ঢাকা, বুধবার, ১২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ নভেম্বর ২০২৪, ২৫ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

২২ বছরের দ্বন্দ্বে ২৮ হত্যায় ৯৩৪ মামলা, আসামি সাড়ে ৪ হাজার জন

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৭২৬ ঘণ্টা, জুলাই ২৪, ২০২৩
২২ বছরের দ্বন্দ্বে ২৮ হত্যায় ৯৩৪ মামলা, আসামি সাড়ে ৪ হাজার জন সম্প্রীতি সমাবেশ।

বরিশাল: শুধু দুই গ্রুপের মধ্যে টানা ২২ বছরের দ্বন্দ্বে বরিশালের মুলাদীর একটি ইউনিয়নের বিভিন্ন ঘটনায় ২৮ হত্যাসহ ৯৩৪টি মামলা হয়েছে। আর এসব মামলায় আসামির সংখ্যা ছিল চার হাজার চারশ ৩৯ জন।



বরিশাল জেলা পুলিশের মিডিয়া সেল ও বিশেষ শাখা সূত্রে জানা গেছে, মুলাদীর বাটামারা ইউনিয়নে হাজি ও আকন গ্রুপের মধ্যে দীর্ঘদিনের দ্বন্দ্ব চলছে। এর পরিপ্রেক্ষিতে ২০০১ সাল থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত ২৮টি হত্যা মামলায় আসামি হয় ৩২৭ জন, সাতটি ডাকাতি মামলায় আসামি হয় ৩৮ জন, ১২০টি নারী ও শিশু নির্যাতন মামলায় আসামি হয় ৩২৩ জন, ২২টি অপহরণ মামলায় আসামি হয় ৭১ জন এবং ৭৫৭টি মারামারিসহ অন্যান্য ঘটনায় মামলায় আসামি হয় ৩ হাজার ৬৭৭ জন। ফলে উল্লিখিত সময়ে মোট ৯৩৪টি মামলায় আসামির সংখ্যা দাঁড়ায় ৪ হাজার ৪৩৯ জন।

যদিও গোয়েন্দা তথ্য বলছে, উল্লিখিত সময়ের আগে দুইপক্ষের বিরোধের কারণে আরও অনেক হত্যাকাণ্ডসহ অন্যান্য ঘটনা সংঘটিত হওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে অসংখ্য মামলা রুজু হয়েছিল। আর একের পর এক হত্যা আর মারামারির মতো ঘটনাসহ বিভিন্ন ঘটনায় দায়ের হওয়া মামলাগুলোতে ওই এলাকার অনেক লোক আসামি হওয়ায় মুলাদীর বাটামারা ইউনিয়নটি অপরাধীদের অভয়ারণ্য ও অশান্ত এলাকা হিসেবে পরিচিতি পেতে থাকে।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, ওই এলাকায় কোনো ঘটনা ঘটলে মামলা দায়ের হলে একটি পক্ষ সক্রিয় হয়ে অপরপক্ষ নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়ে। কিছু দিন পরে নিষ্ক্রিয় থাকা গ্রুপটি আবার সক্রিয় হলে বড় ধরনের ঘটনা ঘটে গেলে, উভয়পক্ষ পাল্টাপাল্টি মামলাও করেন। মামলা দায়ের হলে পুলিশি অভিযানে কিছু আসামি গ্রেপ্তার হয়ে কারাগারে যায়, বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই আসামিরা দীর্ঘদিন আত্মগোপনে থাকেন। উভয়পক্ষই নিজেদের মধ্যে ক্ষোভ পুষতে থাকে এবং পরবর্তীতে সুযোগ বুঝে হত্যাকাণ্ডে লিপ্ত হয়। এরপর শুরু হয় পাল্টাপাল্টি হত্যার মতো ঘটনা। সম্প্রতি এ বিরোধ নিষ্পত্তিতে উদ্যোগ নেয় বরিশাল জেলা পুলিশ।

জেলা পুলিশের একটি সূত্র বলছে, বরিশালের পুলিশ সুপার (এসপি) ওয়াহিদুল ইসলাম যোগদান দেওয়ার পরে তিনি বিভিন্ন এলাকার অপরাধ চিত্রের দিকে নজর দেন। যেখানে যে ধরনের অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড বাড়ছিল, সেগুলো কমানোর উদ্যোগ নেন। এর মধ্যে বাটামারার দিকে চোখ রাখেন তিনি। আর এরমধ্যেই এপ্রিলে বাটামারায় বিবদমান দুই গ্রুপের দ্বন্দ্বে জোড়া খুনের ঘটনা ঘটে যায়।

