লক্ষ্মীপুর: লক্ষ্মীপুরের কমলনগরে আওয়ামী লীগের দুই গ্রুপের সংঘর্ষে অন্তত ২০ জন আহত হয়েছেন।
মঙ্গলবার (২ মে) দুপুরে উপজেলার তোরাবগঞ্জ উত্তর বাজারে এ ঘটনা ঘটে।
আহতদের উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সসহ বিভিন্ন ক্লিনিকে প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে।
আহতদের মধ্যে ছাত্রলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ, কৃষকলীগের নেতাকর্মীরা রয়েছেন। ঘটনার পর তোরাবগঞ্জ বাজারে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।
উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের জরুরী বিভাগের চিকিৎসক জন্টু দাশ জানিয়েছেন, ঘটনার পরে আহত ৪ জনকে ভর্তি করা হয়েছে। তারা হলেন- কমলনগর উপজেলা কৃষক লীগের যুগ্ম আহ্বায়ক জাহাঙ্গীর আলম, ছাত্রলীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক শেখ রাজু, সাহেবেরহাট ইউনিয়ন ছাত্রলীগ নেতা মো. শরীফ, ছাত্রলীগ কর্মী মো. ইমন।
এছাড়া আরও ৬ জনকে প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে বলেও জানান তিনি।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক উপ-কমিটির সদস্য নোয়াখালীর কোম্পানিগঞ্জের বাসিন্দা ইস্কান্দার মির্জা শামীম কমলনগর এবং রামগতি উপজেলার ৫৩টি স্পটে কৃষকদের ক্ষেতের ধান কেটে দেওয়ার কর্মসূচি নির্ধারণ করেন।
এরই ধারাবাহিকতায় মঙ্গলবার (২ মে) উপজেলার চরকাদিরা ইউনিয়নে এক কৃষকের ধান কেটে দেওয়ার কর্মসূচি ছিল তার। নির্বাচনকেন্দ্রীক গত কয়েক মাস ধরে তিনি লক্ষ্মীপুর-৪ আসনের বিভিন্ন এলাকায় সামাজিক কার্যক্রম শুরু করেন। দলীয় নেতাকর্মীদের একাংশ তার এই কার্যক্রমে যোগ দেন।
অন্যদিকে উপজেলা আওয়ামী লীগের ব্যানারে জেলা যুবলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক আবদুল্লাহ আল নোমান এবং জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক রাকিব ইমাম হত্যার প্রতিবাদে তোরাবগঞ্জ বাজারে বিক্ষোভ মিছিল ও মানববন্ধনের আয়োজন করা হয়।
মঙ্গলবার (২ মে) দুপুর ১২টার দিকে উপজেলা ছাত্রলীগের নেতৃত্বে ছাত্রলীগ, কৃষকলীগ এবং স্বেচ্ছাসেবক লীগের নেতাকর্মীরা মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করে। এ সময় তোরাবগঞ্জ বাজার হয়ে চরকাদিরা ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান ও সাবেক আওয়ামী লীগ নেতা আশরাফ উদ্দিন রাজন রাজুর নেতৃত্বে ইস্কান্দার মির্জার অনুসারীরা শতাধিক মোটরসাইকেল নিয়ে জেলা শহরের দিকে তাকে আনার উদ্দেশে যাচ্ছিলেন। তাদের বহরটি তোরাবগঞ্জ বাজারে পৌঁছালে আগ থেকে সেখানে অবস্থান নেওয়া ছাত্রলীগ এবং অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীদের সঙ্গে তাদের কথা কাটাকাটি হয়। এসময় তারা সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে। এতে উভয় পক্ষের অন্তত ২০ জন আহত হন। সেখানে ইস্কান্দার মির্জার সমর্থকদের বেশ কিছু মোটরসাইকেল ভাঙচুর করা হয়।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে উপজেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক হারুনুর রশিদ চৌধুরী জানান, জেলা যুবলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক আবদুল্লাহ আল নোমান ও জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক রাকিব হোসেন ইমামকে গুলি করে হত্যার ঘটনায় মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সমাবেশ আহ্বান করে কমলনগর উপজেলা ছাত্রলীগ। এদিন (২ মে) দুপুর ১২টার দিকে তোরাবগঞ্জ উত্তর বাজার এলাকায় তারা মানববন্ধনের প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন। এসময় হঠাৎ করে আশরাফ উদ্দিন রাজন রাজুর নেতৃত্ব মোটরসাইকেলবাহী একদল লোক এসে তাদের রাস্তা ছেড়ে যেতে বলে। এ নিয়ে মোটরসাইকেল আরোহীদের সঙ্গে হট্টগোল শুরু হওয়ার এক ফাঁকে মানববন্ধনকারীদের ওপর তারা হামলা চালায়। এতে ছাত্রলীগ, কৃষক লীগ ও শ্রমিক লীগের ১০-১২ জন আহত হয়।
তাদের পক্ষের আহতরা হলেন- ছাত্রলীগ নেতা শুভ, রাজু, সাহেদ, রনি, নাজিম উদ্দিন ও কৃষকলীগ নেতা জাহাঙ্গীরসহ ১০-১২ জন।
এদিকে এ বিষয়ে জানতে আশরাফ উদ্দিন রাজন রাজুর মোবাইলে একাধিকবার কল দিয়েও তার বক্তব্য পাওয়া সম্ভব হয়নি।
অন্যদিকে শামীম ইস্কান্দার মির্জা বলেন, জনগণের সেবা করার উদ্দেশে আমি মাঠে নেমেছি। কিন্তু একটি পক্ষ আমার সেবামূলক কার্যক্রম ব্যাহত করতে চাচ্ছে। আজ (২ মে) কৃষকের ধান কাটার প্রোগ্রাম ছিল। কলমনগর থেকে দলীয় লোকজন এসে আমাকে জেলা শহর থেকে ওইস্থানে নিয়ে যাবে। তারা আসার সময় কিছু দুষ্কৃতিকারী আমার লোকজনের ওপর হামলা চালিয়েছে। তারা মানববন্ধনের নামে লাইলী আপার (কেন্দ্রীয় আ.লীগের কৃষি বিষয়ক সম্পাদক ফরিদুন্নাহার লাইলী) নামে স্লোগান দিয়েছে। তারা আমার সেবামূলক কার্যক্রম বানচাল করার উদ্দেশে এ হামলা চালায়। এতে আমার ১০ জনের বেশি লোক আহত হয়েছে এবং তাদের অনেকগুলো মোটরসাইকেল ভাঙচুর করেছে। এটি ন্যাক্কারজনক ঘটনা।
কমলনগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. সোলাইমান বাংলানিউজকে বলেন, সাবেক চেয়ারম্যান রাজুর নেতৃত্বে ছাত্রলীগের মানববন্ধনে হামলা চালানো হয়েছে বলে শুনেছি। ঘটনাস্থলে পুলিশ পাঠানো হয়েছে। সেখান থেকে দুটি মোটরসাইকেল উদ্ধার করে থানায় নিয়ে আসা হয়েছে। পরিস্থিতি এখন শান্ত রয়েছে।
উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও হাজিরহাট ইউনিয়নের চেয়ারম্যান নিজাম উদ্দিন জানায়, তোরাবগঞ্জ বাজারে সংঘর্ষের খবর পেয়েছি। এ বিষয়ে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেব।
বাংলাদেশ সময়: ১৭২০ ঘণ্টা, মে ২, ২০২৩
এনএস