ঢাকা, শুক্রবার, ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২২ নভেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

দেশে মৃত্যু-পঙ্গুত্বের প্রধান ৩ কারণের একটি উচ্চ রক্তচাপ

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট  | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৭৩৯ ঘণ্টা, মে ১৭, ২০২৩
দেশে মৃত্যু-পঙ্গুত্বের প্রধান ৩ কারণের একটি উচ্চ রক্তচাপ

ঢাকা: বাংলাদেশে মৃত্যু এবং পঙ্গুত্বের প্রধান তিনটি কারণের একটি উচ্চ রক্তচাপ বা হাইপারটেনশন। উচ্চ রক্তচাপ একটি দীর্ঘস্থায়ী স্বাস্থ্যগত সমস্যা যা অকালমৃত্যুর জন্য দায়ী।

বুধবার (১৭ মে) বিশ্ব উচ্চ রক্তচাপ দিবস। এ বছর বিশ্ব উচ্চ রক্তচাপ দিবসের প্রতিপাদ্য ‘সঠিকভাবে রক্তচাপ মাপুন, নিয়ন্ত্রণে রাখুন এবং দীর্ঘজীবী হোন। ’

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার হিসেব অনুযায়ী, বিশ্বে ১২৮ কোটি মানুষ (৩০-৭৯ বছর) উচ্চ রক্তচাপে ভুগছে, যার দুই-তৃতীয়াংশ বাস করে নিম্ন এবং মধ্যম আয়ের দেশে।

উচ্চ রক্তচাপের কারণে হৃদরোগ, স্ট্রোক এবং কিডনি রোগে আক্রান্ত হওয়া এবং মৃত্যুঝুঁকি বহুগুণ বেড়ে যায়। বিশ্বে প্রতিবছর ১ কোটিরও বেশি মানুষ উচ্চ রক্তচাপের কারণে মারা যায়, যা সকল সংক্রামক রোগে মোট মৃত্যুর চেয়েও বেশি।

বাংলাদেশও উচ্চ রক্তচাপের নীরব মহামারির মধ্যে রয়েছে। সর্বশেষ বাংলাদেশ এনসিডি স্টেপস সার্ভে, ২০১৮' এর তথ্য অনুযায়ী প্রতি ৫ জনে ১ জন প্রাপ্ত বয়স্ক মানুষ (২১%) উচ্চ রক্তচাপে আক্রান্ত।

রক্ত চলাচলের সময় ধমনীর ভেতরের গায়ে যে পার্শ্বচাপ তৈরি হয় তাকে রক্তচাপ বলে। রক্তচাপ যদি স্বাভাবিক মাত্রার চেয়ে অনেক বেড়ে যায় তাহলে তাকে উচ্চ রক্তচাপ বলে।

উচ্চ রক্তচাপের সঠিক চিকিৎসা করা না হলে, বুকে ব্যথা, হার্ট অ্যাটাক, হার্ট ফেইলর এবং হার্ট বিট অনিয়মিত হতে পারে। উচ্চ রক্তচাপের কারণে স্ট্রোক হতে পারে। এছাড়াও, উচ্চ রক্তচাপের কারণে কিডনি ক্ষতিগ্রস্ত হয়, এমনকি বিকলও হয়ে যেতে পারে।

ডব্লিউএইচও এবং ইমপেরিয়াল কলেজ লন্ডন এর যৌথ গবেষণার ফলাফল বলছে, বিগত ৩০ বছরে (১৯৯০-২০১৯) বিশ্বে ৩০-৭৯ বছর বয়সি জনগোষ্ঠীর মধ্যে উচ্চ রক্তচাপে আক্রান্ত হওয়ার সংখ্যা ৬৫ কোটি থেকে বৃদ্ধি পেয়ে ১২৮ কোটিতে দাঁড়িয়েছে। উচ্চ রক্তচাপের প্রকোপ ধনী দেশগুলি থেকে কমে নিম্ন এবং মধ্যম আয়ের দেশগুলিতে বৃদ্ধি পেয়েছে।

গবেষণার তথ্যমতে, উচ্চ রক্তচাপে আক্রান্ত একশত কোটিরও বেশি মানুষের (৮২%) বসবাস নিম্ন এবং মধ্যম আয়ের দেশগুলোতে, যা অত্যন্ত উদ্বেগজনক। উচ্চ রক্তচাপে আক্রান্ত ৪৬ শতাংশ রোগী জানে না যে তার উচ্চ রক্তচাপ রয়েছে। উচ্চ রক্তচাপে আক্রান্ত ৭২ কোটি অর্থাৎ অর্ধেকেরও বেশি রোগী (৫৩% নারী এবং ৬২% পুরুষ) প্রয়োজনীয় চিকিৎসা পায় না। ডব্লিউএইচও'র ২০১৫ সালের তথ্য অনুযায়ী বিশ্বে প্রতি ৪ জন পুরুষের মধ্যে ১ জন এবং প্রতি ৫ জন নারীর মধ্যে ১ জন উচ্চ রক্তচাপে আক্রান্ত।

