নওগাঁ: সরকারি গাড়ির জন্য বরাদ্দ দেওয়া তেল আত্মসাতের অভিযোগ উঠেছে নওগাঁ প্রাইমারি টিচার্স ট্রেনিং ইনস্টিটিউটের (পিটিআই) সুপার ইকবাল হোসেনের বিরুদ্ধে।
শুধুমাত্র তেল আত্মসাৎ নয়, অভিযোগ রয়েছে প্রতিষ্ঠানের আসবাবপত্র নিজ বাসায় নিয়ে ব্যবহারেরও।
অনুসন্ধানে পাওয়া যায়, ঢাকা মেট্রো চ- ৫৬-০৪৪৬ নম্বরের একটি সাদা রঙের মাইক্রোবাস ব্যবহার করেন ইনস্টিটিউটের সুপার ইকবাল হোসেন। এ গাড়িতে ব্যবহারের জন্য মাসে সরকারি বরাদ্দ ১৪০ লিটার তেল। গত ফেব্রুয়ারি মাসে তিনটি স্লিপে ১৪০ লিটার তেল কেনা দেখানো হয় গাড়িতে ব্যবহারের জন্য। যার দুটি স্লিপে চালক মিজানুরের স্বাক্ষর করা স্লিপে ৫০ ও ৪০ লিটার তেল কেনা হয়ে বলে দেখানো হয়েছে। কিন্তু ৫০ লিটারের অন্য আরেকটি স্লিপে নেই চালকের স্বাক্ষর। এরপর মে মাসে ১৩৯ লিটার তেল কেনা হয়েছে বলে দেখানো হয়। কিন্তু এ মাসেও চালকের স্বাক্ষর বিহীন দুটি স্লিপে তেল কেনা দেখিয়েছেন ইনস্টিটিউটের সুপার ইকবাল হোসেন। অভিযোগ, প্রতিমাসেই এভাবে নিজে লিখে তেল বিক্রি করে দেন পিটিআই কর্মকর্তা ইকবাল হোসেন।
তেল বিক্রির বিষয়ে পিটিআইয়ের গাড়ি চালক মিজানুর রহমান বাংলানিউজকে জানান, প্রতিবার গাড়িতে তেল ভরার সময় যে স্লিপ ব্যবহার করা হয়, সেই স্লিপের অপর পৃষ্ঠায় আমার স্বাক্ষর থাকে। আমার স্বাক্ষর ছাড়া স্লিপের বিষয়ে আমি কিছু জানি না। ফেব্রুয়ারি মাসে তিনটি স্লিপে ১৪০ লিটার তেলের হিসাব দেখানো হয়েছে। ওই মাসে আমার স্বাক্ষরে ৯০ লিটার তেল ভরা হয় গাড়িতে। বাকি ৫০ লিটারের হিসাব আমার কাছে নেই।
তেল কেনার বিষয়ে নওগাঁ সাকিব সিলিং স্টেশনের ম্যানেজার আল-আমীন বাংলানিউজকে বলেন, ইনস্টিটিউট সুপার ইকবাল হোসেন স্যার এখানে যোগদানের পরে তার অফিসে আমাকে ডেকে বলেন, গাড়িতে ব্যবহারের জন্য আমাদের এত তেল লাগে না। যেটুকু তেল প্রয়োজন, সেটুকু গাড়িতে দেবেন। আর কিছু তেলের জন্য টাকা দিয়েন। এরপর থেকে প্রতিমাসে কিছু তেলের বিনিময়ে আমরা স্যারকে টাকা দিই। স্যার আমাদের স্লিপ দেন, আমরা সে অনুয়ায়ী টাকা দিই।
প্রতিষ্ঠানের আসবাবপত্র নিজ বাসায় নিয়ে ব্যবহারের বিষয়ে পিটিআইয়ের নৈশ প্রহরী রফিকুল ইসলাম বাংলানিউজকে বলেন, স্যার এখানে যোগদানের কিছু দিন পর একদিন রাত ১টার দিকে একটি ট্রাকে করে কিছু কাঠ নিয়ে আসেন। এরপর সেগুলো এখানে রেখে পিটিআই থেকে কিছু আসবাবপত্র ট্রাকে করে বাসায় নিয়ে যান। যেখানে চারটি টেবিল ও দুটি চেয়ার রয়েছে। এছাড়া আর কিছু বলতে পারব না।
এসব অভিযোগের বিষয়ে কিছু বলতে চাননি অভিযুক্ত সুপার ইকবাল হোসেন। তবে আসবাবপত্র বাসায় নেওয়ার বিষয়ে বলেন, প্রতিষ্ঠান থেকে ধার করে চেয়ার-টেবিলগুলো নিয়েছি। আমার বাসার জন্য কিছু আসবাবপত্র তৈরি করতে দিয়েছি, সেগুলো তৈরি হয়ে গেলেই এগুলো ফেরত দেব।
তেল বিক্রির বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি অনুরোধ করে বলেন, একটি প্রতিষ্ঠান পরিচালনা করতে গেলে অনেক রকম ভুলভ্রান্তি হয়। সে ক্ষেত্রে আমার যদি কিছু ভুল হয়ে থাকে, সে বিষয়টি ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখার অনুরোধ রইল।
এসব বিষয়ে রাজশাহী প্রাইমারি ট্রেনিং ইনস্টিটিউটের উপ পরিচালক রায়হান উদ্দিন মোবাইল ফোনে বাংলানিউজকে জানান, এসব অভিযোগের বিষয়ে তদন্ত করা হবে। অভিযোগের সত্যতা পেলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
বাংলাদেশ সময়: ১৩৪৩ ঘণ্টা, জুলাই ১২, ২০২৩
এসআই