বান্দরবান: বান্দরবানে এক নাগাড়ে দীর্ঘ সময় বিদ্যুৎ না থাকায় গরমে সাড়ে তিন হাজার ব্রয়লার মুরগি মারা গেছে। এতে এক খামারি ১০ লাখ টাকা ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছেন।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, বান্দরবান সদর উপজেলার কুহালং ইউনিয়নের ৯ নম্বর ওয়ার্ডের শংকর ব্রয়লার ফার্ম অ্যান্ড হ্যাচারিতে দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে সকাল থেকে। ফার্মের প্রবেশ মুখে মাটিতে পড়ে রয়েছে অসংখ্য মৃত ব্রয়লার মুরগি। আর মুরগির এমন মৃত্যুতে নির্বাক শংকর ব্রয়লার ফার্ম অ্যান্ড হ্যাচারি স্বত্বাধিকারী শংকর দাশ (টিকলু)।
শংকর ব্রয়লার ফার্ম অ্যান্ড হ্যাচারি স্বত্বাধিকারী শংকর দাশ (টিকলু) জানান, সোমবার (১১ সেপ্টেম্বর ) দিবাগত রাত ১০টা থেকে মঙ্গলবার (১২ সেপ্টেম্বর) ভোর ৬টা পর্র্যন্ত বান্দরবান সদর উপজেলার কুহালং ইউনিয়নে বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ ছিল, আর দীর্ঘ সময়ে ভয়াবহ বিদ্যুৎ বিপর্যয়ের কারণে গরমে ফার্মের তিন হাজার পাঁচশ মুরগি মারা গেছে।
শংকর ব্রয়লার ফার্ম অ্যান্ড হ্যাচারি স্বত্বাধিকারী শংকর দাশ (টিকলু) আরও জানান, ২০১৮ সাল থেকে বান্দরবানের কুহালং ইউনিয়নের ৯ নম্বর ওয়ার্ডে ব্রয়লার মুরগি পালনের উদ্দেশে একটি খামার তৈরি করি। দীর্ঘদিন ভালোভাবে ব্যবসা করতে পারলেও করোনার কারণে যোগাযোগব্যবস্থা প্রায় বন্ধ থাকায় ছয় লাখ টাকার ক্ষতি হয়ে যায়। আবার রানীক্ষেত রোগের প্রাদুভার্বে আট লাখ টাকার ক্ষতি হয়। আগস্ট মাসে বান্দরবানে সৃষ্ট বন্যায় ২ হাজার ৫শমুরগি মারা যায়, সেই সময় ১০ লাখ টাকা ক্ষতি হয় এবং সর্বশেষ বিদ্যুৎ না থাকায় অতিরিক্ত গরমে হিট স্ট্রোক করে তিন হাজার পাঁশ মুরগির মৃত্যু হয়েছে আর এতে নতুন করে আবার ১০ রাখ টাকার ক্ষতির মুখোমুখি হয়েছি।
শংকর জানান, কয়েক দফা লোকসানে আমার সব শেষ হয়ে গেছে। বিভিন্ন এনজিও সংস্থা থেকে ঋণ নিয়েছি আবার সর্বশেষ নিজের সব স্বর্ণালংকার বন্ধক রেখে স্বর্ণের দোকান থেকে টাকা সংগ্রহ করে ব্যবসা শুরু করেছি, কিন্তু এবারের লোকসানে আমার সবশেষ।
এদিকে বিদ্যুৎ না থাকায় অতিরিক্ত গরমে বিপুল সংখ্যক ব্রয়লার মুরগি মারা যাওয়ার খবর পেয়ে ঘটনাস্থল পরিদর্শনে যান কুহালং ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মংপু মারমা।
চেয়ারম্যান মংপু মারমা বলেন, কুহালং ইউনিয়নের অসংখ্য খামার গড়ে ওঠছে আর এই খামারগুলোতে নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ প্রয়োজন। বিদ্যুৎ সরবরাহ স্বাভাবিক না থাকলে খামারিদের এমন ক্ষতি আরও বাড়বে।
বান্দরবান জেলা পোল্টি ফার্মাস অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মো. আব্বাস উদ্দিন বলেন, বান্দরবানে আমাদের একটি সমিতি রয়েছে আর সমিতিতে সদরের প্রায় ৬০টি ব্রয়লার খামার ব্যবসায়ী অন্তর্ভূক্ত রয়েছে।
তিনি আরও বলেন, বান্দরবানে মরার ওপার খরার ঘায়ের মত ব্রয়লার ব্যবসায়ীদের জীবন। একে একে ব্রয়লার মুরগির খাবারের দাম বাড়ছে আর তার ওপর বন্যায় বিপুল ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে খামারে আর সর্বশেষ বিদ্যুতের ভয়াবহ লোডশেডিং অসংখ্য মুরগির মৃত্যুতে ব্যবসায়ীরা নিঃস্ব হয়ে যাচ্ছে। বান্দরবান জেলা পোল্টি ফার্মাস অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মো. আব্বাস উদ্দিন আরও বলেন, বান্দরবানে অসংখ্য পোল্টি গড়ে ওঠলেও প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তারা খামারিদের পাশে থাকে না, প্রাণীসম্পদ কর্মকর্তা খামারিদের কোন কাজেই আসে না।
এদিকে বান্দরবান সদর উপজেলার উপ সহকারী প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা (সম্প্রসারণ) ও উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা (ভা.প্রা) আলোক কুমার চক্রবত্তী জানান, বান্দরবান সদরে নিবন্ধিত ৩৩টি ও অনিবন্ধিত ৪০টি ব্রয়লার খামার রয়েছে। বিদ্যুতৎ না থাকায় অতিরিক্ত গরমে বান্দরবান সদর উপজেলার কুহালং ইউনিয়নের ৯ নম্বর ওয়ার্ডে শংকর ব্রয়লার ফার্ম অ্যান্ড হ্যাচারিতে তিনহাজার পাঁচশ’ মুরগির মৃত্যু হয়েছে স্বীকার করে তিনি বলেন, ক্ষতিগ্রস্ত ব্রয়লার খামার পরিদর্শন করা হয়েছে এবং ক্ষয়ক্ষতি সঠিকভাবে নিরুপণ করে ্র্ধতন কর্মকর্তাদের বিষয়টি জানানো হবে ।
প্রসঙ্গত : গত ১১সেপ্টেম্বর (সোমবার) রাতে বান্দরবান-কেরানীহাট সড়কের বায়তুল ইজ্জত নামক স্থানে বিদ্যুতের ৩৩ কেভি লাইনের ওপর একটি গাছ ভেঙ্গে পড়ে বান্দরবান জেলা সদরের বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ হয়ে যায়। আর মুল বিদ্যুৎ সরবরাহ লাইন বন্ধ থাকার কারনেপুরো বান্দরবান রাত ১০টা থেকে ভোর ৫টা পর্যন্ত অন্ধকারে নিমজ্জিত হয়ে থাকে।
বাংলাদেশ সময়: ২০২৬ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ১২, ২০২৩
আরএ