ঢাকা: ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে বিষপানে এক ব্যক্তির মৃত্যুর পরপরই লাশ হাসপাতাল থেকে বের করে দেওয়ার জন্য ২৫ হাজার টাকা দাবি করা হয়েছে নিহত ব্যক্তির স্বজনের কাছে।
এ নিয়ে বিকেল থেকে হাসপাতালের প্রশাসনিক ব্লকে তোলপাড় শুরু হয়।
সোমবার (১৮ সেপ্টেম্বর) বিকেলের দিকে হাসপাতালের নতুন ভবনে ৬০১ নম্বর ওয়ার্ডে এই টাকা চাওয়ার ঘটনা ঘটে।
রাজধানীর বনানী সাততলা টেম্পু স্ট্যান্ড এলাকার অস্থায়ী বাসিন্দা রিকশাচালক সাইফুল মণ্ডল (৪০) ইঁদুর নিধনের বিষ পান করেন। পরে তার আত্মীয়রা মুমূর্ষু অবস্থায় সাইফুলকে দুপুরের দিকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগে নিয়ে আসেন। সেখানে চিকিৎসকের নির্দেশক্রমে তার পাকস্থলী ওয়াশের পর নতুন ভবনের ৬০১ নম্বর ওয়ার্ডে পাঠানো হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে সাইফুল মারা যান। নিয়ম অনুযায়ী সাইফুলের মৃত্যুর ডেথ সার্টিফিকেটে পুলিশ কেস লেখা হয়। মানে পুলিশের শরণাপন্ন হয়ে লাশ নিতে হবে। এটাই হাসপাতালের স্বাভাবিক নিয়ম।
ওই ব্যক্তির মৃত্যুর কিছুক্ষণ পরেই ৬০১ ওয়ার্ডে লাশের পাশে হাজির হন এক ব্যক্তি। নিহত সাইফুলের বোন জামাই আমিনুর ইসলামকে ওই ব্যক্তি বলতে থাকেন, এটা পুলিশ কেস কারণ বিষ পান করে মারা গেছেন। এ কারণে আপনারা সহজে লাশ নিতে পারবেন না। নিয়ম অনুযায়ী লাশ নিতে হলে ৭-৮ দিনও লেগে যেতে পারে। তাছাড়া আপনাদের এই লাশ নেওয়ার ব্যাপারে ৫-৬টা থানা ঘুরতে হবে। একপর্যায়ে দেখা যাবে যে আপনি নিজেও মামলা খেয়ে যেতে পারেন।
এসব কথা ওই ব্যক্তির কাছ থেকে শোনার পরে একটু ঘাবড়ে যান বোন জামাই আমিনুর। তারপরে ওই ব্যক্তির কাছে জানতে চান তাহলে লাশ নেওয়ার উপায় কি? তখন ওই ব্যক্তি জানান, ২৫ হাজার টাকা আমাকে দেন, নতুন করে কাগজ তৈরি করি এক ঘণ্টার মধ্যে লাশ নিয়ে যাবেন। সরকারি কাগজ ছিঁড়ে ফেলা হবে। নতুন কাগজ তৈরি করা হবে।
এই কথা শোনার পরে আমিনুর ইসলামের কিছুটা সন্দেহ হয়। পরে টাকা চাওয়ার বিষয়টি হাসপাতাল পরিচালককে জানানো হয়। এর পরপরই হাসপাতালে প্রশাসনিক ব্লকে তোলপাড় শুরু হয়ে যায়। ওই ওয়ার্ডের সব কর্মচারীকে ডেকে আনেন হাসপাতাল পরিচালক।
হাসপাতাল পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. নাজমুল হক ওই ওয়ার্ডের দায়িত্বরত কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের অফিস রুমে ডেকে এনে বলতে থাকেন, লাশ ছাড়িয়ে নেওয়ার জন্য ২৫ হাজার টাকা দাবি করেছে কে? সেই ব্যক্তিকে যদি আপনারা খুঁজে বের না করেন, তাহলে আপনাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এদিকে হাসপাতাল থেকে একটি সূত্র জানায়, হাসপাতালের প্রতিটা ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে প্রাইভেট অ্যাম্বুলেন্স মালিকদের পক্ষ থেকে বেতনভুক্ত কর্মচারীরা থাকে। কেউ মারা গেলেই তারা লাশের সামনে হাজির হয়। হাসপাতালে বিভিন্ন কাগজপত্র ঠিক করার নাম করে তারা লাশের স্বজনদের সঙ্গে যোগাযোগ করে ফেলেন। হতে পারে আজকের ঘটনাটি প্রাইভেট অ্যাম্বুলেন্সদের পক্ষের লোকজনই করেছে। তাছাড়া ওয়ার্ডে থাকা ওইসব লোকদের (দালাল) সরকারি কর্মচারীরা এমন কেউ নেই যে চেনে না, কারণ এসব ঘটনায় তাদেরও স্বার্থ থাকে।
বাংলাদেশ সময়: ০০৩৫ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ১৯, ২০২৩
এজেডএস/আরএ