ঢাকা, রবিবার, ৭ পৌষ ১৪৩১, ২২ ডিসেম্বর ২০২৪, ১৯ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

জাতীয়

কুষ্টিয়ায় রেকর্ড পরিমাণ ভুট্টার আবাদ-ফলন, দামেও খুশি চাষিরা

মো. জাহিদ হাসান জিহাদ, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫৪৮ ঘণ্টা, মে ১৯, ২০২৩
কুষ্টিয়ায় রেকর্ড পরিমাণ ভুট্টার আবাদ-ফলন, দামেও খুশি চাষিরা

কুষ্টিয়া: বিগত কয়েক বছরের তুলনায় এ বছর কুষ্টিয়া জেলাজুড়েই রেকর্ড পরিমাণ ভুট্টার আবাদ হয়েছে। গত বছর অর্থকারী এ ফসলের দাম বেশ ভালো পাওয়ায় এবং কৃষি সম্প্রসারণের নানা উদ্যোগে এবারে ভুট্টার আবাদ আরও বেড়েছে।

সেই সঙ্গে আধুনিক জাত ও আবহাওয়া অনুকুলে থাকায় হেক্টর প্রতি ফলনও বেড়েছে। এ বছর কুষ্টিয়া জেলায় লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে প্রায় ২০ হাজার হেক্টর জমিতে বেশি ভুট্টা চাষ হয়েছে।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের দেওয়া তথ্য মতে, ২০২২-২৩ অর্থ বছরের রবি মৌসুমে কুষ্টিয়া জেলার ছয়টি উপজেলায় ভুট্টা চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিল ৯ হাজার ৯১৬ হেক্টর জমিতে। উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিল ১ লাখ ৬ হাজার ৫৯৭ টন। আর হেক্টর প্রতি ফলন ছিল গড়ে ১০ দশমিক ৭৫ টন।

এর পরিপ্রেক্ষিতে এ বছর জেলায় আবাদ হয়েছে প্রায় ১১ হাজার ৯৫০ হেক্টর জমিতে যা লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে প্রায় ২০ হাজার ৩৪ হেক্টর বেশি। উৎপাদন হয়েছে প্রায় ১ লাখ ৩৭ হাজার ৪২৫ টন যেটি লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ৩০ হাজার ৮২৮ টন বেশি। এছাড়া আবহাওয়া অনুকুলে থাকায় হেক্টর প্রতি ফলন হয়েছে গড়ে ১১ দশমিক ৫০ টন যা লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে শুন্য দশমিক ৭৫ টন বেশি।

উপজেলা কৃষি অফিসের তথ্য মতে, কুষ্টিয়ার সদরে ২ হাজার ৯০৫ হেক্টর জমিতে, খোকসায় ৬১ হেক্টর, কুমারখালীতে ১ হাজার ২৬৫ হেক্টর, মিরপুরে ২ হাজার ১৫ হেক্টর, ভেড়ামারায় ৪১৫ হেক্টর এবং দৌলতপুর উপজেলায় ৫ হাজার ২৮৯ হেক্টর জমিতে ভুট্টার আবাদ হয়েছে।

উৎপাদনের ক্ষেত্রে কুষ্টিয়ার সদরে ৩২ হাজার ৬৮১ টন, খোকসায় ৭০২, কুমারখালীতে ১৩ হাজার ৯১৫, মিরপুরে ২৩ হাজার ১৭৩, ভেড়ামারায় ৪ হাজার ৮৯৭ এবং দৌলতপুর উপজেলায় ৬২ হাজার ৫৭ টন ভুট্টা উৎপাদন হয়েছে।

চাষের ক্ষেত্রে জেলা জুড়ে বেশ আলোড়ন ফেলেছে পাউনিয়ার-৩৩৯৬ জাতের ভুট্টা। যার হেক্টর প্রতি ফলন হয়েছে প্রায় ১১ দশমিক ৯৫ টন। জেলায় প্রায় ১ হাজার ৮৩৫ হেক্টর জমিতে এ জাতের ভুট্টা করা চাষ হয়েছিল। এতে শুধু এ জাতের প্রায় ২১ হাজার ৫৪১ টন ভুট্টা উৎপাদন হয়েছে। এছাড়াও সুপার সাইন-২৭৬০ ও কাবেরী-৫৪ জাতের ভুট্টার বেশি আবাদ হয়েছে।

গত বছর এই রবি মৌসুমে ভুট্টা চাষ হয়েছিল ৯ হাজার ৮১৬ হেক্টর জমিতে। এ বছর ভুট্টার দাম ভালো পাওয়ায় আগামী মৌসুমে ভুট্টার উৎপাদন আরও বৃদ্ধি পবে বলে জানিয়েছেন কৃষক ও কৃষি বিভাগ।

