ঢাকা: রাজধানীর বঙ্গবাজারে লাগা আগুন নির্বাপণে বর্তমানে ফায়ার সার্ভিসের ১২টি ইউনিট পর্যায়ক্রমে কাজ করছে বলে জানিয়েছেন বাহিনীটির মহাপরিচালক (ডিজি) ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. মাইন উদ্দিন।
বুধবার (৫ এপ্রিল) দুপুর ১টায় ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তরের সামনে গণমাধ্যমকর্মীদের ব্রিফিংকালে তিনি এই তথ্য জানান।
মো. মাইন উদ্দিন বলেন, এনেক্সকো টাওয়ারের চতুর্থ, পঞ্চম, ষষ্ঠ ও সপ্তম তলায় যেহেতু গুদাম ঘর, তাই আমরা এখনো সেখানে আগুন নেভানোর কাজ করে যাচ্ছি। গতকাল ও আজ মিলিয়ে ফায়ার সার্ভিসের প্রায় ৭০০ সদস্য আগুন নেভানোর কাজ করেছেন। বর্তমানে আমাদের ১২টি ইউনিট পর্যায়ক্রমে কাজ করে যাচ্ছে।
তিনি বলেন, গতকাল ভোর ৬টা ১০ মিনিটে বঙ্গবাজার মার্কেটে আগুন লাগে। খবর পেয়ে আমাদের প্রথম ইউনিট ৬টা ১২ মিনিটে অগ্নি নির্বাপণের কাজ শুরু করে। এরপর একে একে যোগ দেয় ৪৮টি ইউনিট। গাজীপুর ও নারায়ণগঞ্জ থেকেও দুইটি ইউনিট এসে আগুন নেভানোর কাজে যোগ দেয়। পরে দুপুর ১২টা ৩৬ মিনিটে আমরা আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে সক্ষম হই। এখনো আমাদের অগ্নি নির্বাপণের কাজ চলছে। কারণ ছোট ছোট আগুন রয়ে গেছে।
ডিজি বলেন, আমরা এই ভবনটিকে (এনেক্সকো টাওয়ার) ২০১৯ সালে ঝুঁকিপূর্ণ ঘোষণা করেছিলাম। এরপর প্রায় ১০ বার তাদের নোটিশও দিয়েছিলাম, যাতে তারা এখানে ব্যবসা পরিচালনা না করেন। তারপরও ব্যবসায়ীরা তাদের ব্যবসা পরিচালনা করেছেন।
বঙ্গবাজারে আগুন নেভাতে পানির স্বল্পতা পোহাতে হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, আগুন নেভাতে আমাদের পাশের শহীদুল্লাহ হল থেকে পাম্প দিয়ে পানি আনতে হয়েছে। বিমান বাহিনীও হেলিকপ্টারে করে হাতিরঝিল থেকে পানি এনে আগুন নেভাতে সহযোগিতা করেছিল। আমরা বুড়িগঙ্গা থেকেও পানি এনেছিলাম। এই কাজে তিন বাহিনীর পাশাপাশি ওয়াসাও আমাদের সহযোগিতা করেছিল।
এই ঘটনায় ফায়ার সার্ভিসের পক্ষ থেকে ইতোমধ্যে পাঁচ সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, এই তদন্ত কমিটি প্রতিবেদন দিলে গণমাধ্যমকে বিস্তারিত জানাতে পারব। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকেও এটি উচ্চ পর্যায়ের তদন্ত কমিটি হচ্ছে বলে শুনেছি। সেখানেও ফায়ার সার্ভিসের প্রতিনিধি থাকবে।
বঙ্গবাজারে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় দুঃখ প্রকাশ করে তিনি বলেন, অনেক ব্যবসায়ী তাদের সর্বস্ব হারিয়েছেন। আপনারা তাদের আহাজারি দেখেছেন। আমরাও এই ঘটনায় ব্যথিত। আমরা দুর্ঘটনা-দুর্যোগে সবার আগে সবার পাশে থাকি। কোনো দুর্ঘটনা কাম্য নয়।
