নাটোর: বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কমের জামালপুর ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট গোলাম রাব্বানী নাদিমকে নৃশংস হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িতদের আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে মানববন্ধন করেছেন নাটোর জেলায় কর্মরত সব সাংবাদিকরা।
শুক্রবার (১৬ জুন) সকাল ১১টার দিকে জেলা শহরের পুরাতন বাসস্ট্যান্ড এলাকা এ মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়।
নাটোরের কর্মরত সাংবাদিকদের আয়োজনে মানববন্ধন কর্মসূচিতে নাটোর প্রেসক্লাব, ইউনাইটেড প্রেসক্লাব ও ইউনিক প্রেসক্লাবের সদস্যসহ বিভিন্ন সংগঠনের সাংবাদিকরা অংশ নেন।
এ সময় বক্তব্য দেন- নাটোর প্রেসক্লাবের সভাপতি ফারাজী আহম্মেদ রফিক বাবন, সিনিয়র সাংবাদিক সমকাল ও ইটিভির প্রতিনিধি নবীউর রহমান পিপলু, ভোরের কাগজ ও দেশ টিভির প্রতিনিধি রনেন রায়, সিনিয়র সাংবাদিক এসএম মনজুর উল হাসান, এনটিভির প্রতিনিধি হালিম খান, ইউনিক প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক বুলবুল আহম্মেদ, দৈনিক যুগান্তর প্রতিনিধি শহিদুল হক সরকার, ডিবিসি প্রতিনিধি পরিতোষ অধিকারী, যমুনা টিভির নাজমুল হাসান, বৈশাখী টিভির ইসহাক আলী, বাংলাটিভির মেহেদী হাসান বাবু, নলডাঙ্গা উপজেলা সাংবাদিক ফোরামের সভাপতি মোস্কাফিজুর রহমান মুকুল, বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কমের ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট মামুনুর রশীদ প্রমুখ।
এ সময় উপস্থিত ছিলেন ডেইলি অবজারভার প্রতিনিধি সেদরুল হুদা ডেভিড, এটিএন বাংলার প্রতিনিধি জুলফিকার হায়দার জোসেফ, দৈনিক প্রান্তজন সম্পাদক সাজেদুর রহমান, ইউনিক প্রেসক্লাবের সভাপতি ও চ্যানেল২৪ প্রতিনিধি দেবাশিষ কুমার সরকার, নাটোর প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক বাপ্পি লাহিড়ী, সময় টিভির আল মামুন, এখন টিভির মাহবুব হোসেন, দিপ্ত টিভির রোকনুজ্জামান, সাংবাদিক রফিকুল ইসলাম নান্নু, বিডিনিউজ২৪.কম প্রতিনিধি তরিকুল ইসলাম সবুজ, সাংবাদিক মোহাম্মদ আলী সুফি সান্টু, কাউছার রহমানসহ আরো অনেকে। এছাড়া জেলার বিভিন্ন উপজেলা প্রেসক্লাবের নেতারা এই মানববন্ধনে অংশ নেন।
মানববন্ধনে বক্তারা বলেন, জামালপুরের বকশিগঞ্জ উপজেলার এক ইউপি চেয়ারম্যানের অনিয়ম ও দুর্নীতির সংবাদ প্রকাশের জেরে সাংবাদিক গোলাম রাব্বানী নাদিমের ওপর পৈচাশিক হামলা করা হয়েছে। এতে তার মৃত্যু হয়েছে। সংবাদ প্রকাশের জেরে সাংবাদিক হত্যা অত্যন্ত নিন্দনীয়।
সাংবাদিক নেতারা বলেন, এ ধরনের ঘটনা দেশের গণমাধ্যমের স্বাধীনতাকে আরও সংকুচিত করবে ও জনগণের বাকস্বাধীনতাকে হুমকির মুখে ফেলবে। আমরা পরিকল্পিত এই হত্যাকাণ্ডের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি। একই সঙ্গে এ ঘটনায় জড়িতদের দ্রুত আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানাচ্ছি।
