ঢাকা: একের পর এক বিস্ফোরণ, অগ্নিকাণ্ড ও হামলার ঘটনাকে শুধু দুর্ঘটনা বা আকস্মিক কোনো বিষয় মনে করছে না ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকার। দেশকে অস্থিতিশীল করতে আগে থেকে পরিকল্পিতভাবে এসব ঘটনা ঘটানো হতে পারে।
সম্প্রতি রাজধানীসহ দেশের কয়েকটি স্থানে ভবনে বিস্ফোরণ, অগ্নিকাণ্ড ও আহমদিয়া সম্প্রদায়ের ওপর হামলার ঘটনায় বেশ কিছু মানুষ হতাহত হয়েছেন। মার্চের শুরুতেই একের পর এক এসব ঘটনা ঘটেছে। কয়েক দিনের ব্যবধানে রাজধানীর সায়েন্স ল্যাব এলাকা ও গুলিস্তানের সিদ্দিক বাজারে ভবনে বিস্ফোরণের ঘটনায় ২৫ জন প্রাণ হারিয়েছেন, এর মধ্যে সিদ্দিকবাজারের মৃতের সংখ্যা ২২ জন। এর আগে চট্রগ্রামে অক্সিজেন উৎপাদন কারখানায় বিস্ফোরণে ৬ জন মারা যান এবং আহত হন ২৫ জন। কক্সবাজারের রোহিঙ্গা ক্যাম্পে অগ্নিকাণ্ডে দুই হাজারের বেশি ঘর পুড়ে যায়। এর আগেও একাধিকবার রোহিঙ্গা ক্যাম্পে অগ্রিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে। একই সময় পঞ্চগড়ে আহমদিয়া সম্প্রদায়ের ওপর হামলায় দুইজন নিহতসহ শতাধিক আহত হন।
একের পর এক এসব ঘটনার সঙ্গে কোনো নাশকতার সম্পৃক্ততা আছে কি না তা নিয়ে এরই মধ্যেই আওয়ামী লীগ ও সরকারের পক্ষ থেকে সন্দেহ প্রকাশ করা হয়েছে। কোনো গোষ্ঠী দেশকে অস্থিতিশীল করতে পরিকল্পিত নাশকতা করছে কিনা বা এসব ঘটনার সঙ্গে কোনো নাশকতার সংশ্লিষ্টতা আছে কিনা সে সন্দেহ পোষণ করা হচ্ছে। এমনকি সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলনরত আওয়ামী লীগের বিরোধী রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ বিএনপিকে নিয়েও সন্দেহ করা হচ্ছে।
আওয়ামী লীগ সরকারের একাধিক সূত্র জানায়, দেশকে অস্থিতিশীল করতে বিভিন্ন সন্ত্রাসী গোষ্ঠী বিভিন্ন সময় বিভিন্ন ধরনের ঘটনা ঘটাচ্ছে এবং চেষ্টা করে আসছে। আওয়ামী লীগের প্রধান রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ বিএনপি এরই মধ্যে সরকারকে উৎখাত করতে আন্দোলন শুরু করেছে। দলটির সঙ্গে স্বাধীনতা বিরোধী সাম্প্রদায়িক বিভিন্ন দলও রয়েছে। সরকার পতনের আন্দোলন চলাকালে এসব ঘটনাকে আওয়ামী লীগ ও সরকারের নীতিনির্ধারকরা পরিকল্পিত নাশকতার সন্দেহও করছেন।
এদিকে সরকারের পদত্যাগের দাবিতে বিএনপির এ আন্দোলনকে ব্যর্থ হিসেবেও দেখছে আওয়ামী লীগ। এ আন্দোলনের সঙ্গে জনগণের কোনো সম্পৃক্ততা নেই বলে আন্দোলন তারা ব্যর্থ হচ্ছে। আন্দোলনে বিএনপির ব্যর্থতার কারণে এ ধরনের ঘটনা ঘটানো হচ্ছে কিনা এমন সন্দেহও করা হচ্ছে। আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের এমন সন্দেহের বিষয়টি জানিয়েছেন।