‘বাংলাদেশ এনসিডি স্টেপস সার্ভে, ২০১৮’ অনুযায়ী ১৮ বছরের উচ্চ জনগোষ্ঠীর মধ্যে ২১ শতাংশ (নারী ২৪.১%, পুরুষ ১৭.৯%) উচ্চ রক্তচাপে আক্রান্ত এবং এদের মধ্যে ওষুধ গ্রহণের মাধ্যমে রোগটি নিয়ন্ত্রণে রেখেছে মাত্র ১৪ শতাংশ অর্থাৎ প্রতি ৭ জনে একজনেরও কম।

অন্যদিকে বাংলাদেশ ডেমোগ্রাফিক অ্যান্ড হেলথ সার্ভে ২০১৭-১৮ অনুযায়ী, ২০১১ থেকে ২০১৭-১৮ সাল সময়ের মধ্যে ৩৫ বছর ও তদূর্ধ্ব জনগোষ্ঠীর মধ্যে উচ্চ রক্তচাপের প্রকোপ উল্লেখযোগ্য হারে বেড়েছে, পুরুষের মধ্যে ২০ শতাংশ থেকে বেড়ে ৩৪ শতাংশে এবং নারীর ক্ষেত্রে এই হার ৩২ শতাংশ থেকে ৪৫ শতাংশে দাঁড়িয়েছে।

অতিরিক্ত ওজন রয়েছে এমন নারী এবং পুরুষের মধ্যে উচ্চ রক্তচাপে আক্রান্ত হওয়ার হার যথাক্রমে ৪৯% এবং ৪২%, যেখানে স্বাভাবিক ওজনের নারী এবং পুরুষের মধ্যে এই হার যথাক্রমে ২৫% এবং ২৪%। উচ্চ রক্তচাপে আক্রান্ত অর্ধেক নারী (৫১%) এবং দুই-তৃতীয়াংশ পুরুষই (৬৭%) জানে না যে তাদের উচ্চ রক্তচাপ রয়েছে। উচ্চ রক্তচাপে আক্রান্ত অধিকাংশ রোগীই (৬৪%) কোনোও ওষুধ সেবন করে না।

২০২০ সালে বাংলাদেশে উচ্চ রক্তচাপে আক্রান্ত মানুষের সংখ্যা ছিল ৩ কোটি, যা ২০৩০ সাল নাগাদ গিয়ে দাঁড়াবে ৩ কোটি ৮০ লাখ। গ্লোবাল বারডেন অব ডিজিজ স্টাডি (জিবিডি), ২০১৯ এর তথ্য অনুযায়ী বাংলাদেশে মৃত্যু এবং পঙ্গুত্বের প্রধান তিনটি কারণের একটি উচ্চ রক্তচাপ। বাংলাদেশে বছরে ২ লাখ ৭৭ হাজার মানুষ হৃদরোগজনিত অসুস্থতায় মারা যায়। যার অন্যতম প্রধান কারণ উচ্চ রক্তচাপ।

বিশেষজ্ঞদের মতে উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণের পদক্ষেপসমূহ:

উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে উচ্চ রক্তচাপের ওষুধ সরবরাহ নিরবচ্ছিন্ন রাখতে বাজেট বরাদ্দ বৃদ্ধি, কমিউনিটি ক্লিনিকে উচ্চ রক্তচাপের ওষুধের প্রাপ্যতা নিশ্চিত করতে কমিউনিটি ক্লিনিকের ওষুধ তালিকায় উচ্চ রক্তচাপের ওষুধ অন্তর্ভুক্ত, উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স এবং কমিউনিটি ক্লিনিকে উচ্চ রক্তচাপের রোগীদের জন্য ২ থেকে ৩ মাসের ওষুধ একসঙ্গে দেওয়ার ব্যবস্থা, উচ্চ রক্তচাপ সঠিক নিয়মে পরীক্ষা, চিকিৎসা সেবা গ্রহণ এবং উচ্চ রক্তচাপজনিত স্বাস্থ্য ঝুঁকির বিষয়ে ব্যাপক জনসচেতনতা তৈরি, উচ্চ রক্তচাপ বিষয়ে স্বাস্থ্য কর্মীদের প্রশিক্ষণ প্রদান, সকল স্বাস্থ্য সেবা কেন্দ্রে উচ্চ রক্তচাপ চিকিৎসা এবং ব্যবস্থাপনা গাইডলাইন বাস্তবায়ন, উচ্চ রক্তচাপের ঝুঁকি এড়াতে স্বাস্থ্যসম্মত জীবন-যাপন বিষয়ে জনসচেতনতামূলক কার্যক্রম গ্রহণ।

বাংলাদেশ সময়:০৭৩৮ ঘণ্টা, মে ১৭, ২০২৩
আরকেআর/ এসএম

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।