ঢাকা, মঙ্গলবার, ৯ পৌষ ১৪৩১, ২৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ২১ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

জাতীয়

নামের মিল থাকায় জেল খেটেছেন মসজিদের ইমাম!

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৮১৩ ঘণ্টা, জুলাই ৩, ২০২৩
নামের মিল থাকায় জেল খেটেছেন মসজিদের ইমাম! বিনা অপরাধে জেল খাটলেন মসজিদের ইমাম সিরাজুল ইসলাম হাওলাদার

বরিশাল: বরিশালের বাকেরগঞ্জে নামের মিল থাকায় যৌতুক মামলায় তিনদিন কারা‌ভোগ ক‌রে‌ছেন সিরাজুল ইসলাম হাওলাদার নামে এক মসজিদের ইমাম।  

পু‌লি‌শের ভুলে এমনটা হ‌য়ে‌ছে ব‌লে দাবি ভুক্তভোগী সিরাজুলের।

মামলার প্রকৃত আসামি একই গ্রামের আরেক সিরাজুল ইসলাম- বিষয়টি আদালতে নিশ্চিত করার পর রোববার (২ জুলাই) বিকেল ৫ টার দিকে বরিশাল কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে মুক্তি পান ওই ইমাম।

এরআগে ঈদুল আজহা উদ্‌যাপন করতে সিরাজুল বাড়িতে এলে শুক্রবার দুপুরে তাকে গ্রেপ্তার করেন বাকেরগঞ্জ থানার উপপরিদর্শক মো. কিবরিয়া।

ভুক্তভোগী সিরাজুল ইসলাম ঢাকায় একটি মসজিদে ইমামতি করেন। তিনি বরিশালের বাকেরগঞ্জ উপজেলার রঙ্গশ্রী ইউনিয়নের বোয়ালিয়া গ্রামের মেনহাজ হাওলাদারের ছেলে।

মুক্তি পেয়ে ইমাম সিরাজুল বলেন, আমার ও আসামির নাম একই। দুজনই হাওলাদার বংশের। তার ওপর আমার বাবা ও আসামি সিরাজুলের বাবার নামও এক। আমাদের ঠিকানাও একই গ্রামে। তাই পুলিশের ভুল হয়েছে। রোববার বেলা দেড়টার দিকে আমাকে বাড়ি থেকে গ্রেপ্তার করেন বাকেরগঞ্জ থানার উপ পরিদর্শক মো. কিবরিয়া। পরে জানতে পারি সোনিয়া নামক এক গৃহবধূর যৌতুক মামলার আসামি আমি। ওই মামলায় আমাকে গ্রেপ্তার দেখিয়ে শুক্রবার বিকালে কারাগারে পাঠানো করা হয়।

সিরাজুল আরও বলেন, গ্রেপ্তারের পর গ্রামের স্বজনেরা মামলার কাগজপত্র তুলেন। এতে দেখা যায় আসামি সিরাজুল ইসলাম ছাড়া অন্য আসামিরা অচেনা। পরে গ্রামের মুরুব্বিদের সহযোগিতায় খোঁজখবর নিয়ে আসল আসামি সিরাজুল ইসলামের সন্ধান পান। ওই সিরাজের ছেলে হাসানের স্ত্রী সোনিয়া ২০১৯ সালে মামলাটি দায়ের করেছেন। মামলার অপর দুই আসামি হলেন হাসান ও তার মামা ফারুক।  

এসব কাগজপত্র আদালতে দাখিলের পর আমা‌কে মামলা থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয় বলে জানান মসজিদের ইমাম সিরাজ।

রঙ্গশ্রী ইউনিয়নের চৌকিদার আব্দুর রাজ্জাক বলেন, প্রকৃত আসামি সিরাজুল ইসলাম এলাকার জামাই। গ্রামে তার পরিচিতি নেই। তিন বছর ধরে বাকেরগঞ্জ থানা থেকে তার কাছে যৌতুক মামলার ওয়ারেন্ট আসামি সিরাজের সন্ধান চাওয়া হচ্ছিল। আসামির বাবা নাম ও বংশের মিল অনুযায়ী ঢাকায় মসজিদের ইমাম সিরাজ ছাড়া অন্য কোন সিরাজের সন্ধান এলাকাতে পাইনি। শুক্রবার ইমাম সিরাজ‌কে পুলিশ গ্রেপ্তার করে। পরে স্বজনদের অভিযোগের ভিত্তিতে আসল সিরাজের সন্ধানে নামা হয়। মামলার অপর আসামি ফারুকের সন্ধান পাওয়ার পর তিনি স্বীকার করেন, তার (ফারুক) ভগ্নিপতি সিরাজুল ইসলামের ছেলে হাসানের স্ত্রী সোনিয়া ওই মামলাটি দায়ের করেছেন। মামলার অন্য আসামিরা আদালত থেকে জামিন নিয়েছেন। একমাত্র সিরাজুল ইসলাম জামিন নেননি।

যদিও প্রকৃত আসামি সিরাজকেই গ্রেপ্তার করা হয়েছিল বলে দাবি করেছেন বাকেরগঞ্জ থানার উপ পরিদর্শক গোলাম কিবরিয়া।

বাকেরগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এস এম মাকসুদুর রহমান বলেন, ওয়ারেন্ট অনুযায়ী সিরাজ নামে একজনকে গ্রেপ্তার করেছেন এসআই কিবরিয়া।  যে ওয়ারেন্টের কাগজে লেখা সিরাজের নাম বাবার নাম ও ঠিকানার সঙ্গে গ্রেপ্তার হওয়া সিরাজের সবকিছু ঠিক আছে। আর এখন আমরা শুনতে পেরেছি হুবহু ওই নামে আরও এক সিরাজ রয়েছেন একই এলাকায়। তবে এই সিরাজের বাবার নামের সঙ্গে গ্রেপ্তার হওয়া সিরাজের বাবার নামের মিল থাকলেও এখানে তার শ্বশুর বাড়ি। বাবার বাড়ি অন্যত্র।

তিনি বলেন, এখানে পুলিশ কর্মকর্তার দোষ দেখছি না। কারণ তিনি ওয়ারেন্ট মিলিয়ে আসামি গ্রেপ্তার করেছেন।  তাই পুরো বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে। আর প্রকৃত ব্যক্তির সন্ধানে কাজও চলছে।

বাংলাদেশ সময়: ১৮০৫ ঘণ্টা, জুলাই ০৩, ২০২৩
এমএস/এসএএইচ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।