ওই সূত্রগুলো আরও জানায়, যদিও ত্রুটিপূর্ণ গ্যাস, বিদ্যুৎ, পানি, স্যুয়ারেজ লাইন, ভবনে রাসায়নিক পদার্থ মজুদ, অব্যবস্থাপনা, অপরিকল্পিত ও দুর্বল অবকাঠামোসহ বিভিন্ন কারণে ঢাকায় এ ধরনের বিস্ফোরণের ঝুঁকি সব সময়ই রয়েছে বলে বিভিন্নভাবে বিভিন্ন তথ্য বিশ্লেষণে উঠে আসছে। এর পাশাপাশি এত অল্প সময়ের মধ্যে একই ধরনের বিস্ফোরণের ঘটনা সন্দেহের জন্ম দিচ্ছে বলে আওয়ামী লীগ ও সরকারের নীতিনির্ধারকরা মনে করছেন। রোহিঙ্গা ক্যাম্পের অগ্নিকাণ্ডের ঘটনাগুলো নিছক দুর্ঘটনা নাকি পরিকল্পিত কোনো ঘটনা সে সন্দেহ রয়েছে।
সিদ্দিকবাজারের ঘটনার পর দিন ৮ মার্চ আওয়ামী লীগের এক যৌথসভায় দলের সাধারণ এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেন, একের পর এক এসব দুর্ঘটনা দুঃখজনক। আন্দালনের ব্যর্থতা থেকে নাশকতা ঘটানো হচ্ছে কিনা বা নাশকতার পথে হাঁটা হচ্ছে কিনা তা গভীরভাবে খতিয়ে দেখছি। এর সঙ্গে কোনো ব্যক্তি বা দলের সংশ্লিষ্টতা আছে কিনা তা তদন্ত হচ্ছে। এর একদিন আগে ওবায়দুল কাদের আহমদিয়াদের ওপর হামলার ঘটনা উসকানি কিনা প্রশ্ন করে ওই ঘটনায় জড়িত যাদের গ্রেফতার করা হয়েছে তাদের মধ্যে একজন বিএনপি নেতাও আছে বলে জানান।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী বাংলানিউজকে বলেন, রোহিঙ্গা ক্যাম্পে আগুন এবং আহমদিয়াদের ওপর হামলা এটা তো সম্পূর্ণ পরিকল্পিত ঘটনা। মির্জা ফখরুল তো বলেছেন ধারাবাহিক ঘটনা। বিএনপি তো গত ১৪ বছর ধরেই একের পর এক বিভিন্ন ঘটনা ঘটিয়ে আসছে। হেফাজতের ঘটনায় খালেদা জিয়া তিনি তখন জেলে যাননি তিনি সরাসরি সমর্থন দিয়েছিলেন। যুদ্ধাপরাধীদের প্রকাশ্যে তিনি মুক্তি দাবি করেছেন। টহল পুলিশের ওপর হামলা করেছে তারা। তারা তো এ ধরনের ঘটনা ঘটিয়ে যাচ্ছে। পঞ্চগড়ের ঘটনার সঙ্গে চিহ্নিতরা জড়িত। শেখ হাসিনার নেতৃত্বে দেশ এগিয়ে যাচ্ছে এগুলো তারা ভালোভাবে নিতে পারছে না। দেশ বিরোধী সাম্প্রদায়িক গোষ্ঠীর আশ্রয়, মূল প্লাটফর্ম বিএনপি।
এ বিষয়ে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য আব্দুর রহমান বাংলানিউজকে বলেন, এগুলো পরিকল্পিত নাশকতা এ সন্দেহ না করার কোনো অবকাশ নেই। সরকার এগুলো খুবই গুরুত্বের সঙ্গে খতিয়ে দেখছে। পরীক্ষিত সন্ত্রাসী জঙ্গিবাদী গোষ্ঠী ও তাদের প্রশ্রয়দাতারা এ ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকতে পারে। আমরা আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে দাবি জানাই গভীরে গিয়ে তদন্ত করে এর রহস্য উদঘাটন করা। জাতিও এটা জানতে চায়।
বাংলাদেশ সময়: ২০২০ ঘণ্টা, মার্চ ১০, ২০২৩
এসকে/জেএইচ