ঢাকা: ঈদ বা বড় কোনো উৎসবে ট্রেনের সিট আর আকাশের চাঁদ হাতে পাওয়া যেন সমান হয়ে উঠেছিল। কারণ রেলওয়ের টিকিট ক্রয়-বিক্রয়ে ছিল কালোবাজারিদের দৌরাত্ম্য।
একইসঙ্গে একজনের টিকেটে অন্যজন ভ্রমণ করতে পারবে না। অন্যের টিকেটে ভ্রমণ করলে জরিমানার মুখোমুখি হতে হবে।
বুধবার (১ মার্চ) সরেজমিনে কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশনে গিয়ে দেখা যায়, রেলের টিকিট কেনার জন্য অনলাইন রেজিস্ট্রেশন (নিবন্ধন) করতে গিয়ে ভোগান্তিতে পড়তে হয়েছে যাত্রীদের।
তবে রেজিস্ট্রেশন করার পরে সহজেই যাত্রীরা পাচ্ছেন কাঙ্খিত টিকিট। ভোগান্তির পরও টিকিট পাওয়ায় পরে নতুন প্রক্রিয়ায় অনেকে জানিয়েছেন সন্তুষ্টিও।
নানা ধাপে ভোগান্তিতে যাত্রীরা
ইমতিয়াজ আহমেদ নামে এক যাত্রী বলেন, টিকিট কাটার জন্য আগে রেজিস্ট্রেশন করা ছিলো। আবার ভ্যারিফিকেশন করতে গিয়ে জন্মনিবন্ধন নম্বর দিয়েছিলাম। কিন্তু ভ্যারিফাইয়িং দেখাচ্ছে, কাউন্টারে গেলেও কোনো সমাধান দিতে পারছে না। ফলে টিকিট না কেটে দাঁড়িয়ে রয়েছি।
সকাল সাতটায় চট্টগ্রামে যাওয়ার উদ্দেশ্যে কমলাপুর স্টেশনে এসেছিলেন বেগম রোকেয়া নামে পঞ্চাশোর্ধ্ব এক নারী।
স্টেশনে এসে জানতে পারেন জাতীয় পরিচয়পত্রের মাধ্যমে রেজিষ্ট্রেশন করার পরেই কেবল ট্রেনের টিকিট সংগ্রহ করা যাবে। নতুন এই নিয়মে ভোগান্তির ঘন্টাখানেক অপেক্ষার পরে এক সংবাদকর্মীর সাহায্য নিয়ে নিবন্ধনের জন্য মেসেজ পাঠিয়েছেন তিনি। নিবন্ধন প্রক্রিয়া সম্পন্নের আগেই তার ট্রেন ফ্ল্যাটফর্ম ছেড়ে চলে যায়।
এসময় ক্ষুব্ধ হয়ে তিনি বলেন, দেশ স্বাধীনের পরে কতবার কতভাবে রেলওয়ে নানা নিয়ম বানিয়েছে৷ এতে যাত্রী সাধারনের ভোগান্তি ছাড়া অন্য কোনো সুবিধা হতে দেখিনি। যে পদ্ধতিতে ভোগান্তি বাড়ে সেটা কেন করা হয় আমার বুঝে আসে না।
মোহাজ্জেল হোসেন নামে আরেক বৃদ্ধ গফরগাঁও যাওয়ার জন্যে ঘুরছিলেন তার নিবন্ধন করে দেওয়ার জন্য। তারপর এক যাত্রীকে ধরে নিবন্ধনের আবেদন করলেও আধাঘন্টা অপেক্ষার পরও তার সেই ফিরতি বার্তা আসেনি।
তিনি ক্ষোভ জানিয়ে বাংলানিউজকে বলেন, এত ঝামেলা করলে ট্রেনে যাতায়াত করব কীভাবে! নতুন সিস্টেম করছে কিন্তু আমরা কেউ তা জানি না৷ এইহানে কীভাবে কী করব সেটাও বুঝতে পারছি না।
আশিকুর রহমান নামে এক ছাত্র ঢাকায় ভর্তি কোচিং করতে এসেছেন। তিনি ট্রেনে করে বাড়ি যেতে কমলাপুর স্টেশনে এসে পড়েছেন ভোগান্তিতে।
এ শিক্ষার্থী বলেন, আমাদের আইডি কার্ড নাই, তাহলে কীভাবে যাব? বাবা-মায়ের আইডি কার্ডও সঙ্গে নেই। তাই নিবন্ধনও হলো না, টিকিটও পেলাম না। এখন ফিরে যাচ্ছি।
এ ভোগান্তির বিষয়ে জানতে চাইলে নিবন্ধন বুথে দায়িত্বরত রেলওয়ের কর্মকর্তা কবির উদ্দিন বলেন, যেসব যাত্রী অনলাইনে রেজিস্ট্রেশন ও টিকিট কাটতে পারছে না তাদের রেজিস্ট্রেশন আমরা করে দিচ্ছি। অনেকেই আছে সিস্টেমটা এখনো জানে না। তাই ভিড়ও করছে অনেকে। তবে সবাই সিরিয়াল অনুযায়ী আসলে কাজটা দ্রুত শেষ করা যায়।
