ঢাকা, সোমবার, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ২৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

ত্রিশালে সড়ক দুর্ঘটনা: আপনজনদের হারিয়ে নির্বাক স্বজনরা

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৯১৯ ঘণ্টা, অক্টোবর ১১, ২০২৩
ত্রিশালে সড়ক দুর্ঘটনা: আপনজনদের হারিয়ে নির্বাক স্বজনরা

ময়মনসিংহ: ময়মনসিংহের ত্রিশালে সড়ক দুর্ঘটনায় পরিবারের আপনজনদের হারিয়ে নির্বাক হয়ে পড়েছেন স্বজনরা। এ সময় স্বজনদের আহাজারিতে ভারী হয়ে ওঠে সেখানকার আকাশ-বাতাস।

   

বুধবার (১১ অক্টোবর) সকাল সাড়ে ৭টায় ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের ত্রিশাল চেলেরঘাট এলাকায় এ দুর্ঘটনায় শোকাবহ পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়।

নিহতরা হলেন- ময়মনসিংহ সদরের চুরখাই এলাকার কামরুজ্জামান লিটন (২৮), ত্রিশাল দক্ষিণ তেঁতুলিয়া এলাকার জেসমিন আক্তার (৩০), নওপাড়া এলাকার সিরাজুল ইসলাম (২৮), ঈশ্বরগঞ্জের মারোয়াখালি এলাকার আলতাব হোসেন (৬০), ত্রিশালের রাগামারা আহেদ আলী ছেলে সোহেল মিয়া (৩৫) এবং অজ্ঞাত এক নারী। এর মধ্যে চারজন গার্মেন্ট কর্মী, একজন শ্রমিক এবং অন্যজনের পরিচয় এখনও জানা যায়নি।

জানা যায়, ত্রিশালের দক্ষিণ তেঁতুলিয়া এলাকার গার্মেন্ট কর্মী জেসমিন আক্তার (৩০) মাত্র ৬ মাস আগে এক কন্যা সন্তানের মা হয়েছেন। তবুও অভাবের সংসারে সহযোগিতার হাত বাড়াতেই গত তিন মাস আগে যোগ দিয়েছেন গার্মেন্টস ফ্যাক্টরিতে। প্রতিদিনের মত বুধবার সকালেও দুধের সন্তানকে বাড়িতে দাদি হালিমা খাতুনের কাছে রেখে জেসমিন গিয়েছিলেন কাজে। কিন্তু বাড়ি ফিরে এলেন লাশ হয়ে।  

নিহত জেসমিনের স্বামী ত্রিশাল উপজেলার কাঁঠাল ইউনিয়নের হদ্দের ভিটা গ্রামের মাহমুদুল হাসান এ তথ্য নিশ্চিত করে বলেন, অভাব-অনটনের সংসার আমাদের। সকালে আমাকে ডেকে ঘুম থেকে তুলে কাজে যায় জেসমিন। এ সময় আমি তাকে আজ কাজে না যেতে বলেছিলাম। কিন্তু জেসমিন বলেছিল- আজ বেতন দিতে পারে, বিকেল ৫টার আগেই চলে আসব। এই কথা বলে সে বের হয়ে যায়। কিন্তু সে আইলো লাশ অইয়া। আমার দুধের মেয়েডার অহন কি অইবো, ও কেমনে বাঁচবো মা ছাড়া, বলেই সে কান্নায় ভেঙে পড়েন তিনি।    

একই অবস্থা সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত হওয়া প্রতিটি পরিবারের। তাদের এই আহাজারিতে কারো সান্ত্বনা দেওয়ার ভাষা নেই। সবার চোখই অশ্রুসজল।

ত্রিশাল থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মঈন উদ্দিন জানান, বাসচাপায় ঘটনাস্থলেই তিনজন নিহত হয়। এরপর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে একজন এবং ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ (মমেক) হাসপাতালে আরও দুইজনের মৃত্যু হয়েছে। বর্তমানে আহত আরও পাঁচজন মমেক হাসপাতালে ভর্তি রয়েছে।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, সদরের চুরখাই ও ত্রিশাল থেকে কয়েকজন পোশাক শ্রমিক ও সাধারণ যাত্রী শেরপুর থেকে ছেড়ে আসা ঢাকাগামী এসএস ট্রাভেলস নামে একটি বাসে ওঠেন। পথে চেলেরঘাট এলাকায় যেতে বাসটির চাকা ফুটো (পাংচার) হয়ে যায়। পরে বাসটি সড়কের পাশে দাঁড় করিয়ে মেরামত করা হচ্ছিল। এজন্য যাত্রীরা নেমে অন্য বাসের জন্য অপেক্ষা করছিলেন। এরই মধ্যে ইসলাম পরিবহন নামে একটি বাস থামিয়ে যাত্রীরা সেটিতে ওঠার সময় রাসেল গার্মেন্টসের একটি বাস এসে বাসটিতে ধাক্কা দেয়। এতে ঘটে এ হতাহতের ঘটনা।  

বাংলাদেশ সময়: ১৯১৫ ঘণ্টা, অক্টোবর ১১, ২০২৩
আরএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।