ঢাকা, মঙ্গলবার, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ২৪ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

সৈয়দপুরে কোরবানির হাটে গরু বিক্রি কম, দাম নাগালে

মো. আমিরুজ্জামান, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২০১৭ ঘণ্টা, জুন ২৬, ২০২৩
সৈয়দপুরে কোরবানির হাটে গরু বিক্রি কম, দাম নাগালে

নীলফামারী: নীলফামারীর সৈয়দপুরের ঢেলাপীর হাটে প্রচুর গরু উঠেছে। ভিড় ঠেলে ব্যাপক মানুষ আসছেন হাটে।

তবে শেষ সময়ে এসেও পশু বিক্রি কম হচ্ছে।

এরই মধ্যে বাজার জমে উঠেছে। এবার পশুর দাম নাগালের মধ্যে আছে বলে জানালেন ক্রেতা ও বিক্রেতারা।

সরজমিনে সৈয়দপুর শহরের অদূরে বোকলগাড়ি ইউনিয়নের ঢেলাপীর হাটে গিয়ে দেখা যায়, ঈদকে সামনে রেখে প্রচুর গরুর আমদানি হয়েছে। আছে ছাগল-ভেড়াও।

পাশের জেলা নীলফামারীর খানসামা উপজেলার ভাবকী ইউনিয়নের কাচিনিয়া গ্রামের নিবারণ রায় ঢেলাপীর হাটে তুলেছেন দুটি ষাঁড় গরু। দেশি জাতের ওই গরুগলো নিজ গোয়ালে প্রতিপালন করেছেন তিনি। ওজন হবে আড়াই থেকে সাড়ে তিন মণ। গরুগুলোর দাম হাঁকা হচ্ছে ৮০ থেকে এক লাখ ১০ হাজার টাকা।

নিবারণ বলেন, সবাই গরুর নেংগুর (লেজ) তুলে দেখেছেন, দাঁত দেখেছে, দাম জানতে চাইছেন, দড়ি ধরি নাড়াচড়া করছেন। কিন্তু কেউ আর কিনছেন না!

ওই হাটে কথা হয় ঢাকা থেকে আসা গরুর ব্যাপারী রফিকুল ইসলামের সঙ্গে। তিনি বলেন, ঢাকায় বড় গরুর চাহিদা বেশি। তবে হাটে যেভাবে গরুর দাম বলা হচ্ছে, সে অনুযায়ী ঢাকার রেট প্রায় একই রকম। এসব গরু নিয়ে গিয়ে খুব একটা লাভ করতে পারবো না। তবুও ১০টি গরু নিয়ে যাবো ঢাকায়, দেখি কী হয়।

দাম কেমন জানতে চাইলে তিনি বলেন, গত বছর যে গরু এক লাখ ২০ হাজার টাকায় কিনেছি, তার দাম এখন দেড় লাখ টাকা।

হাটে গরু কিনতে এসেছেন সৈয়দপুরের বিশিষ্ট ব্যবসায়ী তোফায়েল আহমেদ। তিনি একটি মাঝারি শাহিবল জাতের একটি ষাঁড় কিনেছেন। এর দাম পড়েছে এক লাখ ২০ হাজার টাকা। ওজন হবে চার মণের মতো। তিনি ধারণা করছেন, দাম একটু বেশি হলেও মোটেই ঠকেননি।

সৈয়দপুর রেলওয়ে কারখানার কয়েকজন কর্মচারী আড়াই লাখ টাকায় ভাগে বিশাল একটি ষাঁড় কিনেছেন। এর মধ্যে জাহাঙ্গির আলম জানান, আমরা সাতজন মিলে ভাগে কোরবানি দেব। গরুর দাম কিছুটা বেশি বলে জানান তিনি।

একজন ক্রেতা বেশ অনেকগুলো গরু দেখলেন। কিছুতেই পছন্দ করতে পারছিলেন না তিনি। কোন গরুটি নেবেন সেই ভাবনায় হারাচ্ছিলেন। সালাহউদ্দিন সরকার নামে ওই ক্রেতা বলেন, গরু কেনা নিয়ে বেশ উদ্বিগ্ন আছেন তিনি। কারণ এই এলাকায় গরুর লাম্পিং স্কিন রোগ ছড়িয়ে পড়েছে। রোগাক্রান্ত গরু কেনা যাবে না। তাই পরখ করে দেখছি। লাম্পিং স্কিন রোগের কারণে গরু বিক্রি কম হচ্ছে বলে তিনি মনে করেন।

ঢেলাপীর হাটের ইজারাদার মেতালেব হোসেন হক জানান, এবার প্রতিটি হাটে গরু আমদানি প্রচুর। গ্রামে বাড়ি বাড়িতে গরু পোষা হচ্ছে। অনেকে ছোট-বড় খামার গড়ে তুলেছেন। ফলে গরু সংকট নেই এই অঞ্চলে।

তিনি বলেন, সাপ্তাহিক হাটে প্রায় সাড়ে তিন হাজারের মতো গরু উঠেছিল। রসিদ যাচাই করে জেনেছি আড়াই হাজার গরু বিক্রি হয়েছে। ঈদের আগে মঙ্গলবার শেষ হাট পাবো। অর্থনৈতিক মন্দার কারণে তুলনামূলকভাবে এবার কোরবানি কম হবে বলে তিনি মনে করেন।

জেলা প্রাণিসম্পদ কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, নীলফামারীতে এবার দুই লাখ ৯৮৯টি গবাদি পশু কোরবানির জন্য প্রস্তুত আছে। এর মধ্যে সদরে ১৫ হাজার ৪৯৮, সৈয়দপুরে ৯ হাজার ৬৭২, ডোমারে ১১ হাজার ১২৮, ডিমলায় ১১ হাজার ৭৭২, জলঢাকায় ১৪ হাজার ৫২৭ ও কিশোরগঞ্জ উপজেলায় ১২ হাজার ১৫৮টি। জেলার ছয় উপজেলায় এক লাখ ২২ হাজার ৬৩৭টি পশুর চাহিদা আছে। হিসাবে উদ্ধৃত থাকবে ৭৮ হাজার ৩৫২টি গবাদি পশু। গত বছর জেলায় ৭৪ হাজার ৭২৫টি গবাদি পশু প্রস্তুত ছিল। হিসাবে উৎপাদন বেড়েছে দ্বিগুণ।

এছাড়া জেলায় খামারি আছেন ৩০ হাজার ৬৮৮ জন। এর মধ্যে সদরে পাঁচ হাজার ৭২৫, সৈয়দপুরে চার হাজার ২৬৯, ডোমারে চার হাজার ৬৯৬, ডিমলায় চার হাজার ৮৭৯, জলঢাকায় পাঁচ হাজার ৯৯২ ও কিশোরগঞ্জে পাঁচ হাজার ১২৭ জন।

জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. মোনাক্কা আলী বলেন, এবার সীমান্তে কড়া নজরদারি থাকায় গরু আসছে না। ফলে হাটে দেশি গরু বেশি। জমজমাট বেচাকেনা হচ্ছে। ন্যায্য দাম পাওয়ায় খামারি ও গৃহস্থরা বেশ লাভবান হচ্ছেন।

বাংলাদেশ সময়: ২০১৬ ঘণ্টা, জুন ২৬, ২০২৩
এফআর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।