ঢাকা, মঙ্গলবার, ১১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ২৪ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

জাতীয় নির্বাচনের আগে ভোটকেন্দ্র পরিবর্তনের চেষ্টা, ক্ষুব্ধ ভোটাররা

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২১৩৮ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ৯, ২০২৩
জাতীয় নির্বাচনের আগে ভোটকেন্দ্র পরিবর্তনের চেষ্টা, ক্ষুব্ধ ভোটাররা

সিরাজগঞ্জ: স্বাধীনতার পর থেকে কল্যাণপুর রওশনিয়া দাখিল মাদরাসা কেন্দ্রে ভোট দিয়ে আসছেন সিরাজগঞ্জের বেলকুচি উপজেলার ধুকুরিয়া বেড়া ইউনিয়নের চার গ্রামের মানুষ। জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে একটি বেনামি আবেদনে সেই কেন্দ্র পরিবর্তন করা হচ্ছে- এমন খবরে উদ্বিগ্ন এখানকার ভোটাররা।

তারা গণস্বাক্ষর দিয়ে কেন্দ্র পরিবর্তন না করার জন্য বিভিন্ন দপ্তরে আবেদন করছেন।  

কল্যাণপুরসহ উপজেলার তিন ইউনিয়নের চারটি ভোটকেন্দ্র পরিবর্তনের আবেদন করা হয়েছে। বাকি কেন্দ্রগুলো হলো- রাজাপুর ইউনিয়নের বড় বেড়া খারুয়া পরিবর্তন করে বাগ বয়ড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও সমেশপুর প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রের পরিবর্তে সমেশপুর উচ্চ বিদ্যালয়।  

শনিবার (৯ সেপ্টেম্বর) সরেজমিনে জানা যায়, কল্যাণপুর রওশনিয়া দাখিল মাদরাসা কেন্দ্রে ২ নম্বর ওয়ার্ডের কল্যাণপুর, মবুপুর, সর্বতুলশী ও ধুলদিয়ার গ্রামের ভোটাররা দীর্ঘদিন ধরে ভোট দিয়ে আসছেন। এর মধ্যে কল্যাণপুরে ২১০০, মবুপুরে ১৭শ সর্বতুলশীতে প্রায় এক হাজার ও ধুলদিয়ার গ্রামে ভোটার সংখ্যা ২৩শ। তিন গ্রামের ভোট প্রায় ৪৮০০। আর ধুলদিয়ারে ভোটার সংখ্যা ২৩শ। মোট ভোটার সংখ্যা সাত হাজারের উপরে। প্রস্তাবিত কেন্দ্র ধুলদিয়ার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে গিয়ে দেখা যায়, পাকা সড়ক থেকে প্রায় দুশ মিটার পায়ে হাঁটা রাস্তার পর ফাঁকা জায়গায় তিনটি কক্ষ বিশিষ্ট বিদ্যালয় ভবন।  

অজিত কুমার মণ্ডল গং কেন্দ্রটি পরিবর্তনের জন্য আবেদন করেছেন। তবে ধুলদিয়ার গ্রামে ওই নামের কোনো ব্যক্তিকে পাওয়া যায়নি। মবুপুর গ্রামে অজিত নামে একজন কৃষক থাকলেও তিনি নিজেকে নিরক্ষর দাবি করে বলেন, আমি  কি করে কেন্দ্র পরিবর্তনের আবেদন করবো।  

স্থানীয় কালু প্রামাণিক, আব্দুল কাদের, আলেয়া খাতুন, আনোয়ার হোসেন ও রেজাউল করিমসহ স্থানীয় অর্ধশতাধিক মানুষের সঙ্গে কথা বললে তারা কেন্দ্র পরিবর্তনের ঘোর বিরোধিতা করেন। প্রয়োজনে কঠোর আন্দোলন করবেন বলে জানান তারা।  

