ঢাকা, মঙ্গলবার, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ২৪ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে কার্যকরী পদক্ষেপের দাবি

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৭৫০ ঘণ্টা, আগস্ট ৬, ২০২৩
ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে কার্যকরী পদক্ষেপের দাবি ছবি: শাকিল আহমেদ

ঢাকা: ডেঙ্গু এখন আর শহুরে রোগ নয়, বরং এটি এখন সারা দেশে ছড়িয়ে পড়েছে। তাই সরকার ও সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোকে শুধু নিয়মিত ব্রিফিংয়ের মধ্যে সীমাবদ্ধ না থেকে দ্রুত ও কার্যকরী পদক্ষেপ নিতে আহ্বান জানিয়েছেন বিশিষ্টজনেরা।

রোববার (৬ আগস্ট) বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলনের (বাপা) উদ্যোগে অনুষ্ঠিত ‘পরিবেশ ও সামাজিক অভিঘাতের প্রেক্ষিতে ডেংগুর প্রসার’ শীর্ষক এক আলোচনা সভায় তারা এ আহ্বান জানান।

বাপা’র সভাপতি অধ্যাপক নুর মোহাম্মদ তালুকদারের সভাপতিত্বে এবং সাধারণ সম্পাদক আলমগীর কবিরের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বাপা’র সহ-সভাপতি স্থপতি ইকবাল হাবিব।

অনুষ্ঠানে আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ইনস্টিটিউট অব এপিডেমিওলজি, ডিজিজ কন্ট্রোল অ্যান্ড রিসার্চের (আইইডিসিআর) উপদেষ্টা ডা. মুশতাক হোসেন, ডক্টরস ফর হেলথ অ্যান্ড এনভায়রনমেন্টের সভাপতি অধ্যাপক ড. এম আবু সাঈদ, জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ডা. লেলিন চৌধুরী এবং বিশিষ্ট কীটতত্ত্ববিদ, অধ্যাপক ড. কবিরুল বাশার।

স্থপতি ইকবাল হাবিব তার মূল প্রবন্ধে বলেন, ডেঙ্গু জ্বর একটি মশাবাহিত ভাইরাল সংক্রমণ। এটি সাধারণত বিশ্বের গ্রীষ্মমণ্ডলীয় এবং উপক্রান্তীয় অঞ্চলে দেখা যায়। এডিস প্রজাতির স্ত্রী মশার কামড়ে এটি হয়ে থাকে। এটি তখনই ঘটে যখন মশা একটি সংক্রমিত ব্যক্তিকে কামড় দেয় এবং তারপর ভাইরাস বহন করার সময় একটি অ-সংক্রমিত ব্যক্তিকে কামড় দেয়। পৃথিবীতে প্রায় ৩,৫০০ প্রজাতির মশার ২৫% হচ্ছে এডিস। বাংলাদেশে প্রাপ্ত ১২৬ প্রজাতির মশার মধ্যে ২৬টি এডিস যার দুটি প্রজাতি-এডিস ইজিপ্টি ও এডিস অ্যালবোপিকটাস ডেঙ্গু ভাইরাসের প্রধান বাহক।

সভাপতির বক্তব্যে অধ্যাপক নুর মোহাম্মদ তালুকদার বলেন, ষাটের দশকে দেশ থেকে ম্যালেরিয়া নির্মূল হয়েছিল কিন্তু এখন আবার সেই ম্যালেরিয়ার প্রভাব লক্ষ্য করা যাচ্ছে, যেটা জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে। দেশে সরকারসহ সকল স্তরে সচেতনতা কর্মকাণ্ড পরিচালনা, নিয়োমিত তদারকি ও সংশ্লিষ্ট কতৃপক্ষের প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহনই ডেঙ্গু রোধে কার্যকর ভূমিকা পালন করবে।

ডা. মুশতাক হোসেন বলেন, ডেঙ্গু এখন আর শহুরে রোগ নয়। বরং এটি এখন সারা দেশে ছড়িয়ে পড়েছে। তাই সরকার ও সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোকে নিয়মিত ব্রিফিং এর মধ্যে সীমাবদ্ধ না থেকে দ্রুত ও কার্যকরী পদক্ষেপ নিতে হবে। দেশের প্রতিটি ওয়ার্ডে প্রতিটি স্বাস্থ্য কেন্দ্রে ডেঙ্গু পরীক্ষা কেন্দ্র চালু করতে হবে। যারা পজিটি হবেন তাদের বিশেষ চিকিৎসার ব্যবস্থা করতে হবে। প্রতিটি কেন্দ্রে মশা প্রতিরোধক নেট ব্যবহারের আয়তায় আনতে হবে।

