ঢাকা, মঙ্গলবার, ৯ পৌষ ১৪৩১, ২৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ২১ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

জাতীয়

পাঁচ ছেলের ঘরে মেলেনি ঠাঁই, মা-বাবাকে আশ্রয় দিলেন বিধবা মেয়ে 

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৯১২ ঘণ্টা, আগস্ট ২৫, ২০২৩
পাঁচ ছেলের ঘরে মেলেনি ঠাঁই, মা-বাবাকে আশ্রয় দিলেন বিধবা মেয়ে 

সিরাজগঞ্জ: পাঁচ ছেলে রয়েছে সিরাজগঞ্জের ৮৬ বছরের বৃদ্ধ হামিদ মোল্লা ও তার ৭৭ বছর বয়সী স্ত্রী ফজিলা খাতুনের। এরপরও তাদের ঠাঁই মেলেনি কোনো ছেলের ঘরেই।

 

মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে ছেলেরা। এ সুযোগে বৃদ্ধ দম্পতিকে কবরস্থানের পাশে ফেলে রেখে যায় পুত্রবধূ।

তবে অসহায় বাবা-মাকে ফেলে দিতে পারেননি স্বামীহারা অসহায় বিধবা মেয়ে। তার অভাব-অনটনের সংসারে ঘরে কোনোমতে ঠাঁই মিলেছে বৃদ্ধ-বৃদ্ধার।

চৌহালী উপজেলার দুর্গম উমারপুর ইউনিয়নের হাপানিয়া গ্রামের বাসিন্দা হামিদ মোল্লা ও ফজিলা খাতুন।  

স্থানীয়রা জানান, উপজেলার বাঘুটিয়া ইউনিয়ন সদর সংলগ্ন সম্ভুদিয়া জান্নাতুল বাকি কবরস্থানের সামনে ওই বৃদ্ধ দম্পতিকে ফেলে রেখে যাওয়া হয়। কবরস্থানের পাশে ফেলে রাখা হয়েছে এমন খবর পেয়ে তাদের বিধবা মেয়ে মনোয়ারা খাতুন তাদের উদ্ধার করে নিয়ে যান।

এ খবর শুনে ওই বৃদ্ধ দম্পত্তির পাশে দাঁড়িয়েছেন চৌহালী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মাহবুব হাসান। শুক্রবার (২৫ আগস্ট) তিনি তাদের হাতে নগদ অর্থ সহায়তা তুলে তেন।

বাংলানিউজকে তিনি বলেন, বৃদ্ধ বাবা-মাকে ফেলে রেখে গেছে সন্তানেরা বিষয়টি জানার পর চেয়ারম্যানের সাথে কথা বলে তাদেরকে সবরকম সহায়তা করতে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। খুব শিগগিরই তাদের একটি ঘর তুলে দেওয়া হবে। বৃদ্ধ বাবা-মাকে ভরণপোষণ না করায় ছেলেদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য পুলিশকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

জানা যায়, হামিদ-ফজিলা দম্পতির পাঁচ ছেলের মধ্যে প্রথমজন বাশার জুটমিল শ্রমিক, দ্বিতীয় ছেলে জাহাঙ্গীর ও তৃতীয় ছেলে কহিনূর রিকশাচালক, চতুর্থ ছেলে সাঈদ জুটমিলের কর্মচারী এবং ছোট ছেলে বুদ্ধু ট্রান্সপোর্টে কাজ করেন।  

এই পাঁচ ভাই দীর্ঘদিন ধরে ভাগাভাগি করে বৃদ্ধা বাবা-মার ভরণপোষণ করে আসছিলেন।

কিন্তু যমুনার ভাঙনে তাদের বসতভিটা নদীগর্ভে চলে যাওয়ায় ছেলেরা যার যার মতো বিভিন্ন স্থানে গিয়ে সংসার পাতেন। তখন থেকেই বুড়ো বাবা-মার প্রতি অবহেলা শুরু হয়। কে তাদের ভরণপোষণের দায়িত্ব নেবে এ নিয়ে পাঁচ ভাই ও তাদের স্ত্রীদের মধ্যে টানাপোড়ন চলতে থাকে। চলে দেনদরবার। কিন্তু সর্বশেষ কোথাও ঠাঁই হয়নি বাবা- মায়ের।

বৃদ্ধ দম্পতি ও স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, মানিকগঞ্জে তৃতীয় ছেলে কহিনূরের বাড়িতে থাকতেন তারা। যমুনার ভাঙনের কারণে প্রায় ২ মাস আগে কহিনূরের স্ত্রী হাঁপানিয়া চরে পাঠিয়ে দেন শ্বশুর-শাশুড়িকে। সেখানে ভাগ্নের বাড়িতে বেশ কিছুদিন আশ্রয় পেয়েছিলেন বৃদ্ধ হামিদ মোল্লা দম্পত্তি। তবে কিছুদিন যেতে না
যেতেই তারাও অবহেলা করতে থাকে। এক পর্যায়ে কয়েকদিন আগে বৃদ্ধ দম্পত্তির মেয়ের বাড়ির সংলগ্ন সম্ভুদিয়া কবরস্থানে কাউকে না জানিয়ে রেখে যায় স্বজনেরা।

কবরস্থানের পাশে বৃদ্ধ দম্পত্তির কান্নাকাটি দেখে স্থানীয়রা তাদের সঙ্গে কথা বলে জানতে পারেন পাশেই তার মেয়ের বাড়ি রয়েছে। মেয়ে মনোয়ারা খাতুন খবর পেয়ে বাবা- মাকে উদ্ধার করে নিয়ে যান।

মনোয়ারা খাতুন বলেন, বৃদ্ধ বাবা-মাকে উদ্ধার করে আমার বাড়িতে নিয়ে এসেছি। কিন্তু আমি নিজে স্বামীহারা। সন্তানদের সংসারে থাকি। এ অবস্থায় বাবা-মার দেখাশোনা করা আমার পক্ষে খুবই কষ্টকর।  

তিনি বলেন, বাবার যা সম্পদ ছিল আমার পাঁচ ভাই বিক্রি করে দিয়েছে।

বাংলাদেশ সময়: ১৯০৩ ঘণ্টা, আগস্ট ২৫, ২০২৩
এসএএইচ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।