সিলেট: সিলেটের দক্ষিণ সুরমায় দুই ট্রাকের সংঘর্ষের ঘটনায় বাদশাহ মিয়া (২২) নামে আরও একজনের মৃত্যু হয়েছে।
বৃহস্পতিবার (৮ জুন) ওসমানী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের আইসিইউতে চিকিৎসাধীন তার মৃত্যু হয়।
নিহত বাদশাহ মিয়া সুনামগঞ্জের দিরাই ভাটিপাড়ার মো. মায়েত নুরের ছেলে। এ নিয়ে মৃতের সংখ্যা বেড়ে ১৫ জনে দাঁড়িয়েছে।
বুধবার (৭ জুন) ভোর সাড়ে ৫টার দিকে দক্ষিণ সুরমার নাজিরবাজার এলাকার ঢাকা-সিলেট মহাসড়কে দুই ট্রাকের সংঘর্ষে ঘটনাস্থলে ১১ জন এবং হাসপাতালে নেওয়ার পর নারীসহ আরও ৩ জনের মৃত্যু হয়। সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশের (এসএমপি) অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার মাসুদ রানা বিষয়টি নিশ্চিত করেন।
ওইদিনের নিহতরা হলেন- সুনামগঞ্জ জেলার আলীনগরের শিশু মিয়ার ছেলে হারিছ মিয়া (৫৫), নেত্রকোণা জেলার বারহাট্টা এলাকার মৃত ইসলাম উদ্দিনের ছেলে আওলাদ হোসেন (৪০), সুনামগঞ্জের দিরাই ভাটিপাড়ার সিরাজ মিয়ার ছেলে মো. সৈয়ব মিয়া (২৭), শান্তিগঞ্জ উপজেলার মুরাদপুর গ্রামের মৃত হারুন মিয়ার ছেলে দুলাম মিয়া (২৫), দিরাই মধুপুর গ্রামের সুনাই মিয়ার ছেলে সাধু মিয়া (৪০), দিরাই ভাটিপাড়ার মৃত সজিব আলীর ছেলে রশিদ মিয়া (৫০), সুনামগঞ্জের শান্তিগঞ্জ উপজেলার বাবনগাঁওয়ের মৃত ওয়াহাব আলীর ছেলে শাহীন মিয়া (৪০), একই উপজেলার মুরাদপুরের হারুন মিয়ার ছেলে দুলাল মিয়া (২৬), সুনামগঞ্জ দিরাই ভাটিপাড়ার মফিজ মিয়ার ছেলে সায়েদ নুর (৬০), শান্তিগঞ্জ তলের বনত গ্রামের মৃত আমান উল্লাহ তালুকদারের ছেলে আওলাদ হোসেন তালুকদার (৫০), সুনামগঞ্জের দিরাই পাতাইয়া কাইম গ্রামের জসিম মিয়ার ছেলে একলিম মিয়া (৫০), একই উপজেলার গছিয়া গ্রামের বারিক উল্লাহর ছেলে সিজিল মিয়া (৫৫), সিলেট নগরের ৬নং ওয়ার্ডের বাদামবাগিচা ১নং সড়কের ৫৯নং বাসার আব্দুর রহিমের স্ত্রী আমিনা বেগম (৪৩) ও সুনামগঞ্জের দিরাইয়ের সিরাজ মিয়ার ছেলে সৌরভ আহমদ (২৭)।
নিহতরা সবাই নির্মাণ শ্রমিক হিসেবে কাজ করতেন বলে জানা গেছে।
এদিকে, দুর্ঘটনার পর সিলেট ফায়ার সার্ভিসের উপ-পরিচালক মনিরুজ্জামানের নেতৃত্বে সাতটি টিম ঘটনাস্থলে উদ্ধারকাজ পরিচালনা করে।
সিলেট ফায়ার সার্ভিসের সহকারী পরিচালক সফিকুল ইসলাম ভুঁইয়া বলেন, নির্মাণশ্রমিক বহনকারী ডিআই ট্রাকটি ওসমানীনগরের উদ্দেশ্যে যাচ্ছিল। নাজিরবাজার এলাকায় পৌঁছালে ঢাকা থেকে সিলেটগামী একটি ট্রাকের সঙ্গে সংঘর্ষ হয়। সংঘর্ষের পর শ্রমিক বহনকারী ডিআই ট্রাকটি সড়কে উল্টে পড়ে যায় এবং বড় ট্রাকটি দুমড়ে-মুচড়ে যায়। এতে ঘটনাস্থলে ১১ জন এবং হাসপাতালে নেওয়ার পর আরও ৩ জন প্রাণ হারান। এছাড়া আহতদের উদ্ধার করে ওসমানী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আহত ঠিকাদার শের ইসলাম জানান, তিনি ৩০ জন শ্রমিক নিয়ে ট্রাকে করে কাজে যাচ্ছিলেন। পথে বিপরীত দিক থেকে আসা মালবাহী ট্রাকের সঙ্গে মুখোমুখি সংঘর্ষে এ দুর্ঘটনা ঘটে। দুর্ঘটনায় তার আপন বড় ভাই সাহেদ নুরও মারা গেছেন।
তিনি বলেন, বিপরীত দিক থেকে আসা ট্রাকটি নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ডান দিকে এসে আমাদের ট্রাকে ধাক্কা দিলে এ দুর্ঘটনা ঘটে।
এদিকে, দুর্ঘটনার খবর পেয়ে হাসপাতালে যান সিলেটে অবস্থানরত নৌ পরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী। এসময় তার সঙ্গে ছিলেন ওসমানী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ডা. মাহবুবুর রহমান ভুঁইয়া, সিলেটের জেলা প্রশাসক মো. মজিবর রহমান ও সিলেট সিটি করপোরেশন নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী।
প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী হতাহতদের সরকারি সহায়তার ঘোষণা দেন। পাশাপাশি জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে নিহতদের দাফন-কাফনে ২০ হাজার টাকা করে দেওয়ার ঘোষণা দেওয়া হয়।
এছাড়া নিহতদের দাফন-কাফনে প্রতিটি পরিবারকে প্রধানমন্ত্রীর তহবিল থেকে নগদ ২৫ হাজার টাকা করে ঘোষণা দেন আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী আনোয়ারুজ্জামান। তাৎক্ষণিকভাবে এই টাকা নিহতদের পরিবারের সদস্যদের হাতে তুলে দেওয়া হয়।
বাংলাদেশ সময়: ১৫০৯ ঘণ্টা, জুন ৮, ২০২৩
এনইউ/এনএস