ঢাকা, রবিবার, ১৪ পৌষ ১৪৩১, ২৯ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৬ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

জাতীয়

স্বরূপকাঠিতে বলাৎকারের অভিযোগে এক ব্যক্তিকে ঝুলিয়ে নির্যাতন

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট  | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৮৪৩ ঘণ্টা, আগস্ট ১০, ২০২৩
স্বরূপকাঠিতে বলাৎকারের অভিযোগে এক ব্যক্তিকে ঝুলিয়ে নির্যাতন আহত জাকির হোসেন

পিরোজপুর: পিরোজপুরের নেছারাবাদে (স্বরূপকাঠি) দ্বিতীয় শ্রেণির এক মাদরাসা ছাত্রকে বলাৎকারের অভিযোগে মো. জাকির হোসেন (৫২) নামে এক ব্যক্তিকে পা বেঁধে ঝুলিয়ে নির্যাতন করা হয়েছে।

বুধবার (৯ আগস্ট) উপজেলার আটঘর-কুড়িয়ানা ইউনিয়নের ৯ নম্বর ওয়ার্ডের উত্তর মাহমুদকাঠি গ্রামে এ ঘটনা ঘটে।

 

জানা গেছে, ওই গ্রামের মো. জাকারিয়ার মাদরাসা পড়ুয়া (৯) ছেলেকে একই এলাকার দিনমজুর জাকির হোসেন বিভিন্ন সময় নানা প্রলোভন দেখিয়ে বলাৎকার করে আসছিলেন। ছেলেটি সপ্তাহখানেক আগে ঘটনাটি
তার পরিবারকে জানায়। এ নিয়ে পরিবারের সদস্যরা বিষয়টি এলাকার কয়েকজন গণ্যমান্য ব্যক্তিদের কাছে জানিয়ে বিচার দাবি করেন।  

তারা এ ব্যাপারে কোনো পদক্ষেপ না নিলে শিশুটির পরিবার ক্ষিপ্ত হয়ে গত তিনদিন ধরে জাকিরকে মারার জন্য খুঁজতে থাকে। জাকির তাদের ভয়ে বিভিন্ন স্থানে লুকিয়ে থাকেন।

বুধবার (৯ আগস্ট) ভোর রাতে জাকির ভয়ে তাদের বাড়ি সংলগ্ন মাহমুদকাঠি ইছামউদ্দিন মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে আশ্রয় নেয়। সকালে খবর পেয়ে শিশুটির বাবা জাকারিয়া ও দাদা মো. মোস্তফা ওই বিদ্যালয়ে গিয়ে জাকিরকে তালাবদ্ধ করে রাখেন। জাকির নিজেকে রক্ষার্থে জানালা ভেঙে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টাকালে শিশুটির বাবা জাকারিয়া ও দাদা মোস্তফা সেখান থেকে জাকিরকে বের করে দুই পা বেঁধে বিদ্যালয়ের বারান্দায় ঝুলিয়ে পিটিয়ে আহত করেন।  

এসময় জাকারিয়ার স্ত্রী শিমু বেগম তার স্বামী ও শ্বশুরকে থামাতে এগিয়ে গেলে লাঠির আঘাতে তিনিও আহত হন। পরে স্থানীয়রা আহত জাকিরকে চিকিৎসার জন্য উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যান।  

এ ব্যাপারে জাকারিয়ার সঙ্গে মোবাইলে যোগাযোগ করলে তিনি তার স্ত্রীকে চিকিৎসা করাতে বরিশালে আছেন বলে জানান।

শিশুটির দাদা মো. মোস্তফা জাকিরকে নির্যাতনের কথা স্বীকার করে বলেন, জাকির খুব খারাপ লোক কেউ তার বিচার না করায় আমরা তাকে মেরেছি। তাকে মারার সময় আমার পুত্রবধূ আঘাতপ্রাপ্ত হয়েছেন।

এদিকে নির্যাতনের শিকার জাকির হোসেন শিশুটিকে বলাৎকারের অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, আমি শিশুটিকে আদর করেছি মাত্র। মিথ্যা অভিযোগ দিয়ে জাকারিয়া ও তার বাবা আমাকে অমানুষিক নির্যাতন করেছে।

এ ব্যাপারে মাহমুদকাঠি ইছামউদ্দিন মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. তৌফিকুজ্জামান জানান, যে লোকটিকে নির্যাতন করা হয়েছে সে আমার বিদ্যালয়ের কোনো স্টাফ না। তাকে উদ্দেশ্য করে আমার বিদ্যালয়ে তালা মারা এবং বিদ্যালয়ে বেঁধে নির্যাতন করা নিন্দনীয়। আমি বিষয়টি বিদ্যালয়ের পরিচালনা পর্ষদকে জানিয়েছি এ ব্যাপারে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য।

ঘটনার বিষয়ে আটঘর-কুড়িয়ানা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মিঠুন হালদারের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, কয়েকদিন ধরে আমি ঢাকায় ছিলাম। আজ বাড়িতে এসে ঘটনাটি শুনে ওই এলাকায় যাই। উভয় পরিবারের সঙ্গে কথা বলেছি। এ ধরনের ঘটনার বিচার করা আমাদের এখতিয়ারের বাইরে। জাকির যদি শিশুটিকে বলাৎকার করে থাকে সেটি নিন্দনীয়, সেজন্য পুলিশের মাধ্যমে জাকিরকে বিচারের
আওতায় আনা যেত। কিন্তু তাকে এভাবে অমানুষিক নির্যাতন করাটা মোটেই ঠিক হয়নি।

বাংলাদেশ সময়: ০৮৪২ ঘণ্টা, আগস্ট ১০, ২০২৩
আরএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।