জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়, (জাবি): দর্শন বিভাগের অধ্যাপক ড. মোস্তফা নাজমুল মানছুর তমালের বিরুদ্ধে পরকীয়ার অভিযোগ এনেছেন একই বিভাগের ৩৯ ব্যাচের এক সাবেক ছাত্র। অভিযোগকারীর দাবি, তার স্ত্রীর সঙ্গে অধ্যাপক তমাল পরকীয়া করেছেন।
গতকাল রোববার (৯ এপ্রিল) চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত-৪ এ অভিযোগটি দায়ের করেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ওই ছাত্র। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন তার আইনজীবী অ্যাডভোকেট ওসমান গনি।
বাদি তার অভিযোগে উল্লেখ করেছেন, ২০১৮ সালে তিনি তার বিভাগের অপর এক ছাত্রীকে বিয়ে করেন। তারও আগে জাবি অধ্যাপক তমালের সঙ্গে তার স্ত্রীর পরিচয় ছিল। অধ্যাপক তমাল বিভিন্ন প্রোজেক্টে তার স্ত্রীকে ভলান্টিয়ার হিসেবে নিয়োগ দিতেন। এ সুযোগে তার কাছাকাছি হওয়ার চেষ্টা করতেন। পরবর্তীতে বিদেশে উচ্চশিক্ষার বিষয়ে তাদের দুজনের যোগাযোগ আরও বাড়ে।
২০১৯ সালে দর্শন বিভাগের সভাপতি থাকা অবস্থায় অধ্যাপক তমালের সঙ্গে তার স্ত্রীকে দেখা যায়। সে সময় তারা শারীরিক সম্পর্কে লিপ্ত হন। বিষয়টি নিয়ে বাদি তার স্ত্রীকে জিজ্ঞাসাবাদ করেন। পরবর্তীতে অধ্যাপক তমালকে এ বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হলে তিনি বাদীকে প্রাণনাশের হুমকি দেন। এরমধ্যেই বিদেশে উচ্চশিক্ষার প্রলোভন দেখিয়ে তার স্ত্রীতে তমাল তালাকের পরামর্শ দেন। ক্যাম্পাসে বিভিন্ন উৎসবে তাদের একসঙ্গেও দেখা যায়। অধ্যাপক তমাল বিভিন্ন সময়ে বাসায় ডেকে নিয়ে প্রলোভনের মাধ্যমে তার স্ত্রীর সঙ্গে শারীরিক সম্পর্কে জড়িয়েছেন বলে অভিযোগে উল্লেখ করেছেন বাদী।
অভিযোগের ব্যাপারে কথা হলে জাবির ওই সাবেক ছাত্র বলেন, ২০১৯ থেকেই অধ্যাপক তমাল আমার স্ত্রীর সাথে বিবাহবহির্ভূত সম্পর্কে লিপ্ত ছিলেন। আমি একাধিকবার তাকে সতর্ক করেছি; পারিবারিকভাবে বিষয়টি মীমাংসার চেষ্টা করেছি। কিন্তু কোনো লাভ হয়নি। তাই আমি লিগ্যাল স্টেপ নিতে বাধ্য হয়েছি। তমাল আমার স্ত্রীর সাথে বৈবাহিক সম্পর্ক এখনও ছিন্ন করেননি। তাই আমরা একসাথে বসবাস করছি না। আমাদের পরিবারে কোনো সন্তানও নেই।
বাদির স্ত্রীর দাবি, অধ্যাপক তমালের সঙ্গে তার কোনো অবৈধ সম্পর্ক নেই। তিনি বলেন, স্যারের সাথে আমার সম্পর্ক একজন শিক্ষক-ছাত্রীর সম্পর্কের বাইরে কিছু ছিল না। স্যারের একটি মাত্র ছেলে; সেও মানসিকভাবে অসুস্থ। স্যারের বাসায়ও সবার সাথে আমার ভালো সম্পর্ক ছিল। আমি স্যারের দ্বিতীয় সন্তানের মতোই পরিবারের একজন ছিলাম। আমার স্বামীর সাথে বর্তমানে আমার কোনো প্রকার সম্পর্ক নেই। তবুও সে আমার সাথে যাকেই দেখে তার বিরুদ্ধেই নালিশ জানায়। আমার বর্তমান কর্মস্থলের কলিগের বিরুদ্ধেও সে একই নালিশ জানিয়েছে। তার সাথে আমার বিচ্ছেদের মামলাটি আদালতে প্রক্রিয়াধীন।
নিজের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ নাকচ করে দিয়ে অধ্যাপক ড. মোস্তফা নাজমুল মানছুর তমাল বলেন, ২০১৯ সালের ঘটনা এখন নতুন করে তুলে আনার একটা মাত্র উদ্দেশ্য হলো আমাকে হেয়-প্রতিপন্ন করা। আমার ছাত্রীর সাথে আমার ভিন্ন কোনো সম্পর্ক ছিল না। অভিযোগের ব্যাপারে আমি এখনও জানি না। এ ব্যাপারে আমার কাছে এখনো কোনো নোটিশ বা কিছু আসেনি।
বাদীপক্ষের আইনজীবী অ্যাডভোকেট ওসমান গনি বলেন, চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত-৪ এ অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে। বিজ্ঞ আদালত অভিযোগটি আমলে নিয়েছেন। আসামি পেনাল কোডের ৪৯৭ ধারায় অ্যাডাল্টারির অপরাধ করেছেন। অভিযোগটি এখন তদন্তাধীন। আসামির কাছে তদন্তকারী কর্মকর্তা যাবেন। তদন্ত প্রতিবেদন এলে আদালত শুনানির দিন ধার্য করবেন।
বিষয়টি নিয়ে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি দর্শন বিভাগের বর্তমান সভাপতি অধ্যাপক ড. এস এম আনোয়ারুল্লাহ ভূঁইয়া। তিনি বলেন, ব্যাপারটি যখন আদালত পর্যন্ত পৌঁছেছে, আইনি প্রক্রিয়াই সবকিছু নির্ধারণ করবে। এ ব্যাপারে আমি কিছু বলতে চাই না।
বাংলাদেশ সময়: ১৭১০ ঘণ্টা, এপ্রিল ১০, ২০২৩
এমজে