ঢাকা, শুক্রবার, ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২২ নভেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

পঞ্চগড়ে উঁকি দিচ্ছে কাঞ্চনজঙ্ঘা!

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৭৩৭ ঘণ্টা, অক্টোবর ৩১, ২০২৩
পঞ্চগড়ে উঁকি দিচ্ছে কাঞ্চনজঙ্ঘা!

পঞ্চগড়: দেশের সর্ব উত্তরের জেলা পঞ্চগড় থেকে খালি চোখেই মেঘ মুক্ত আকাশে উঁকি দিয়েছে হিমালয়ের দ্বিতীয় উচ্চতম ও পৃথিবীর তৃতীয় উচ্চতম পর্বত শৃঙ্গ কাঞ্চনজঙ্ঘা। অক্টোবরের মাঝামাঝি সময়ে এই পর্বত শৃঙ্গ দেখা মিললেও এবার ঘটেছে তার ভিন্নতা।

অক্টোবর মাসের শেষ দিনে স্পষ্টভাবে দেখা দিয়েছে পর্বতটি।  

পর্বত শৃঙ্গ দেখতে জেলার তেঁতুলিয়া উপজেলার মহানন্দা নদীর তীরে দর্শনার্থীদের জন্য গড়ে ওঠেছে ডাকবাংলো পিকনিক কর্নার। মূলত ডাকবাংলো পিকনিক কর্নার থেকে এই পর্বতের মনোমুগ্ধকর দৃশ্য দেখা মিললেও উপজেলার বেশ কিছু স্থান থেকেও দেখা মিলছে পর্বতটি।

সরেজমিনে মঙ্গলবার (৩১ অক্টোবর) সকাল থেকে উপজেলার বিভিন্ন স্থানের পাশাপাশি পিকনিক কর্নারে গেলে দর্শনার্থীদের কাঞ্চনজঙ্ঘা উপভোগ করতে দেখা গেছে।

এসময় কথা হয় বগুড়া থেকে আসা দর্শনার্থী আবু সামাদের সঙ্গে। তিনি বাংলানিউজকে বলেন, দীর্ঘদিন এই কাঞ্চনজঙ্ঘার কথা শুনেছি। ইউটিউব ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও (ফেসবুক) দেখেছি। স্বপ্ন ছিল তেঁতুলিয়া থেকে এই পর্বতটি দেখবো। অবশেষে সেই স্বপ্ন পূরণ হল।

পঞ্চগড়ের পার্শ্ববর্তী জেলা ঠাকুরগাঁও থেকে আসা যুবক আরিফিন বাবু বাংলানিউজকে বলেন, বন্ধুদের নিয়ে গত শুক্রবার (২৭ অক্টোবর) কাঞ্চনজঙ্ঘা দেখতে মোটরসাইকেলে তেঁতুলিয়া আসি। কিন্তু সেদিন দেখতে পারিনি। অবশেষে আজ ভোরে আবারও বের হলে কাঙ্ক্ষিত সেই ‘কাঞ্চনজঙ্ঘা’ দেখতে পাই। আসলে এমন দৃশ্য দেখে চলে যাওয়ার ইচ্ছে করছে না। মন চাচ্ছে আরও দেখি।

স্থানীয় আরিফুল ইসলাম বলেন, প্রতিবছর তেঁতুলিয়ায় এই সময়ে কাঞ্চনজঙ্ঘা দেখতে পর্যটকেরা আসেন। এবারো তার ব্যতিক্রমী ছিল না। কিন্তু গত দুই সপ্তাহ ধরে পরিষ্কারভাবে দেখা যাচ্ছিল না। তবে আজ সকাল থেকে পরিষ্কারভাবে আকাশে এই পর্বত দেখতে পাওয়া গেছে। এতে পর্যটকদের কিছুটা স্বস্তির নিশ্বাস নিতে দেখা গেছে।

মূলত, পাসপোর্ট ও ভিসা ছাড়া দেশের গণ্ডি থেকে দেখা যায় ‘কাঞ্চনজঙ্ঘা’। দেশের সর্ব উত্তরের জেলা পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়াসহ বিভিন্ন স্থান থেকে ছবির মতো ভেসে ওঠা শ্বেতশুভ্র কাঞ্চনজঙ্ঘার অপরূপ দৃশ্য ছাড়াও সেখান থেকে দেখা যাচ্ছে দার্জিলিংয়ের বিভিন্ন পাহাড়ি অঞ্চল। দেশের সীমানা পেরিয়ে যাদের এ পর্বত দেখার সুযোগ হয় না তারা শীতের সময় ছুটে আসেন এ দৃশ্য উপভোগ করতে। এবার সেপ্টেম্বরের শেষে অক্টোবরের শুরুতে উঁকি দিচ্ছে কাঞ্চনজঙ্ঘার অপরূপ এ সৌন্দর্য।

চলতি মাসের শুরুতে ‘কাঞ্চনজঙ্ঘা’ দেখতে বিভিন্ন জেলা থেকে পর্যটকরা পঞ্চগড়ে এসে ভিড় জমাতে শুরু করেন। তবে আকাশে মেঘ ও কুয়াশার কারণে প্রায় সপ্তাহখানেক পর মঙ্গলবার পরিষ্কার আকাশে আবারও দেখা দিচ্ছে কাঞ্চনজঙ্ঘা। তাই কাঞ্চনজঙ্ঘার সৌন্দর্য দেখতে প্রতিদিনই পর্যটকদের আগমন ঘটছে এ জেলায়।

