ঢাকা: সাতক্ষীরায় যৌতুকের দাবিতে স্ত্রীকে নৃশংসভাবে পিটিয়ে হত্যার ঘটনায় মামলার মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামি মো. আব্দুল আজিজ সরদারকে (৪৯) গ্রেফতার করেছে র্যাব-৩।
বুধবার (৫ এপ্রিল) ভোর ৫টা ৪৫ মিনিটে ঢাকার সাভার থানাধীন হাদাইল উত্তরপাড়া এলাকায় অভিযান চালিয়ে তাকে গ্রেফতার করা হয়।
র্যাব-৩ এর অধিনায়ক (সিও) লেফটেন্যান্ট কর্নেল আরিফ মহিউদ্দিন আহমেদ বাংলানিউজকে বিষয়টি নিশ্চিত করেন।
র্যাব-৩ এর অধিনায়ক জানান, গ্রেফতার আসামির সঙ্গে ১৯৯৪ সালে সাতক্ষীরা জেলার সদর থানার গোবরদাড়ি গ্রামের আব্দুল মান্নানের মেয়ে রেহেনা পারভিনের সঙ্গে পারিবারিকভাবে বিয়ে হয়। বিয়ের কিছুদিন যেতেই গ্রেফতার আসামি যৌতুক হিসেবে শশুরবাড়ি থেকে মোটরসাইকেল এবং বিভিন্ন জিনিসপত্রের দাবি করত।
ভুক্তভোগীর পরিবার হতদরিদ্র হওয়ায় যৌতুক হিসেবে মোটরসাইকেল দেওয়ার জন্য আজিজের কাছ থেকে কিছুদিন সময় নেয়। কিন্তু আজিজ সে সময় না দিয়ে তার স্ত্রী রেহেনা পারভিনকে প্রতিনিয়ত শারীরিক নির্যাতন করতে শুরু করে।
১৯৯৭ সালের ১৯ এপ্রিল যৌতুক হিসেবে মোটরসাইকেল কেনার জন্য ৮০ হাজার টাকা নিয়ে আসতে ভুক্তভোগী রেহেনাকে তার বাবার বাড়িতে পাঠিয়ে দেয়। সেখানে ভুক্তভোগীর বাবা যৌতুকের দাবি পুরণ করতে অপারগতা প্রকাশ করেন।
পরে ১৯৯৭ সেলে ২০ এপ্রিল ভুক্তভোগী তার স্বামীর বাড়িতে এসে তার বাবার পক্ষে যৌতুকের টাকা দেওয়া অপারগতা প্রকাশের বিষয়টি আজিজকে জানায়। এতে আজিজ ক্ষিপ্ত হয়ে বাড়িতে থাকা কাঁচাবেল দিয়ে স্ত্রী রেহেনার মাথায় সজোরে আঘাত করে এবং লাঠি দিয়ে এলোপাতাড়ি পিটাতে থাকে। পেটানোর একপর্যায়ে ভুক্তভোগী রেহেনা মৃত্যুবরণ করেন। ভুক্তভোগী রেহেনার মৃত্যুকে আত্মহত্যা হিসেবে চালিয়ে দেওয়ার জন্য আজিজ তার মায়ের ঘর থেকে কিটনাশক নিয়ে এসে ভিকটিম রেহেনার মুখের মধ্যে ঢেলে দেয়।
র্যাব-৩ এর অধিনায়ক আরও জানান, ভুক্তভোগী রেহেনার মৃত্যুর ঘটনায় তার চাচা শওকত আলী সরদার বাদী হয়ে সাতক্ষীরা কোর্টে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে আজিজসহ ৫ জনকে আসামি করে একটি মামলা দায়ের করেন। মামলার তদন্ত চলাকালীন অপর আসামি রুহুল কুদ্দুস মৃত্যুবরণ করে এবং মামলার তদন্ত ও স্থানীয় স্বাক্ষীদের জবানবন্দীতে অপর আসামি ফাতেমা বেগম, রবিউল এবং আব্দুর রহিম মুক্তি পায়। এই মামলার প্রধান আসামি আব্দুল আজিজের সম্পৃক্ততার বিষয়টি সন্দেহাতীতভাবে আদালতে প্রমাণিত হওয়ায় আদালত তাকে মৃত্যুদণ্ডের রায় ঘোষণা করেন।
গ্রেফতার আসামি আব্দুল আজিজ মামলার পর আইন শৃঙ্খলা বাহিনী কর্তৃক গ্রেফতার হয়ে ৬ মাস জেল খেটে জামিনে মুক্তি পায়। মুক্তির পর তিনি নিয়মিত আদালতে হাজিরা দিতে থাকেন। একপর্যায়ে দীর্ঘ বিচারিক প্রক্রিয়া শেষে আদালত ২০২২ সালে তাকে মৃত্যুদণ্ডের আদেশ দেন। রায় ঘোষণার পর থেকে আজিজ এলাকা ছেড়ে আশেপাশের এলাকার মসজিদ এবং বিভিন্ন মানুষের বাড়িতে আত্মগোপনে থাকতে শুরু করে। এক পর্যায়ে র্যাবের জালে আটক হয়।
গ্রেফতার আসামির বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে বলেও জানান তিনি।
বাংলাদেশ সময়: ১৭০৩ ঘণ্টা, এপ্রিল ৫, ২০২৩
এসজেএ/এসএ