কুষ্টিয়ার দৌলতপুর উপজেলার লক্ষিপুর এলাকার কৃষক জালাল উদ্দিন বলেন, এ বছর আমি তিন বিঘা জমিতে ভুট্টা চাষ করেছি। গতবার ২ বিঘা জমিতে চাষ করেছিলাম। দাম ভালো ছিল বলে এবার এক বিঘা বেশি চাষ করেছি। বিঘা প্রতি আমার ১৪-১৫ হাজার টাকার মতো খরচ হয়েছে। ফলন হয়েছে প্রতি বিঘাতে প্রায় ৪৪-৪৫ (কাঁচা) মণ করে। কাঁচা ভুট্টা জমি থেকে সংগ্রহ করেই ৮৩০ টাকা মণ হিসাবে বিক্রি করেছি। এবারে প্রায় ১ লাখ টাকার উপরে ভুট্টা বিক্রি করেছি। আর এর জন্য খরচ হয়েছিল ৪০-৪২ হাজার টাকার মতো। অন্য ফসলের তুলনায় ভুট্টায় দ্বিগুন লাভ হয়। ভুট্টায় খরচ করলে কোনো লস নাই এখন।

একই এলাকার কৃষক স্বপন আলী বলেন, এ বছর ভুট্টার যে দাম তাতে তামাকের তুলনায় বেশি লাভ হবে। ২ বিঘা জমিতে ভুট্টার চাষ করে ৬০ হাজার টাকার মতো বিক্রি করেছি। খরচ হয়েছিল সব মিলিয়ে প্রায় ২৮-২৯ হাজার টাকা।

মিরপুর উপজেলার কৃষক মারুফ বলেন, এবার ভুট্টার ফলনও বেশ ভালো হয়েছে। সারের দাম বেশি হওয়ায় প্রতি বিঘা জমিতে ভুট্টা চাষে খরচ হয়েছে ১৫ থেকে ২০ হাজার টাকা। আর ফলন হয়েছে প্রতি বিঘা জমিতে ৪৫ থেকে ৫০ মণ পর্যন্ত। কোনো ক্ষেত্রে আরও বেশিও হয়েছে।

দৌলতপুর উপজেলার মৌসুমী ভুট্টার ব্যবসায়ী বিমান সরদার জানান, গত বছর থেকে বাইরের জেলার পাইকারী ভুট্টা ক্রেতারা আসছেন বলে দাম ভালো পাওয়া যাচ্ছে। এ বছর কাঁচা ভুট্টা আমরা কৃষকের কাছ থেকে ৮২০ থেকে শুরু করে ৮৫০ টাকা দরে মণ হিসাবে এবং ১০০০ থেকে ১০৫০ টাকা মণ হিসাবে শুকনা ভুট্টা কিনছি। মণ প্রতি ১০/২০ টাকা লাভে বিক্রি করে দিচ্ছি।

তিনি আরও জানান, কাঁচা ভুট্টা কিনে শুকালে জাত ভেদে ৫-৭ মণ কমে যায়। ভুট্টার এমণ দাম থাকলে কৃষকরা আরও বেশি ভুট্টা চাষ করবেন। আবার ব্যবসায়ীরা কৃষকের কাছ থেকে ভুট্টা কিনে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে সরবরাহ করে তারাও লাভবান হবেন।

দৌলতপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. নুরুল ইসলাম জানান, ভুট্টা চাষের খরচ তুলনামুলক কম এবং লাভ বেশি হওয়ায় এ অঞ্চলে ভুট্টার আবাদ দিনদিন বেড়েই চলেছে। আমরা কৃষকদের ভুট্টা চাষে প্রশিক্ষণ এবং সরকারি প্রণোদনা দিয়েছি। সেই সঙ্গে দাম বাড়ার কারণে বেশি আগ্রহী হয়েছেন কৃষকরা।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক কৃষিবিদ ড. হায়াত মাহমুদ বাংলানিউজকে জানান, চলতি বছরে কুষ্টিয়া জেলা জুড়েই ভুট্টার বাম্পার ফলন হয়েছে। বিগত বছরের তুলনায় এবার আবাদও বেশি। সরকারি প্রণোদনায় আমরা কৃষকদের সার ও বীজ দিয়েছি। জেলায় ভুট্টা চাষের যে লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিল, তার থেকে প্রায় ২০ হাজার হেক্টর বেশি জমিতে আবাদ হয়েছে। দামও বেশ ভালো পেয়েছেন কৃষকরা। আগামীতে আরও বেশি ভুট্টার চাষ হবে বলে আশা করেন তিনি।

তিনি আরও বলেন, কৃষি প্রণোদনা, ভুট্টা চাষে প্রশিক্ষণ, আধুনিক জাতের সম্প্রসারণের পাশাপাশি ভুট্টা চাষ লাভজনক হওয়ায় কৃষকরা এটিতে বেশি আগ্রহী হয়েছেন।

বাংলাদেশ সময়: ১৫৪৮ ঘণ্টা, মে ১৯, ২০২৩
এফআর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।