ট্যুরিস্ট পুলিশ পঞ্চগড় জোনের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সাজেদুর রহমান বাংলানিউজকে বলেন, দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ছুটে আসা এসব পর্যটকদের নিরাপত্তায় কাজ করছে ট্যুরিস্ট পুলিশ। সুষ্ঠু বিনোদন উপহার দিতে আমরা কাজ করে যাচ্ছি।

এদিকে তেঁতুলিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ফজলে রাব্বি বলেন, তেঁতুলিয়াকে ভিন্ন আঙ্গিকে সাজাতে আমরা কাজ করে যাচ্ছি। এই সময়ে যাতে পর্যটকেরা কোনো বাধা ছাড়াই এ উপজেলায় থাকার পাশাপাশি ঘুরতে পারে, সে কারণে উপজেলা পরিষদকে সঙ্গে নিয়ে আমরা কাজ করে যাচ্ছি।

জানা গেছে, সূর্যের আলোর সঙ্গে কখনও শুভ্র, গোলাপি আবার কখনও লাল রং নিয়ে হাজির হয় বরফ আচ্ছাদিত এই পর্বতচূড়া কাঞ্চনজঙ্ঘা। পর্বতের সৌন্দর্য উপভোগ করার মোক্ষম সময় ভোর ও বিকেল বেলা। তখন পর্বতটি পোড়ামাটির রূপ নেয়। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে কিছুটা ঝাপসা হয়ে আসলে তখন রং হয় সাদা। যেন আকাশের বুকে একখণ্ড বরফ। এছাড়াও তেঁতুলিয়া ডাকবাংলো থেকে সন্ধ্যার আকাশে দেখা মেলে প্রতিবেশী দেশ ভারতের দার্জিলিংয়ের বিভিন্ন পাহাড়ি অঞ্চল। কাঞ্চনজঙ্ঘার মাঝে যে কালচে পাহাড় দেখা যায় সেটি পাহাড়ের ঢালে ভারতের প্রসিদ্ধ শহর দার্জিলিং।

তেঁতুলিয়া থেকে প্রায় দেড়শ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত ‘কাঞ্চনজঙ্ঘা’। বাংলাবান্ধা স্থলবন্দর থেকে নেপালের দূরত্ব মাত্র ৬১ কিলোমিটার। এভারেস্ট শৃঙ্গে দূরত্ব মাত্র ৭৫ কিলোমিটার। ভুটানের দূরত্ব ৬৪ কিলোমিটার, চীনের দূরত্ব ২০০ কিলোমিটার, ভারতের দার্জিলিংয়ের দূরত্ব ৫৮ কিলোমিটার এবং শিলিগুড়ি দূরত্ব ৮ কিলোমিটার।

কীভাবে যাবেন:

দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে সড়কপথে এসি ও নন–এসি যাত্রীবাহী বাসে পঞ্চগড়সহ তেঁতুলিয়ায় যাওয়া যায়। এর পাশাপাশি রেলপথে ঢাকার কমলাপুর থেকে (পঞ্চগড় এক্সপ্রেস, দ্রুতযান এক্সপ্রেস ও একতা এক্সপ্রেস ঢাকা-পঞ্চগড় রুটে) পঞ্চগড় বীর মুক্তিযোদ্ধা সিরাজুল ইসলাম রেলওয়ে স্টেশনে যাওয়া যায়। এ ছাড়া পার্শ্ববর্তী নীলফামারী জেলার সৈয়দপুর পর্যন্ত আকাশপথেও আসা যায়। সেখান থেকে পঞ্চগড়ে আসতে হবে সড়কপথে। পঞ্চগড় থেকে যাত্রীবাহী বাসসহ বিভিন্ন যানবাহনে প্রায় ৫০ কিলোমিটার দূরত্বের তেঁতুলিয়ায় যাওয়া যায়।

থাকবেন যেখানে:


পঞ্চগড় জেলা শহরে রয়েছে সার্কিট হাউসসহ স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর, পানি উন্নয়ন বোর্ড এবং সড়ক ও জনপদ বিভাগের গেস্টহাউস। বেসরকারিভাবে সেন্ট্রাল গেস্টহাউস, হোটেল মৌচাক, হোটেল প্রিতম, অগ্রদূত প্যালেস, এইচ কে প্যালেস, ধানসিঁড়িসহ বিভিন্ন আবাসিক হোটেল রয়েছে পঞ্চগড়ে।

তেঁতুলিয়ায় রয়েছে সরকারি ও বেসরকারি হোটেল ও বাংলো। মহানন্দা নদী ঘেঁষে উঁচু টিলার ওপর অবস্থিত শতবর্ষ পুরোনো জেলা পরিষদ ডাকবাংলো। আগেভাগে যোগাযোগ করে এই ডাকবাংলোয় থাকার ব্যবস্থা করতে পারেন। পুলিশের অফিসার্স মেস, উপজেলা পরিষদের বেরং কমপ্লেক্স, সড়ক ও জনপদের গেস্টহাউস, শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তরের গেস্টহাউস, বন বিভাগের গেস্টহাউস, জনস্বাস্থ্য প্রকৌশলের গেস্টহাউসে থাকার ব্যবস্থা আছে। এ ছাড়া তেঁতুলিয়ায় বেসরকারিভাবে বিভিন্ন আবাসিক হোটেল রয়েছে।

বাংলাদেশ সময়: ১৭৩৭ ঘণ্টা, অক্টোবর ৩১, ২০২৩
এসএম

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।