তিনি বলেন, ডেঙ্গু সম্পূর্ণ মৃত্যু প্রতিরোধযোগ্য রোগ। সুতরাং দেশে এর জন্য উন্নত গবেষণা করে টিকা আবিস্কার ও তা প্রদান জরুরি এবং আমরা এর আহ্বান জানাই। বছরব্যাপী সচেতনতামূলক কর্মকাণ্ডের পাশাপাশি প্রশিক্ষণ প্রদানেরও আহ্বান জানাচ্ছি।

অধ্যাপক ড. এম আবু সাঈদ বলেন, দেশে অপরিকল্পিত নগরায়ন ও ডি-ফরেষ্টেশনের ফলে জলবায়ুর পরিবর্তন। এই জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে বিশ্বব্যাপী বিভিন্ন রোগ-ব্যাধি বৃদ্ধি পাচ্ছে। দেশের পরিবেশ রক্ষায় সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে।

ডা. লেলিন চৌধুরী বলেন, সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের মশা নিধনে দৃশ্যত তেমন কোনো উল্লেখযোগ্য ও কার্যকর পদক্ষেপ লক্ষ্য করা যাচ্ছে না। ডেঙ্গু আক্রান্ত বেশির ভাগ রোগীর কোনো উপসর্গ লক্ষ্য করা যায় না। সে কারণে দেশে প্রকৃত আক্রান্ত ও মৃত্যুর তথ্য পাওয়া যাচ্ছে না। যে সংখ্যা প্রকাশ করা হচ্ছে, প্রকৃত পক্ষে তার চেয়ে অনেক বেশি আক্রান্ত এবং মৃত্যুবরণ করছে। আক্রান্তের তুলনায় পরীক্ষা কেন্দ্র খুবই সামান্য। দেশে এতদিন ধরে হাজার হাজার মানুষ মারা গেল, অথচ এ রোগ নিয়ে তেমন কোনো উল্লেখযোগ্য গবেষণা, প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি।

দেশে জনস্বাস্থ্যগত জরুরি অবস্থা জারি করার প্রস্তাব করেন দেন এই চিকিৎসক। একই সাথে দ্রুত ভ্যাকসিন সংগ্রহ করে ভ্যাকসিন দেওয়ার দাবি জানান তিনি।

অধ্যাপক ড. কবিরুল বাশার বলেন, মাঠ পর্যায়ে কাজ করতে গিয়ে লক্ষ্য করা যায় বহুতল ভবনের গাড়ির গ্যারেজ, গাড়ি পরিষ্কারের স্থানে পানি জমে মশার সৃষ্টি হয়। কিন্তু এসব বহুতল ভবনে অনেক সচেতন মানুষ বসবাস করেন। রোহিঙ্গা ক্যাম্পে অনেক জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয় এসকল স্থানে পানি নিষ্কাশনের উপযুক্ত ব্যবস্থা না থাকায় মশার বিস্তার লাভ করে।

আলমগীর কবির বলেন, সরকারের দায়িত্বশীল সংস্থা ও ব্যক্তি ডেঙ্গু নির্মূলে তাদের দায়িত্বহীনতার পরিচয় দিয়েছে। তারা যদি সারাদেশের এডিস মশার প্রজননগুলো সময়মত ধ্বংস করতো তা হলে এ মশার বংশ বিস্তার নষ্ট হয়ে যেত।

সভায় আরও উপস্থিত ছিলেন বাপা’র কোষাধ্যক্ষ জাকির হোসেন, যুগ্ম সম্পাদক হুমায়ুন কবির সুমন, ফরিদুল ইসলাম ফরিদ, নূর আলম শেখ এবং বাপা জাতীয় কমিটির সদস্য নাজিম উদ্দীন, হাজী শেখ আনছার আলী, ফাহমিদা নাজনিন তিতলি, আব্দুস সামাদ প্রধান, শাকিল কবিরসহ বাপা অন্যান্য কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ এবং বিভিন্ন পরিবেশবাদী ও সামাজিক আন্দোলনের প্রতিনিধিরা।

বাংলাদেশ সময়: ১৭৪৬ ঘণ্টা, আগস্ট ০৬, ২০২৩
এইচএমএস/এমজেএফ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।