ঢাকা: রাজধানীতে বছরে নির্মিত ভবনের ১০ শতাংশের ক্ষেত্রেও স্ট্রাকচারাল ডিজাইন মানা হয় না বলে মন্তব্য করেছেন দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক (ডিজি) মো. মিজানুর রহমান।
বৃহস্পতিবার (২৩ মার্চ) দুপুরে রাজধারীর বনানীর একটি হোটেলে ‘স্ট্রেংদেনিং আরবান পাবলিক-প্রাইভেট প্রোগ্রামিং ফর আর্থকোয়েক রেজিলিয়েন্স’ (সুপার, SUPER) কনসোর্টিয়াম প্রকল্প আয়োজিত ‘দুর্যোগ ঝুঁকি নিরসনে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার ব্যবহার’ বিষয়ক শীর্ষক এক কর্মশালায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ মন্তব্য করেন।
ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন সিভিল প্রটেকশন এন্ড হিউমেনিটেরিয়ান এইডের (ECHO) অর্থায়নে আয়োজিত এ কর্মশালায় দুর্যোগ ঝুঁকি নিরসনে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার ব্যবহার বিষয়ে সচিত্র উপস্থাপনা করা হয়।
ডিজি মো. মিজানুর রহমান বলেন, প্রতি বছর ঢাকায় এক লাখের বেশি নতুন ভবন নির্মিত হয়। এরমধ্যে ১০ হাজার ভবন কোনো রকমে পাশ করে আর্কিটেকচারাল ডিজাইন। দেখতে ভালো হলেও এগুলো স্ট্রাকচারাল ডিজাইনের নয়।
তিনি বলেন, এসব সুপারভাইজ করার মতো লোকও নেই। থাকলেও আগ্রহ নেই। বললে সরকারেরই অন্য সংস্থার বদনাম হয়। আসলে এগুলো করার কথা রাজউকের। কিন্তু রাজউক সেটা করেও না, করছেও না, করতে পারেও না। আল্টিমেটলি আমরা সবাই ঝুঁকিতে, অতি ঝুঁকিতে আছি।
তিনি আরও বলেন, ১৮৯৭ সালে বাংলাদেশে ৮ মাত্রার আশপাশে ভূমিকম্প হয়েছিল। সে সময় মৃত্যুর সংখ্যা তুলনামূলকভাবে কমই ছিল। কারণ তখন টিনের বাড়িই বেশি ছিল। টিনের নিচে পড়লে হয়তো কারো কাটবে বা ফাটবে, কিন্তু মৃত্যুর ঝুঁকি কম।
১০০ বছর পর পর এ ধরনের ভূমিকম্প রিপিট হয়। সে হিসেবে ১০০ বছর পার হয়ে গেছে। নতুন একটি ভূমিকম্প এখন আমাদের প্রকৃতিগতভাবে পাওনা। সেটি হলে আমাদের কি হবে সেটি ভেবে পাই না।
তিনি বলেন, আসলে আমাদের ঝুঁকি নিরসনে কি করা উচিত দেরি না করে এখনই ভাবতে হবে, পরিকল্পনা নিতে হবে। যেসব ভবন ভূমিকম্প ঝুঁকিমুক্ত নয়, সেগুলো রেকটোফিটিং করতে হবে। এক বছরে যদি এরকম নতুন লাখ পরিমাণ ভবন নির্মিত হয় তবে কতগুলোতে আপনি রেকটোফিটিং করাবেন? সব দোষ আমাকে দিয়েও বা লাভ কি?
কোনো দুর্যোগ আসলে একা আসে না উল্লেখ করে তিনি বলেন, একটা দুযোর্গ আসলে আরেকটা কুটুমের মতো হাজির হয়। তুরস্কে যেমন ভূমিকম্পের পর বন্যা হাজির। আমাদের ক্ষেত্রেও তাই। সুতরাং দুর্যোগ বিষয়ে আমাদের জনগণকে জানাতে হবে, সতর্ক করতে হবে। শিল্প বিপ্লবের সব ধরনের প্রযুক্তির দিক আছে তা আমাদের জন্য কনভার্ট করে জাতির জন্য উপযোগী করতে হবে। মোবাইলে সিগন্যালিং সিস্টেম, বন্যা ও ভূমিকম্পের আর্লি মর্নিং সিস্টেম চালু করতে হবে।
দুর্যোগের ঝুঁকি নিরসনে আমাদের সবাইকে একসঙ্গে কাজ করতে হবে। প্রত্যেক ঘরে ঘরে ঝুঁকি নিরসনের জন্য প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম রাখতে হবে। একইসঙ্গে বাসা বাড়িতে আগুনের এবং অন্যান্য ঝুঁকি বাড়ায় এমন সরঞ্জামের ব্যবহার কমাতে হবে।
কর্মশালায় আগত অতিথিরা দুর্যোগ ঝুঁকি নিরসনে তাদের গুরুত্বপূর্ণ মতামত প্রদান করেন। তারা বলেন, সামাজিক ও অর্থনৈতিক উন্নয়নের জন্য দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অপরিহার্য। একই সঙ্গে জরুরি কার্যক্রম এবং দুর্যোগ ব্যবস্থাপনায় আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে প্রাথমিক শনাক্তকরণের মাধ্যমে দুর্যোগের ঝুঁকি নিরসন করতে হবে।
কর্মশালায় আরও উপস্থিত ছিলেন ইউনাইটেড পারপাস বাংলাদেশের কান্ট্রি ডিরেক্টর শ্রীরামাপ্পা গঞ্চিকারা, ইউনাইটেড পারপাস বাংলাদেশের দুর্যোগ ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা ও জরুরি সাড়াদান ইউনিটের প্রধান মাসুদ রানা, ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের কম্পিউটার সায়েন্স ও প্রকৌশল বিভাগের চেয়ারম্যান সাদিয়া হামিদ কাজী।
সুপার কনসোর্টিয়াম প্রকল্প ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের সহায়তায় একটি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ভিত্তিক সমাধান কল্যাণপুর বস্তিতে পরীক্ষামূলকভাবে স্থাপন করেছে। যা আগুন এবং জলাবদ্ধতা সংক্রান্ত দুর্যোগ ঝুঁকির আগাম পূর্বাভাস দিতে সক্ষম। ফলে, দুর্যোগে ক্ষয়ক্ষতি রোধ অনেকাংশে সম্ভব হবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
দুর্যোগে সহনশীলতা গড়ে তোলার জন্য সুপার কনসোর্টিয়াম প্রকল্পটি যৌথভাবে বাস্তবায়ন করছে অ্যাকশনএইড, ঢাকা চেম্বার অফ কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (ডিসিসিআই), ইউনাইটেড পারপাস এবং ওয়ার্ল্ড ভিশন। প্রকল্পে কৌশলগত সহায়তাকারী সংস্থা হিসেবে কাজ করছে জাতিসংঘের আবাসিক সমন্বয়কারীর দপ্তর (ইউএনআরসিও)।
বাংলাদেশ সময়: ১৯১৬ ঘণ্টা, মার্চ ২৩, ২০২৩
পিএম/জেএইচ