ধুকুরিয়া বেড়া ইউনিয়নের ২ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য বরকত আলী বলেন, তিন গ্রামের ৪৮শ মানুষ ছাড়াও ধুলদিয়ার গ্রামেরও প্রায় চারশ ভোটারের দাবি পূর্বের স্থানেই যাতে কেন্দ্র থাকে। প্রস্তাবিত ওই কেন্দ্রে যাতায়াত চরম সমস্যার সৃষ্টি হবে। এমনকি নির্বাচনী মালামাল নেওয়াও কষ্টকর হবে।  

তিনি বলেন, বেনামি দরখাস্ত করে কেন্দ্রটি সরানোর পাঁয়তারা করা হচ্ছে। তবে আগের স্থানে কেন্দ্র রাখতে তিনজন আবেদন করেছেন, এসব আবেদনে গ্রামের ভোটাররা গণস্বাক্ষর দিয়েছেন। রোববার নির্বাচন অফিসার ও জেলা প্রশাসক বরাবর গণস্বাক্ষরসহ আবেদন দাখিল করা হবে।  

ধুলদিয়ার গ্রামের মো. আনোয়ার হোসেন বলেন, প্রস্তাবিত কেন্দ্রটি আমার গ্রামে হলেও সেখানে যাওয়া আমাদের জন্য অনেক কষ্টকর তাই আগের স্থানেই কেন্দ্র বহাল চাই। এ বিষয়ে ধুলদিয়ার গ্রামের লোকজনের গণস্বাক্ষর নিয়ে একটি লিখিত আবেদন রোববার জমা দেব।  

এদিকে রাজাপুর ইউনিয়নের বড় বেড়া খারুয়া দাখিল মাদরাসা কেন্দ্রটি পরিবর্তন করে বাগ বওড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে নেওয়ার জন্য আবেদন করেছেন ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বাবু সরকার।  

বেড়া খারুয়া গ্রামের আনোয়ার হোসেন, বাকী শেখ, আবু সাঈদ ও মো. তিতাশ বলেন, বড় বেড়া খারুয়া গ্রামে ভোট সংখ্যা ১২শ ও বাগ বওড়া গ্রামে ৩৭৫ ভোট। আওয়ামী লীগের সেক্রেটারি হয়ে বাবু সরকার ১২শ ভোটারকে বিপাকে ফেলে তার গ্রামে কেন্দ্র নিতে চাচ্ছে। আমাদের গ্রামের লোক কখনো ওই দুর্গম এলাকায় ভোট দিতে যাবে না।  

রাজাপুর ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান সোনিয়া সবুর আকন্দ বলেন, মাত্র ৩৭৫ ভোটের জন্য ভোটকেন্দ্র পরিবর্তন করা ঠিক হবে না। বৃহৎ জনগোষ্ঠীর সুবিধার্থে আগের স্থানেই ভোটকেন্দ্র রাখার দাবি জানাচ্ছি।  

এ প্রসঙ্গে স্থানীয় আবেদনকারী বাবু সরকার বলেন, আমার গ্রামের লোকজনের স্বাক্ষর নিয়ে আমি ভোটকেন্দ্র পরিবর্তনের আবেদন করেছি।  

উপজেলা নির্বাচন অফিসার মো. রায়হান কুদ্দুস বলেন, আমরা তিনটি কেন্দ্র পরিবর্তনের আবেদন পেয়েছি। রোববার জেলা প্রশাসক কার্যালয়ে শুনানি রয়েছে। শুনানি শেষে ভোটকেন্দ্র কমিটি এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেবে।

বেলকুচি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) শিবানী সরকার বলেন, ভোটকেন্দ্র পরিবর্তনের আবেদন পাওয়ার পর কমিটি সংশ্লিষ্ট কেন্দ্র পরিদর্শন করে একটি তদন্ত প্রতিবেদন তৈরি করেছেন। রোববার উভয়পক্ষকে নিয়ে শুনানি শেষে সিদ্ধান্ত জানানো হবে।  

বাংলাদেশ সময়: ২১৩৪ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ০৯, ২০২৩
আরএ 

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।