ফায়ার সার্ভিসের সদরদপ্তরে হামলার দুঃখ প্রকাশ করেন ডিজি মো. মাইন উদ্দিন। তিনি বলেন, আগুন নেভাতে ফায়ার সার্ভিসের সদরদপ্তরের প্রায় সবাই ঘটনাস্থলে ছিলেন। তখন সদরদপ্তর অনেকটাই অরক্ষিত ছিল। শুধু কয়েকজন আরপি সদস্য ছিলেন। আমরা কখনো আক্রান্ত হবো ভাবিনি। কিন্তু আমাদের ওপর হামলা চালানো হয়। আমাদের ১৪টি গাড়ি ভাঙচুর করা হয়। এর মধ্যে একটি গাড়ির দামই প্রায় আট কোটি টাকা।
আগুন ও হামলায় ফায়ার সার্ভিসের ১০ জন সদস্য আহত হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, আহতদের মধ্যে একজন পরিচালকও ছিলেন। এখনো দুইজন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। শুধু ফায়ার সার্ভিস সদরদপ্তরে নয়, পুলিশ হেডকোয়ার্টারের কোণায় আমরা আক্রান্ত হয়েছিলাম। সেখানে আমাদের একজন ডিডি আহত হন। তার হাত ফ্র্যাকচার হয়েছে। এই ঘটনায় আমি খুবই মর্মাহত।
কী কারণে ফায়ার সার্ভিসের উপর এই আক্রমণ চালানো হয়েছে জানতে চেয়ে তিনি বলেন, আমরা জীবন দিয়ে মানুষকে সাহায্য করি। গত এক বছরে ফায়ার সার্ভিসের ১৩ জন দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে মারা গেছেন। আহত হয়েছেন অনেকে। ফায়ার সার্ভিস ছাড়া আর কোনো বাহিনীতে এত আহত-নিহত আছে? তারপরও কেন আমাদের ওপর এই আক্রমণ?
তিনি আরও বলেন, এনেক্সকো টাওয়ার ছাড়াও রাজধানীর অনেকগুলো মার্কেট রয়েছে, যেমন রাজধানী মার্কেট, গাউছিয়া- এগুলো আপাতদৃষ্টিতে দেখে মনে হচ্ছে ঝুঁকিপূর্ণ। আমরা আগামীকাল থেকে গণমাধ্যম নিয়ে এগুলো সার্ভে করব। সার্ভে করে স্পটেই সার্ভে রেজাল্ট গণমাধ্যমকর্মীদের দিয়ে আসা হবে। সাথে মার্কেট কমিটিকেও বিষয়টি জানানো হবে।
ডিজি বলেন, আমরা তো সর্বদা মানুষের পাশেই আছি। সবসময় মানুষকে সহযোগিতা করছি, মহড়া করছি, বিভিন্ন জায়গায় প্রশিক্ষণ দিচ্ছি। এবার আপনারা (জনগণ) একটু আমাদের সহযোগিতা করুন, যেন আমরা একটি নিরাপদ দেশ গড়তে পারি।
সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমাদের জন্য প্রতিটি স্থাপনা, প্রত্যেক ব্যক্তি গুরুত্বপূর্ণ। আমরা গ্রুপে গ্রুপে ভাগ হয়ে আগুন নেভানোর কাজ করেছি। পুলিশ হেডকোয়ার্টারের একটি ভবনের অনেকটুকু ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। অথচ এনেক্সকো টাওয়ারের যে বর্ধিত অংশ সেটি আমরা রক্ষা করেছি। আমাদের কাছে প্রতিটি জীবন গুরুত্বপূর্ণ।
তিনি আরও বলেন, যেখানে স্থাপনা নির্মাণ করা হয়, সেখানে জলাধার রাখার নিয়ম আছে। কিন্তু ঢাকা শহরে সেটি নেই। আমরা আগামী সপ্তাহে রাজউজ ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে বৈঠক করব জলাধার ও ভবন নির্মাণের সময় বিএমডিসি কোড মানার বিষয় নিয়ে। একটি পরিকল্পিত নগরে অগ্নি নির্বাপণের জন্য ওয়াটার হাইড্রেন্ট থাকা জরুরি। কিন্তু ঢাকা শহরে এটি একেবারেই নেই। আমরা মন্ত্রণালয়, সিটি করপোরেশন ও রাজউকের সঙ্গে প্রতিনিয়ত কথা বলে যাচ্ছি।
বাংলাদেশ সময়: ১৫১২ ঘণ্টা, এপ্রিল ৫, ২০২৩
এসসি/আরএইচ