ঢাকা, বুধবার, ২৮ কার্তিক ১৪৩১, ১৩ নভেম্বর ২০২৪, ১১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

অ্যাম্বুলেন্সে আগুন 

যেভাবে শনাক্ত হলো পুড়ে যাওয়া ৭ লাশের পরিচয়

হারুন-অর-রশীদ, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট  | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২১৩৮ ঘণ্টা, জুন ২৪, ২০২৩
যেভাবে শনাক্ত হলো পুড়ে যাওয়া ৭ লাশের পরিচয় দুর্ঘটনাকবলিত অ্যাম্বুলেন্সটিতে সূত্র খুঁজছেন পুলিশ সুপার শাহজাহান

ফরিদপুর: ফরিদপুরের ভাঙ্গার মালিগ্রামে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে হাইওয়ের রেলিংয়ে ধাক্কা লেগে অ্যাম্বুলেন্সে আগুন লেগে ঘটনাস্থলেই দগ্ধ হয়ে মারা যান ৭ যাত্রী।  

দাউদাউ করে জ্বলা আগুনে পুড়ে ছাই হয়ে যায় তাদের দেহ।

মরদেহগুলোর চেহারাও পুড়ে বিকৃত রূপ ধারণ করে। এমন অবস্থায় কারও মরদেহ-ই চেনা যাচ্ছিল না। তাই মরদেহগুলোর পরিচয় শনাক্ত করতে এক প্রকার দুশ্চিন্তায় পড়ে যায় পুলিশ প্রশাসনসহ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ।  

এসময় ঘটনাস্থলে ছুটে যান ফরিদপুরের পুলিশ সুপার (এসপি) মো. শাহজাহান। লাশগুলো পর্যবেক্ষণ করেন। তিনি পুড়ে যাওয়া অ্যাম্বুলেন্সের মধ্যের লাশগুলোর সঙ্গে কাগজপত্র আছে কি-না খুঁজতে থাকেন। এসময় একটি লাশের সঙ্গে থাকা একটি ব্যাগে অর্ধেক পুড়ে যাওয়া কিছু কাগজপত্র দেখতে পান তিনি। সেখানে একটি এনআইডি কার্ড, জন্মনিবন্ধন ও হাসপাতালের কিছু কাগজপত্র খুঁজে পান। সেগুলো খুঁজে শনাক্ত করতে পারেন একটি লাশের। পরে সংশ্লিষ্ট থানা পুলিশের মাধ্যমে খোঁজ নিয়ে পাওয়া যায় সব লাশগুলোর সন্ধান।

এভাবেই পুড়ে মারা যাওয়া বিকৃত লাশগুলোর সন্ধান দেন পুলিশ সুপার শাহজাহান। সারাদিন পরিশ্রম করে নিহতের স্বজনদের কাছে শনিবার (২৪ জুন) সন্ধ্যায় মরদেহগুলো হস্তান্তর করেন তিনি।  

নিহতরা হলেন- ফরিদপুরের বোয়ালমারীর ফেলাননগর গ্রামের আজিজার শেখের স্ত্রী তাসলিমা বেগম (৫০), মেয়ে কমলা বেগম (৩০) ও আলফাডাঙ্গার বিউটি বেগম (২৬), নিহত কমলার ছেলে আরিফ (১২), আফসা (১), এবং হাসিব (১০) এবং নিহত বিউটির ছেলে মেহেদী (১০)।

নিহতরা সবাই ফরিদপুরের বোয়ালমারী ও আলফাডাঙ্গা এলাকার বাসিন্দা।

এ ব্যাপারে ফরিদপুরের পুলিশ সুপার (এসপি) মো. শাহজাহান বাংলানিউজকে বলেন, লাশগুলো এমনভাবে পুড়েছে যে কারোই পরিচয় শনাক্ত করা যাচ্ছিল না। এমতাবস্থায় তাদের সঙ্গে কিছু পাওয়া যায় কি-না খুঁজতে থাকলাম। অতঃপর একটি মরদেহের সঙ্গে থাকা একটি অর্ধেক পুড়ে যাওয়া একটি ব্যাগে কিছু কাগজপত্র পেলাম। সেখানে খুঁজে একটি এনআইডি, জন্মনিবন্ধনসহ কিছু কাগজের সন্ধান পাই। পরে ওই এনআইডি ও জন্মনিবন্ধনের সাহায্যে নিহতদের পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করে লাশগুলোর নাম-পরিচয় জানতে পারি।  

নিহতের স্বজন ফেলান নগর গ্রামের বাসিন্দা আব্দুল হালিম শেখ (৭০) বাংলানিউজকে বলেন, তাসলিমা বেগম (৫০) প্যারালাইসড হয়ে মাস খানেক আগে ঢাকার একটি হাসপাতালে ভর্তি হন। সেখানে চিকিৎসা শেষে অ্যাম্বুলেন্সে করে আজ বাড়ি ফিরছিলেন তারা। পথে এ দুর্ঘটনার কবলে পড়ে পুরো পরিবারই শেষ হয়ে গেল!

স্বজনদের আহাজারি

আক্ষেপের সুরে তিনি বলেন, পুরো পরিবারই চলে গেল না ফেরার দেশে।

স্বজনদের কান্না ও আহাজারি 

প্রসঙ্গত, শনিবার (২৪ জুন) বেলা ১১টার দিকে ফরিদপুরের ভাঙ্গার মালিগ্রামে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে হাইওয়ের রেলিংয়ে ধাক্কা লেগে অ্যাম্বুলেন্সটিকে আগুন ধরে যায়। এতে ঘটনাস্থলেই ৭ যাত্রীর মৃত্যু হয়। তবে দরজা খুলে দগ্ধ অবস্থায় ওই অ্যাম্বুলেন্সের চালক বের হতে পারেন। তাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে পাঠানো হয়। তিনি ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। এ ঘটনায় সর্বমোট ৮ জনের প্রাণ গেল।

ফরিদপুর হাইওয়ে পুলিশের মাদারীপুর রিজিওনের পুলিশ সুপার (এসপি) মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, দুর্ঘটনায় অ্যাম্বুলেন্সের সামনের অংশে আগুন ধরে যায়। ফলে এ হতাহতের ঘটনা ঘটে।

আরও পড়ুন >> অ্যাম্বুলেন্সে আগুন: নিহত ৭ জনের পরিচয় মিলেছে 

বাংলাদেশ সময়: ২১৩২ ঘণ্টা, জুন ২৪, ২০২৩
এসএএইচ


 

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
Veet