ঢাকা, বুধবার, ২৮ কার্তিক ১৪৩১, ১৩ নভেম্বর ২০২৪, ১১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

ঢামেকে স্যাঁতসেঁতে মেঝেতে রোগীর পাশেই ড্রেসিংয়ের আবর্জনা

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট  | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২১৪৫ ঘণ্টা, আগস্ট ৮, ২০২৩
ঢামেকে স্যাঁতসেঁতে মেঝেতে রোগীর পাশেই ড্রেসিংয়ের আবর্জনা মেঝেতে শুয়ে রোগী আব্দুল মান্নান

ঢাকা: ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পুরাতন ভবনে ঢাল সিঁড়িতে দ্বিতীয় তলায় ওঠার স্থান। ময়লা-আবর্জনা ফেলে রাখায় স্থানটি অনেকটাই অস্বাস্থ্যকর।

পড়ে আছে পচা রক্তের ব্যাগ, রক্তমাখা ব্যান্ডেজ।

এই পরিবেশে ময়লা এক ফোমের ওপর শুয়ে চিকিৎসা নিতে দেখা গেল আব্দুল মান্নান নামে এক অস্ত্রোপচারের রোগীকে। মঙ্গলবার (৮ জুলাই) সন্ধ্যা ৬টার দিকে তাকে এই পরিবেশে চিকিৎসা নিতে দেখা যায়। তার শোয়ার জায়গার পাশেই এসব আবর্জনা পড়ে থাকতে দেখা যায়।  

জানা গেল, সকালে মান্নানের ড্রেসিং করা হয়েছিল। সেই ড্রেসিংয়ের ময়লা-আবর্জনাই তার পাশে ফেলে রেখে যান হাসপাতালের লোকেরা। এমনিতেই বৃষ্টিতে পরিবেশ স্যাঁতসেঁতে, তার ওপর রোগীর পাশে ড্রেসিংয়ের আবর্জনা! পরিস্থিতি এমন যে, সেখানে সুস্থ মানুষেরই টেকা দায়।  

পটুয়াখালীর বাউফলের চন্দ্রপাড়া গ্রামের বাসিন্দা আব্দুল মান্নান। পেশায় কৃষক। কয়েকদিন আগে গ্রামে একটি অটোরিকশায় যাওয়ার সময় পড়ে গিয়ে মাথায় আঘাত লাগে তার।

৫ জুলাই রাত ১০টার দিকে তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। পরদিন ৬ জুলাই দুপুরে নিউরোসার্জারি বিভাগের ১০৩ নম্বর ওয়ার্ডের ভেতরে একটি অস্ত্রোপচার কক্ষে আব্দুল মান্নানের মাথায় অস্ত্রোপচার করেন চিকিৎসকরা।

আব্দুল মান্নানের নিকটতম আত্মীয় বাবু মিয়া ও মো. আবু বকর বলেন, অস্ত্রোপচারের পরের দিন থেকেই এই ঢাল সিঁড়িতে রোগী নিয়ে আছি। ভাই এখানে সমস্যার শেষ নেই। ঢাল সিঁড়িতে জায়গা পেয়েছি, আলহামদুলিল্লাহ। এই সিঁড়ি দিয়ে প্রতিদিনই শত শত রোগী ওঠানামা করেন। এর মাঝেই চিকিৎসা নিতে হচ্ছে। আমাদের মতো আরও অনেক রোগী এখানে আছেন।

তারা বলেন, আজ সকালে ২০০ নম্বর ওয়ার্ড থেকে লোকজন এসে রোগী আব্দুল মান্নানের ড্রেসিং করেছেন। ড্রেসিংয়ের ময়লা রোগীর মাথার কাছে রেখেই তারা চলে যান। চিকিৎসক আজ ছাড়পত্র দিয়েছেন রোগীকে।

তারা আরও অভিযোগ করেন, ভাই এখানে সব কিছুতেই টাকা লাগে। টাকা ছাড়া কিছু হয় না। অস্ত্রোপচারের রুমে টাকা লেগেছে, এ ছাড়া ওষুধ এনে দিয়েছি প্রায় ১০ হাজার টাকার মতো। সকালে যারা ড্রেসিং করতে এসেছিলেন, তাদেরও টাকা দিতে হয়েছে।

সন্ধ্যা ৭টার দিকে রোগী আব্দুল মান্নান স্বজনদের সঙ্গে দেশের বাড়ি পটুয়াখালীর উদ্দেশ্যে রওনা দেন।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কর্মকর্তা জানান, হাসপাতালে আসন সংখ্যার চেয়ে প্রায় তিন গুণ রোগী এখানে ভর্তি রেখে চিকিৎসা দেওয়া হয়। ভর্তির সময় কখনই আসন খালি থাকে না। রোগীদের অবস্থার কথা চিন্তা করে মেঝেতে রেখেও চিকিৎসা দেওয়া হয়।

তিনি বলেন, তাই বলে ময়লার পাশে শুয়ে রোগীরা চিকিৎসা নেবেন, এটি মেনে নেওয়া যায় না। তাও আবার অন্যান্য ময়লার পাশাপাশি রোগীর ড্রেসিং করার আবর্জনা ঘণ্টার পর ঘণ্টা সেখানে পড়েছিল। এসব থেকে বিভিন্ন রোগ ছড়াতে পারে।  

ড্রেসিংয়ের আবর্জনা ফেলার জন্য হাসপাতালে আলাদা প্লাস্টিকের জার আছে। হাসপাতাল পরিষ্কারের জন্য চতুর্থ শ্রেণীর পাশাপাশি দৈনিক মজুরিতে নিয়োগ করা লোকজন আছে। যারা তদারকি করে থাকেন, তাদের গাফিলতির কারণেই মেঝেতে ময়লা পরে থাকে বলে মনে করেন তিনি।

বিষয়টি ঢাকা মেডিকেল হাসপাতাল পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. নাজমুল হককে জানানো হলে, তিনি দ্রুত হাসপাতালে দায়িত্বরত লোকজনকে জায়গাটি পরিষ্কার করতে এবং রোগীকে ভালো জায়গায় দিতে নির্দেশ দেন।  

জায়গাটি পরিষ্কার হয়, কিন্তু ততক্ষণে রোগী ছাড়পত্র নিয়ে চলে যান।

বাংলাদেশ সময়: ২১৩০ ঘণ্টা, আগস্ট ৮, ২০২৩
এজেডএস/আরএইচ 

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।