পুলিশের ওই সূত্রটি বলছে, বাটামারা ও সফিপুর এলাকায় শান্তি প্রতিষ্ঠা ও দুইপক্ষের বিরোধ নিষ্পত্তির লক্ষ্যে ছয়বার জেলা পুলিশের উদ্যোগে কমিউনিটি পুলিশিং ও বিট পুলিশিং সভা করে। অস্থায়ী পুলিশ ক্যাম্প স্থাপন করে অপরাধীদের আইনের আওতায় আনতে জোরালো অভিযান অব্যাহত রাখা হয়। দীর্ঘ প্রায় ৫০ বছরের হাজি ও আকন গ্রুপের বিরোধ নিষ্পত্তি ও এলাকায় শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য জেলা পুলিশের পাশাপাশি এলাকাবাসী উদ্যোগ নেয়। এর ফলে উভয় গ্রুপ সহাবস্থান নিশ্চিত ও শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য একমত পোষণ করে।
এরই ধারাবাহিকতায় বাটামারা এলাকায় পুলিশ ক্যাম্প স্থাপনের জন্য ১৯ জুলাই এলাকাবাসীর পক্ষ থেকে বরিশাল জেলা পুলিশকে ২৫ শতাংশ জমি রেজিস্ট্রি করে দেওয়া হয়। আর বিরোধপূর্ণ এলাকায় উভয়পক্ষের লোকজনের সহাবস্থান নিশ্চিত ও শান্তি প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে স্থানীয় লোকজনের সহায়তায় শনিবার (২২ এপ্রিল) বিকেলে মুলাদীর এক নম্বর বাটামারার জাগরণী স্কুল মাঠে বরিশাল জেলা পুলিশের উদ্যোগে সম্প্রীতি সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। এতে বরিশালের পুলিশ সুপারের পাশাপাশি, মাদারীপুর ও শরীয়তপুর জেলা পুলিশ সুপার উপস্থিত ছিলেন। সমাবেশেই বাটামারা ইউনিয়ন ও মুলাদীর গণ্যমান্য ব্যক্তিদের মধ্যস্থতায় শান্তি চুক্তি হয়।

বিষয়টি নিশ্চিত করে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন) মো. শাহজাহান হোসেন বাংলানিউজকে বলেন, মূলত পুলিশ সুপার ওয়াহিদুল ইসলাম যোগদানের পর বিষয়টি নিয়ে কাজ শুরু করা হয়। আমরা লক্ষ্য করছিলাম প্রায়ই ওই এলাকায় মারামারি, হানাহানির ঘটনা ঘটত। কয়েকটি হত্যাকাণ্ডও ঘটে। তাই ওই এলাকা শান্তি-শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনার লক্ষ্যে এ উদ্যোগ নেওয়া হয়। ছয়বারের পর সপ্তমবারের সভায় উভয়পক্ষ এলাকায় শান্তি বজায় রাখার লক্ষ্য একমত পোষণ করে। আর সেই অনুযায়ী ওই এলাকার লোকজনই সম্প্রীতি সমাবেশের আয়োজন করে।

তিনি বলেন, ১২ শতের অধিক লোকের উপস্থিতিতে সম্প্রীতি সমাবেশে সবাই একমত পোষণ করেন, এলাকার শান্তি ফিরে আনার লক্ষ্যে যে চুক্তি হয়েছে তা অনুযায়ী সব পক্ষ একত্রিত হয়ে শান্তি-শৃঙ্খলা বজায় রেখে সবাই মিলেমিশে উন্নয়মূলক কাজ করবে।

তিনি বলেন, উদ্যোগটি এ অঞ্চলে প্রথম। আশা করি, এ এলাকায় শান্তির সুবাতাস বইতে থাকবে।  

এসপি ওয়াহিদুল ইসলাম বলেন, আমার গ্রাম মাদারীপুরে হওয়ায় ছোটবেলা থেকেই ওই এলাকার ঘটনা শুনে আসছি। চাকরির সুবাদে বরিশালের দায়িত্ব পাওয়ার পর ওই এলাকায় শান্তি ফিরিয়ে আনার জন্য কাজ শুরু করি। অপরাধীদের ধরতে অভিযান চালানোর পাশাপাশি বিবদমান দুটি গ্রুপের বিবাদ মিটিয়ে এলাকায় শান্তি-শৃঙ্খলা বজায়ের উদ্যোগ নিই। এরই ধারাবাহিকতায় ওই এলাকার মানুষের সহযোগিতায় সম্প্রীতি সমাবেশ করা হলো।

বাংলাদেশ সময়: ১৭১৮ ঘণ্টা, জুলাই ২৩, ২০২৩
এমএস/এএটি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।