেষ পরিস্থিতি বিবেচনায় নতুনভাবে মজুরি কাঠামো ঘোষণার বিধান আছে। কিন্তু এর কোনো সুফল গার্মেন্টস শ্রমিকেরা পাচ্ছে না।
তারা আরও বলেন, করোনা পরবর্তী সময়ে রফতানি প্রবৃদ্ধি ও ডলারের মূল্যবৃদ্ধির কারণে রফতানিকারকদের আয় বৃদ্ধি পেয়েছে। কিন্তু শ্রমিকরা এর কোনো সুফল পায়নি। অথচ ডলারের বিপরীতে টাকার অবমূল্যায়ন ও নিত্যপণ্যের বর্ধিত মূল্যের বোঝা চেপেছে শ্রমিকদের ঘাঁড়ে। শ্রমিকের প্রকৃত মজুরি অর্ধেকে নেমে যাওয়ায় জাতীয় মাথাপিছু আয়ের পরিমাণ বৃদ্ধির বিপরীতে শ্রমিকেরা অপুষ্টি আর অনাহারে অমানবিকভাবে জীবন-যাপন করছে।
তারা আরও বলেন, আইএলও কনভেনশন ১৩১ এ বলা হয়েছে, ন্যূনতম মজুরি অবশ্যই আইন দ্বারা নিশ্চিত করতে হবে। শ্রমিক ও তার পরিবারের প্রয়োজন, জীবনযাত্রার ব্যয়, সামাজিক নিরাপত্তা সুবিধা ইত্যাদিকে বিবেচনায় নিয়ে ন্যূনতম মজুরি নির্ধারণ করতে হবে।
বক্তারা আরও বলেন, বর্তমান বাজার অবস্থার প্রেক্ষাপটে গার্মেন্টস শিল্পে কর্মরত শ্রমিকদের মজুরি ২৪ হাজার টাকার নিচে হলে, তা কোনোভাবে ন্যায্য মজুরি হবে না। আমরা সামগ্রিক পরিস্থিতি বিবেচনায় গার্মেন্টস শ্রমিকদের জন্য অবিলম্বে নিম্নতম মজুরি বোর্ড গঠন ও শ্রমিকদের ন্যূনতম বেসিক ১৬ হাজার ও মোট মজুরি ২৪ হাজার টাকা ঘোষণা করার দাবি জানাচ্ছি। আমরা মনে করি মজুরি নির্ধারিত হলে তৈরি পোশাক শিল্প নিয়ে দেশে বিদেশে যে নেতিবাচক প্রচারণা রয়েছে তা বন্ধ হবে এবং বাংলাদেশের তৈরি পোশাক শিল্প 'মেইড ইন বাংলাদেশ' প্রচারণার দ্রুত সাফল্য অর্জিত হবে।
তাদের দাবিগুলো হলো- অবিলম্বে গার্মেন্টস শ্রমিকদের জন্য মজুরি বোর্ড গঠন ও বেসিক ১৬ হাজারসহ মোট ২৪ হাজার ন্যূনতম মজুরি ঘোষণা করতে হবে; গার্মেন্টস শ্রমিকদের ৩টি গ্রেডসহ বার্ষিক ১০ শতাংশ ইনক্রিমেন্ট ঘোষণা করতে হবে; গার্মেন্টস শ্রমিকদের জন্য অল্পমূল্যে রেশনিং ব্যবস্থা চালু করতে হবে; নূন্যতম মজুরি বোর্ডে অভিজ্ঞ সেক্টরাল শ্রমিক প্রতিনিধি নির্বাচিত করতে হবে; গার্মেন্টস শ্রমিকদের ৬ মাসের মাতৃকালীন ছুটির আইন পাশ করতে হবে; বাংলাদেশ শ্রম আইনের সব কালাকানুন আইন বাতিল করে গণতান্ত্রিক শ্রম আইন প্রণয়ন করতে হবে।
গার্মেন্টস শ্রমিক ও শিল্পরক্ষা জাতীয় মঞ্চের আহ্বায়ক আবুল হোসাইনের সভাপতিত্বে শ্রমিক সমাবেশে আরও উপস্থিত ছিলেন সদস্য সচিব রফিকুল ইসলাম সুজন, যুগ্ম আহ্বায়ক কাসরুন নাহার, বাহার আলী সুলতান, সদস্য কাজী মোহাম্মদ আলী, গোলাম কাদির প্রমুখ।
শ্রমিক সমাবেশ শেষে তারা শ্রমমন্ত্রীর কাছে স্মরকলিপি পেশের জন্য শ্রম অধিদফতর অভিমুখে মিছিল নিয়ে যান।
উল্লেখ্য, তৈরি পোশাক শিল্পে ক্রিয়াশীল ১৫টি সংগঠনের সমন্বয়ে ২০০৫ সালে গঠিত হয় গার্মেন্টস শ্রমিক ও শিল্প রক্ষা জাতীয় মঞ্চ।
বাংলাদেশ সময়ঃ ১৬৩৯ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২৬, ২০২৩
এসসি/এসএ