ঢাকা: মজুরি বোর্ডের মেয়াদ শেষ হয়ে গেলেও পোশাকশ্রমিকদের মজুরি প্রস্তাব না করে উল্টো সময় বাড়ানোর প্রতিবাদে বিক্ষোভ সমাবেশ ও মিছিল করেছে ১১টি গার্মেন্ট শ্রমিক সংগঠনের জোট ‘মজুরি বৃদ্ধিতে গামের্ন্ট শ্রমিক আন্দোলন’।
মঙ্গলবার (১০ অক্টোবর) জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে আয়োজিত সমাবেশ থেকে নেতৃবৃন্দ ১১ থেকে ২১ অক্টোবর সারা দেশে শ্রমিক অঞ্চলে সভা-সমাবেশ ও প্রচারণা কর্মসূচির ঘোষণা দেন।
একইসাথে কালক্ষেপণ না করে পোশাকশ্রমিকদের ন্যূনতম মজুরি ২৫ হাজার টাকা, ৬৫ শতাংশ বেসিক, ১০ শতাংশ ইনক্রিমেন্ট ও ৫ গ্রেডের দাবি বিবেচনায় নিয়ে দ্রুত মজুরি ঘোষণার দাবি জানান।
গার্মেন্ট শ্রমিক সংহতির সভাপ্রধান তাসলিমা আখতার এবং গার্মেন্ট শ্রমিক ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্রের সাধারণ সম্পাদক সাদেকুর রহমান শামীমের পরিচালনায় সমাবেশে বক্তব্য রাখেন গার্মেন্ট শ্রমিক ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্রের সাধারণ সম্পাদক সাদেকুর রহমান শামীম, গার্মেন্ট শ্রমিক সংহতির সহ-সভাপতি অঞ্জন দাস, বাংলাদেশ টেক্সটাইল গার্মেন্টস শ্রমিক ফেডারেশনের সভাপতি মাহবুবুর রহমান ইসমাইল, ওএসকে গার্মেন্টস অ্যান্ড টেক্সটাইল শ্রমিক ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক প্রকাশ দত্ত, গার্মেন্টস শ্রমিক ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক রাজু আহমেদ, গার্মেন্ট শ্রমিক ঐক্য ফোরামের সাধারণ সম্পাদক শহিদুল ইসলাম সবুজ, বিপ্লবী গার্মেন্ট শ্রমিক সংহতির কেন্দ্রীয় নেতা সাইফুল ইসলাম, গার্মেন্টস শ্রমিক মুক্তি আন্দোলনের সভাপতি শামীম ইমাম, জাতীয় সোয়েটার গার্মেন্টস ফেডারেশনের সভাপতি এ এম ফয়েজ হোসেন প্রমুখ।
সভায় বক্তারা বলেন, গতকাল ৯ অক্টোবর মজুরি বোর্ডের ৬ মাসের মেয়াদ শেষ হয়েছে। কোন রকম প্রস্তাব ছাড়াই ৩টি নিস্ফল বৈঠক করে ৪০ লাখ শ্রমিককে নিরাশ করেছে বোর্ড। আইনের সুবিধা নিয়ে তারা আবারও সময় বাড়িয়েছে। এই কালক্ষেপণ শ্রমিকদের জীবনের সাথে নিষ্ঠুর পরিহাস বলে তীব্র নিন্দা জানান শ্রমিক নেতারা।
মজুরি বোর্ডের কালক্ষেপণকে ইতিহাসের পুনরাবৃত্তি বলে অভিহিত করে শ্রমিক নেতারা বলেন, ২০১৮ সালেও মালিকপক্ষ কথা দিয়ে কথা রাখেনি। কিন্তু বর্তমান দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি ও মূল্যস্ফীতির এই কঠিন সময়ে বোর্ডের মেয়াদকালে নতুন মজুরি ঘোষণা না করা শ্রমিকের প্রতি চরম দায়িত্বহীনতার পরিচয়।
নেতৃবৃন্দ বলেন, আসন্ন জাতীয় নির্বাচনকালীন সময়ে দেশের পরিবেশ জটিল হয়ে উঠছে। এই ঘোলাটে সময়ে লামছাম মজুরি ধরিয়ে দেবার পাঁয়তারা করছে মালিকপক্ষ। এজন্যই কালক্ষেপণ। এতে মালিকদের আর্থিক সুবিধা বাড়লেও শ্রমিকরা চরম বিপর্যয়ের মধ্যে পড়বে।
তারা বলেন, নির্বাচনকালীন সময়ে মজুরি প্রক্রিয়া নিয়ে যাওয়া হয়েছে। এর প্রধান কারণ শ্রমিকরা ওই সময়ে ২৫ হাজার টাকার দাবিতে যাতে আন্দোলন যথাযথভাবে সংগঠিত করতে না পারে।
সম্প্রতি সিপিডির গবেষণায় ১৭,৫৬৮ টাকা মজুরি প্রস্তাবনা শ্রমিকদের জীবনকে মর্যাদাপূর্ণ দৃষ্টিতে দেখেনি বলে মত প্রকাশ করেন শ্রমিক নেতারা। তারা বলেন, শ্রমিক পরিবারে দুজন উপার্জনকারী ধরে এবং খাদ্য তালিকায় প্রাপ্তবয়স্কদের জন্য মাছ, মাংস ডিম না রেখে কোনোমতে একটি খাবার বাজেট করেছে তারা। সিপিডির গবেষণায় প্রতীয়মান হয়েছে, তারা শ্রমিককে কেবল কারখানার উৎপাদনের যন্ত্র এবং শ্রমিক হিসাবে বিবেচনা করেছে। শ্রমিকরা কম খাবে, কম পুষ্টি পাবে, সুচিকিৎসা পাবে না— এমন বিবেচনায় সিপিডি যে প্রস্তাবনা করেছে, সেটি শ্রমিকরা কখনো গ্রহণ করবে না।
বাংলাদেশ সময়: ১৭২৮ ঘণ্টা, অক্টোবর ১০, ২০২৩
এমজেএফ