গত বুধবার (১৪ জুন) রাতে বাড়ি ফেরার পথে বকশিগঞ্জের পাথাটিয়ায় পৌঁছালে অস্ত্রধারী ১০-১২ জন দুর্বৃত্ত নাদিমকে পিটিয়ে জখম করে পালিয়ে যায়। পরে স্থানীয়রা তাকে উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যান। এরপর রাত ১২টার দিকে সেখান থেকে তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য জামালপুর জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। অবস্থা আশঙ্কাজনক হওয়ায় বৃহস্পতিবার সকালে তাকে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ (মমেক) হাসপাতালে পাঠানো হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় বিকেল পৌনে ৩টার দিকে তার মৃত্যু হয়। এ ঘটনায় জড়িত থাকায় এখন পর্যন্ত ছয়জনকে আটক করেছে পুলিশ। নিহত সাংবাদিকের মরদেহ রাতে তার নিজবাড়ি গরুহাটিতে নেওয়া হয়। শুক্রবার সকাল ১০টার দিকে তার জানাজার নামাজ অনুষ্ঠিত হয়।
নিহত সাংবাদিক গোলাম রাব্বানী নাদিম বাংলানিউজটোয়েন্টিফোরের জামালপুর করেসপন্ডেন্ট ও একটি বেসরকারি টেলিভিশনের উপজেলা প্রতিনিধি ছিলেন। তিনি বকশিগঞ্জ উপজেলার নিলাখিয়া ইউনিয়নের গোমেরচর গ্রামের আবদুল করিমের ছেলে।
বকশীগঞ্জের সাধুরপাড়া ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান মাহমুদুল আলম বাবুর অপকর্ম নিয়ে নিউজ করার জেরে এ হত্যাকাণ্ড ঘটেছে বলে দাবি করেছেন নাদিমের স্বজনরা।
মৃত্যুর আগে নাদিম নিজেও হামলার শঙ্কা প্রকাশ করেছিলেন। এর আগে গত ১০ মে ইউপি চেয়ারম্যান মাহমুদুল আলম বাবুকে নিয়ে সংবাদ সম্মেলন করেন তার দ্বিতীয় স্ত্রী সাবিনা ইয়াসমিন। এ নিয়ে বাংলানিউজে ‘দুইবার বিয়ের পরও সন্তান-স্ত্রীকে অস্বীকার করছেন ইউপি চেয়ারম্যান!’ শিরোনামে সংবাদ প্রকাশিত হয়। পরে ১৪ মে তার স্ত্রীর বক্তব্য নিয়ে ‘আমি আমার স্বামী চাই, একসঙ্গে সংসার করতে চাই’ শিরোনামে বাংলানিউজে আরও একটি সংবাদ প্রকাশিত হয়। এরপর ২০ মে সাবিনা ইয়াসমিন তার স্বামী মাহমুদুল আলম বাবুকে আওয়ামী লীগ থেকে বহিষ্কার অথবা পদ থেকে তার অব্যাহতি চেয়ে আবেদন করেন। বাবু জামালপুরের বকশীগঞ্জ উপজেলার সাধুরপাড়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক। এ নিয়েও বাংলানিউজে ‘আ.লীগ থেকে স্বামীর বহিষ্কার চেয়ে স্ত্রীর আবেদন’ শিরোনামে সংবাদ প্রকাশ হয়।
এর আগে, গত ১৪ মে ময়মনসিংহ সাইবার ক্রাইম ট্রাইব্যুনালে জামালপুরের নাদিমসহ চার সাংবাদিকের নামে মামলা করেন সাধুরপাড়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মাহমুদুল আলম বাবু। ৩০ মে আদালত মামলাটি খারিজ করে দেন।
নিহত গোলাম রব্বানির স্ত্রী মনিরা বেগমের অভিযোগ,ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মাহমুদুল আলম বাবু সংবাদ প্রকাশকে কেন্দ্র করে নাদিমের ওপর অসন্তুষ্ট হয়েছিলেন। আগেও তিনি নানাভাবে তাকে হেনস্তা করার চেষ্টা করেছেন। ওই ইউপি চেয়ারম্যানের লোকজনই তাকে হত্যা করেছেন। তিনি এ ঘটনায় জড়িত ব্যক্তিদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেছেন।
এরও আগে গত ১১ এপ্রিল হামলার শিকার হয়েছিলেন নাদিম। তখন তিনি জানিয়েছিলেন, বকশীগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি শাহিনা বেগমের সমর্থকরা এ হামলা করেন। গত ১০ জানুয়ারি ‘বকশীগঞ্জে আ. লীগের কমিটিতে রাজাকারের সন্তান, মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতিবাদ’ শিরোনামে প্রকাশিত সংবাদের জেরে হামলার শিকার হওয়ার কথা জানিয়েছিলেন তিনি।
অভিযুক্ত চেয়ারম্যান মাহমুদুল আলম বাবু বকশীগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি শাহিনা বেগমের গ্রুপের লোক বলেও নাদিমের পরিবারের অভিযোগ।
আরও পড়ুন
নাদিম হত্যাকাণ্ড
বাংলাদেশ সময়: ১৭৫৮ ঘণ্টা, জুন ১৬, ২০২৩
এসআরএস