ফিরতি বার্তা আসতে কেন দেরি এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, অনেকেই ভোটার আইডি নম্বর ও জন্ম তারিখ ভুল দেওয়ার কারণে ফিরতি বার্তা আসতে দেরি হয় বা আসে না। তবে সব কিছু ঠিক থাকলেও অন্তত ১০ মিনিট সময় তো দিতেই হবে।
যাত্রীরা সহজেই পাচ্ছেন টিকিট
যাত্রীরা নিবন্ধনের জটিলতায় পড়লেও রেলের টিকিট সহজলভ্য হয়েছে। কারণ নতুন প্রক্রিয়ায় কালোবাজারিদের টিকিট কেনা বন্ধ হয়েছে বলেই মনে করছেন যাত্রীরা।
স্ত্রীকে ডাক্তার দেখানোর জন্য চুয়াডাঙ্গা থেকে ঢাকার একটি হাসপাতালে এসেছেন গোলাম মোস্তফা। আগামীকাল চুয়াডাঙ্গা ফিরে যেতে ট্রেনের অগ্রিম টিকিট কাটতে কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশনে আসেন তিনি। স্টেশনের বুথ থেকে নিবন্ধন করে টিকিট কাটেন তিনি।
টিকিট হাতে পাওয়ার পরে চল্লিশোর্ধ্ব এ ব্যক্তি বলেন, সুন্দরবন এক্সপ্রেসের টিকিট কাটতে এসে শুনি আগে নিবন্ধন করতে হবে। নিবন্ধন করতে একটু সময় লাগলেও কাউন্টার থেকে টিকিট সঙ্গে সঙ্গেই পেয়েছি। আগে সিট পাওয়া যেতো না। আজ একদিন আগে এসেই দুটি সিট পেয়েছি।
অন্যের সহযোগিতা নিয়ে নিবন্ধন করেই কয়েক মিনিটেই টিকিট পেয়ে সফিকুল ইসলাম বলেন, এবার মনে হয় টিকিট কালোবাজারি কমবে। নিবন্ধন না থাকলে টিকিট কাটতে পারবে না। আবার একজনের টিকিট দিয়ে অন্যজনও যেতে পারবে না।
পাবনার ঈশ্বরদীতে যাওয়ার জন্য সিল্কসিটি এক্সপ্রেসের টিকিট কাটতে এসেছিলেন মাহবুবুর রহমান ।
দিনের টিকিট দিনেই সিটসহ পেয়ে উচ্ছ্বসিত হয়ে তিনি বলেন, ট্রেন ছাড়ার আগে সিটসহ টিকিট পেয়েছি। টিকিট কাটতেও তেমন ঝামেলা হয়নি। সহজেই পেয়ে গেছি।
এর আগে সকাল ৮টায় অনলাইন টিকেটিং ব্যবস্থা পরিদর্শনে এসে রেলমন্ত্রী নুরুল ইসলাম সুজন বলেন, আগে টিকিট হলেই একজন যাত্রী ভ্রমণ করতে পারতো, এখন আপনার টিকেটে আপনাকে ভ্রমণ করতে হবে। টিকিট থাকলেই ভ্রমণ করা যাবে না। আর বিনা টিকিটে কেউ ভ্রমণ করলে তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
‘এর আগে সুযোগ ছিল পাঁচটা বা দশটা টিকিট কেটে কালোবাজারি করে বিক্রি করা যেতো। এখন সেটা পারবে না। ’ যোগ করেন মন্ত্রী।
টিটইরা অনিয়মে জড়িত থাকলে কী ব্যবস্থা- এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, যদি টিটিইদের বিরুদ্ধে কোনো জালিয়াতি বা অনিয়মের অভিযোগ আসে তবে কর্মচারী বিধিমালা আইনে শাস্তি পাবে।
রেলওয়ে কবে পুরো টিকেটিং ব্যবস্থা অনলাইনে আনবে- এমন প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী বলেন, ধীরে ধীরে অনলাইন টিকেটিং ব্যবস্থায় আসবে রেলওয়ে। এখনও যেহেতু অনেক যাত্রী নিন্মআয়ের কিংবা শিক্ষিত নয় তাদের জন্যে কাউন্টারে ব্যবস্থা রেখেছি।
বাংলাদেশ সময়: ১৪১৪ ঘণ্টা, মার্চ ০১, ২০২৩
এনবি/এসএ