ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৮ নভেম্বর ২০২৪, ২৬ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

মা আপনি হাজার বছর প্রধানমন্ত্রী থাকেন: মনোয়ারা

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৬৩৪ ঘণ্টা, মার্চ ২২, ২০২৩
মা আপনি হাজার বছর প্রধানমন্ত্রী থাকেন: মনোয়ারা

বরিশাল: ভিডিও কনফারেন্সে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সরাসরি কথার সুযোগ পেলেন বরিশালের বানারীপাড়া পৌরসভার উত্তর পার আশ্রায়ন প্রকল্পের উপকারভোগী মনোয়ারা সুন্দরী (মনোয়ারা বেগম)।

আর সুযোগ পেয়েই প্রধানমন্ত্রীকে নেমন্ত্রণ করলেন তিনি একসঙ্গে ভাত খাওয়ার।

শেখ হাসিনার দীর্ঘায়ু কামনা করলেন তিনি।  

প্রধানমন্ত্রীকে মা সম্বোধনে মনোয়ারা বললেন, মা আপনি হাজার বছর প্রধানমন্ত্রী থাকেন, আমি এইয়া দেখতে চাই। আবার যেন আপনারে জয়যুক্ত কইর‌্যা এই বানারীপাড়াইদ্যা আপনার গলায় মালা পড়াইতে যাইতে পারি।

বুধবার (২২ মার্চ) ভূমিহীন ও গৃহহীন পরিবারকে জমি ও গৃহ হস্তান্তর কাজের উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।  যারমধ্য দিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে বরিশাল বিভাগে ৬ জেলার ৪ হাজার ৭৭৯ টি পরিবারকে জমি ও ঘর দেওয়া হয়।

হস্তান্তর কার্যক্রমের শুভ উদ্বোধন অনুষ্ঠানে ভিডিও কনফারেন্সে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সরাসরি কথা বলেন উপকারভোগীরা।

সেখানেই মনোয়ারা বেগমের সঙ্গে কথা হয় প্রধানমন্ত্রীর।

মনোয়ারা বেগম বলেন, ৭১ এ মিলিটারিরা আমাগো ঘর পোড়াইয়া দিছে। ভিক্ষা কইরা একটা ঘর উঠাইছিলো মা। হেইডাও বইন্যায় চইল্যা গেছে। মায় আমাগো দুই বইন লইয়্যা বানারীপাড়া প্রোপারে চইল্যা আইলো, তহন এই জায়গায় ওইজায় ঘুরি।

ঘর পেয়ে সন্তুষ্টি প্রকাশ করে তিনি প্রধানমন্ত্রীকে বলেন, এরপর ১৮ বছর আগে মা আপনার বাড়ি গ্যাছিলাম আমিরুন্নেছারে লইয়্যা।  এরপর আপনার সাথে আমি নামাজ পড়ছি, খানা খাইছি। আপনে নামাজের ঘরে বইস্যা মিলাদ-দুরুদ পরছেন।  আর এহন আমারে আপনে ঘর দেছেন। আপনার বাড়ি থেকে আইয়া যে বাড়ি রইতাম হেইখান থেকে নামাইয়া দেছে। পৌরসভার সামনে একটা পুরান হাসপাতাল, সেই ঘরে আমি আমার মাইয়া পোলারে লইয়্যা আশ্রয় নিছি রাইতে। সেই জায়গায় আমার মা-ছেলে মারা গেছে। ১০ বছর থাকার পর সেখান থেকেও উচ্ছেদ করে দিলে আমি কোনো থাকার জায়গা পাই নাই।  আইজ যেহানে বইয়া কথা বলতাছি, এহানে ৫ বার ঘর উঠাইছি, আর ৫ বারই উচ্ছেদ করছে। আমারে এককালে হুতাহারা (নিঃস্ব)করছে। তয় এহন যে ঘর দেছেন হেইখানে আমার ঘরে ১৫ জন লোক।

মনেয়ারা সুন্দরী প্রধানমন্ত্রীকে বলেন, এই ঘর পাইয়া আমি খুশি, আপনার সাথে ভাত খাইছি, এহন একটু আসা আপনের সাথে আবার ভাত খামু। আপনি যদি একটু বানারীপাড়া আইতেন তয়, মা বানারীপাড়া ধন্য হইতে। আমনে যদি একটু বানারীপাড়া আইতেন, মা আসবেন। কত গরীব-দুঃখী মানুষ মা আপনার জন্য কানতাছে।  

