চুয়াডাঙ্গা: নিয়ম ছিল, পাথরের ঢালাইয়ে নির্মাণ হবে সরকারি চারতলা ভবন। কিন্তু সেখানে ব্যবহৃত হয়েছে ইটের খোয়া।
১৫ মাসে কাজ শেষ হওয়ার কথা থাকলেও পাঁচ বছরেও শেষ হয়নি সাড়ে চার কোটি টাকা ব্যয়ের এ ভবনটি।
এরই মধ্যে শেষ হয়েছে সংশ্লিষ্ট দপ্তরের গঠিত তিন সদস্যের তদন্ত কাজ। তদন্ত কমিটির সদস্যরা সুপারিশ করে ভবনের কাজ পুনরায় শুরু করার তাগিদ দেন। তাতেও কোনো সাড়া মেলেনি। তবে দ্রুতই ভবনের বাকি কাজ শুরু হবে বলে আশ্বাস কর্মকর্তাদের।
এদিকে নিজস্ব ভবন না থাকায় চুয়াডাঙ্গা জেলা প্রশাসকের কার্যালয় চত্বরের জরাজীর্ণ একটি ভবনে আশ্রয় নিয়েছেন জেলা পরিবার-পরিকল্পনা কার্যালয়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। দুটি কক্ষে গাদাগাদি করে প্রতিদিন অফিস করেন ১৫ কর্মকর্তা-কর্মচারী। নাজুক ওই কক্ষে কাজ করতে গিয়ে প্রতিনিয়ত দুর্ঘটনার শিকার হতে হয় তাদের।
কর্মীরা জানিয়েছেন, ছাদ ও দেয়ালের পলেস্তারা খসে পড়ছে। টেবিল চেয়ার ও আলমারি রাখার জায়গা নেই। গুরুত্বপূর্ণ ফাইলপত্র অরক্ষিত অবস্থায় পড়ে থাকে। কদিন আগেও ফ্যান খুলে পড়েছিল। যদিও বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটেনি। তবে যে কোনো সময় দুর্ঘটনার আশঙ্কা নিয়েই কাজ করতে হচ্ছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, একটি সরকারি জেলা অফিসের এমন দুর্দশা থেকে মুক্তি পেতে ২০১৮ সালের ২৯ মার্চ চুয়াডাঙ্গার পুরাতন হাসপাতালের জায়গায় জেলা পরিবার পরিকল্পনা ভবন নির্মাণ শুরু হয়। পাথরের ঢালাইয়ে চার কোটি ৬০ লাখ ৫৯ হাজার ৭০৯ টাকা ব্যয় ধরে চারতলা ভবনের কাজ শুরু হলেও তা চলে মাত্র সাত মাস। ইটের খোয়া ব্যবহার করায় কর্মকর্তাদের সঙ্গে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের দ্বন্দ্বে সে বছরের অক্টোবর মাসে বন্ধ হয়ে যায় নির্মাণ কাজ। এসময়ের মধ্যে প্রকল্পের এক কোটি নয় লাখ টাকা তুলে নেয় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান পিয়াস কনস্ট্রাকশন।
পাঁচ বছর ধরে খোলা আকাশের নিচে অযত্ন আর অবহেলায় পড়ে আছে নির্মাণাধীন সরকারি এ ভবন। অন্ধকার ভবিষ্যতে নষ্ট হচ্ছে কোটি কোটি টাকার সরকারি সম্পদ। মাদকসেবীদের অভয়ারণ্যে পরিণত হয়েছে ভবন প্রাঙ্গণ।
স্থানীয়রা জানান, দীর্ঘদিন পড়ে থেকে ভবনের রড, বালু-সিমেন্ট ও ভবনটি দুর্বল হয়ে পড়েছে। চোখের সামনে বছরের পর বছর পড়ে নষ্ট হলেও দেখা ছাড়া আর কোনো উপায় নেই। এখানে মাদকসেবীরা নিয়মিত মাদক সেবন করে। চলে বিভিন্ন ধরনের অসামাজিক কার্যকলাপ।
ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের কারচুপির বিষয়টি স্বীকার করেছেন পিয়াস কনস্ট্রাকশনের পরিচালক আব্দুস সালাম। তিনি জানান, ভুলবশত পাথরের পরিবর্তে ইটের খোয়ার ব্যবহার হয়েছে। বিষয়টি আগে তার জানা ছিল না। পরে জানাজানি হলে কাজ বন্ধ হয়ে যায়। তবে নতুনভাবে ভবনটির কাজ শুরু হতে যাচ্ছে। এজন্য প্রকল্পের মূল ব্যয় থেকে ২৫ লাখ টাকা কেটে নতুন কার্যাদেশে চার কোটি ৩৫ লাখ ৫৩ হাজার ৩৭৯ টাকা ধরা হয়েছে।
আর চুয়াডাঙ্গা-মেহেরপুর স্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের সহকারী প্রকৌশলী আব্দুল কাদেরের আশ্বাস, ভবনটি যাচাই ও তদন্ত প্রতিবেদনের পর নতুনভাবে কাজ নতুনভাবে শুরু হবে। এখন অপেক্ষা মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন পত্রের। অনুমোদন পেলেই শুরু হবে কাজ। সামনের মাসেই কাজ শুরু হতে পারে।
জেলা পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা এ বি এম শরিফুল হক বলেন, একটি সরকারি অফিসের নিজস্ব কোনো ভবন নেই, এটি অত্যন্ত দুঃখজনক। পুরোনো পরিত্যক্ত ভবনে ঠাঁই নিয়ে কাজ চালিয়ে যেতে হচ্ছে। এতে কাজের ব্যাঘাত ঘটছে। নতুন ভবন হস্তান্তর পেলে বাড়বে কাজের গতি। উপকৃত হবে জেলার মানুষ।
বাংলাদেশ সময়: ১৩৩৩ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২০, ২০২৩
এসআই