বানারীপাড়ার এই বাসিন্দা প্রধানমন্ত্রীকে বললেন, আপনারও মা-বাপ নাই, মোরও মা-বাপ নাই, ভাই নাই, বইন নাই। মুই (আপনার মতোই) জনম দুঃখিনী। একটা দাবি করি, আপনে একটু বানারীপাড়া আসেন মা, আমনের সাথে দুগ্গা (একটু) খানা খাওনের আশা, আর কোনো আশা নাই। মা আপনি একটু বানারীপাড়া আসেন দয়া কইরা।

প্রতি উত্তরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বললেন, আসবো আসবো, দেখি সময় পেলে আসবো।

এরপর একই আশ্রায়ন প্রকল্পের মো. হুমায়ুন নামে অপর উপকারভোগীর কথা শোনেন প্রধানমন্ত্রী।  

হুমায়ুন বলেন, দিনমজুর বাবার সন্তান আমি, আমার জন্মের আগেই ঘর-বাড়ি নদীতে ভেঙে যায়। বাবা রাস্তার পাশে খুপড়ি ঘর তুলে বসবাস করতেন। বর্ষায় পানিতে তলিয়ে থাকতো আমাগো ঘর।

তিনি বলেন, আমার ঘরে স্ত্রী, মা ও কন্যা সন্তান রয়েছে, আমি কোনদিন পারতাম না এরকম স্বপ্নের ঘর তৈরি করে দিতে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আমি জীবনে সপ্ন দেখতাম না বিল্ডিং করে বসবাস করব। কারণ এজন্য যে পরিস্থিতি থাকা দরকার তা আমার নেই। আমি দিনমজুরি করে দিন আনি দিন খাই। আপনি মমতামীয় মা বলেই আমাদের একটি দুইশতক জমির ওপর ঘর দিয়েছেন, পাশে পুকুরে, গভীর নলকূপ দিয়ে বিশুদ্ধ পানি পান করার সুবিধা, বিদ্যুতের ব্যবস্থা করেছেন। এ ঋণ কোনদিন শোধ করতে পারবো না। আপনার এই ঘর আমার কাছে রাজপ্রসাদের সমান।

উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বরিশালের জেলা প্রশাসনক মো. জাহাঙ্গীর হোসেন তার বক্তব্যে বলেন, বরিশাল জেলার ৫ হাজার ৯৩৫ টি ভূমিহীন ও গৃহহীন পরিবারের মধ্যে ৩ হাজার ২৪০ টি পরিবারকে দুই শতক জমি সহ গৃহ প্রদান করা হয়েছে। আজ আরও ১ হাজার ৫০১ টি ভূমিহীন ও গৃহহীন পরিবারকে দুই শতক জমিসহ ঘর প্রদান করেছেন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী। সেইসঙ্গে বরিশাল জেলার বাবুগঞ্জ, মুলাদী, বাকেরগঞ্জ ও উজিরপুরসহ চারটি উপজেলাকে ঘর ও ভূমিহীন ঘোষণা করেছেন।

তিনি বলেন, ৬ একর ৩০ শতাংশ জমি অবৈধ দখলমুক্ত করে সন্ধ্যা নদীর তীরে বানারীপাড়া পৌরসভার উত্তর পার আশ্রায়নে ৮৭ পরিবারকে পুনর্বাসিত করা হয়েছে। আরও ১৫০ টি পরিবারকে পুনর্বাসিত করার কার্যক্রম চলমান।  এখানকার প্রতি শতাংশ জমির বর্তমান বাজার মূল্য ৬ লাখ টাকা ফলে দুইশতক জমিসহ প্রতিটি ঘরের মূল্য ১৫ লাখ টাকা।  এখানে ৮৭ টি উপকারভোগী পরিবারের প্রত্যেকেই আজ থেকে ১৫ লাখ টাকার সম্পদের মালিক।  

তিনি বলেন, এখানে বসবাসকারী উপকারভোগীদের সুবিধার জন্য সুন্দর পুকুর খনন করে দেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি নামাজের জন্য মসজিদ নির্মাণ ও কবরস্থান নির্মাণের কার্যক্রম হাতে নিয়েছি।

বরিশালের বিভাগীয় কমিশনার মো. আমিন উল আহসান জানান, আজ বরিশাল বিভাগে তৃতীয় পর্যায়ের অবশিষ্ট ও চতুর্থ পর্যায়ে মোট ৪ হাজার ৭৭৯ পরিবারকে ২ শতক করে জমিসহ ঘর দেওয়া হয়েছে।  এরআগে তিনটি পর্যায়ে বরিশাল বিভাগে মোট ২০ হাজার ১ টি গৃহ নির্মাণপূর্বক গৃহ ও ভূমিহীনদের মাঝে হস্তান্তর করা হয়।  

বাংলাদেশ সময়: ১৬৩০ ঘণ্টা, মার্চ ২২, ২০২৩
এমএস/এসএএইচ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।