ঢাকা, মঙ্গলবার, ২০ কার্তিক ১৪৩১, ০৫ নভেম্বর ২০২৪, ০৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

বাসে আগুন দেওয়ার কথা স্বীকার বিএনপি নেতাদের: ডিবি প্রধান

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫১৬ ঘণ্টা, নভেম্বর ৮, ২০২৩
বাসে আগুন দেওয়ার কথা স্বীকার বিএনপি নেতাদের: ডিবি প্রধান

ঢাকা: গত ২৮ অক্টোবর সমাবেশকে কেন্দ্র করে প্রধান বিচারপতির বাস ভবনে হামলাসহ বাসে আগুন দেওয়ার কথা স্বীকার করেছে রিমান্ডে থাকা বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতারা।

বুধবার (৮ নভেম্বর)  দুপুর রাজধানীর মিন্টু রোডে নিজ কার্যালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে এ কথা জানান মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ।

তিনি বলেন, বিচারপতির বাস ভবনে হামলা, বিআরটিসি বাসে আগুনসহ ২৮ অক্টোবর পর থেকে চলমান অবরোধে চালানো নাশকতার দায় স্বীকার করেছেন বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতারা। এমনকি এ ধরনের নাশকতা করা ঠিক হয়নি বলে তারা মন্তব্য করেছেন।

মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ বলেন, প্রথমত যেসব কেন্দ্রীয় নেতা আমাদের কাছে আছেন তারা প্রথমে বলছিল যে, নাশকতা তাদের দলের লোকজন করেনি। এটা নিয়ে তারা সন্দিহান ছিল। তখন আমাদের কাছে থাকা সিসিটিভি ফুটেজ, স্মার্ট টিমের করা ভিডিও তাদের দেখানো হয়েছে।

আমরা বলেছি, আপনারা স্টেজে ছিলেন, সমাবেশের নেতৃত্বে ছিলেন। এছাড়া ভিডিওতে তারা দেখেছেন, সমাবেশের দিন মঞ্চে থাকা কেন্দ্রীয় নেতারা কে কি রোল প্লে করেছেন। সুলতান সালাউদ্দিন কোথায় লাঠি নিয়ে দৌড়াচ্ছেন, রবিউল ইসলাম নয়ন কোথায় আগুন লাগাচ্ছেন। আমরা ছাত্রদলের সাবেক কেন্দ্রীয় নেতা আবু সাঈদ মিন্টুর বাসা থেকে গানপাউডার পেয়েছি।

এসব কিছু দেখার পরে কেন্দ্রীয় নেতারা দুঃখ প্রকাশ করেছেন, তারা বলছেন এটা ঠিক হয়নি বলে যোগ করেন তিনি।

যাত্রী সেজে বাসে ঘুরছে পুলিশ

এক প্রশ্নের জবাবে ডিবি প্রধান বলেন, তারা হয়তো মনে করছেন বাংলাদেশের কয়েকটা বিচ্ছিন্ন স্থানে আগুন লাগালেই সবাই ভয় পেয়ে যাবে। অথবা পুলিশ ডিমোরাটালাইজ হবে, এটা ঠিক না। পুলিশ বাহিনীর কাজ হচ্ছে, জনগণের জানমাল নিরাপত্তা দেওয়া। সাধারণ মানুষের চলাচলে যেন কোনো বাধা সৃষ্টি করতে না পারে সেদিকে খেয়াল রাখা।

আমাদের পুলিশের প্রত্যেকটি সদস্য রাত-দিন ২৪ ঘণ্টা বিভিন্ন এলাকায় টহল দিচ্ছে। ছদ্মবেশে ঘোরাফেরা করছে। বাসে যাত্রীর ছদ্মবেশে পুলিশ ঘুরছে। যদি কেউ এ ধরনের ঘটনা ঘটাতে চায় তাদের কোনো ছাড় দেওয়া হবে না। এমন কি এসব ঘটনা যারা জড়িত তাদের ধরিয়ে দিলে পুরস্কার দেওয়া হবে। ডিএমপি কমিশনার ঘোষণা করেছেন, নাশকতাকারীকে ধরিয়ে দিলেই ২০ হাজার টাকা পুরস্কার দেওয়া হবে। এসব বিচ্ছিন্ন ঘটনা যারা ঘটাচ্ছে তাদের নাম আমরা পেয়েছি, আশা করছি শিগগিরই আমরা তাদের গ্রেপ্তার করতে পারব।

সহিংসতায় গ্রেপ্তার আরও ৫

এদিকে, সমাবেশের দিন, হরতাল ও অবরোধে গাড়িতে আগুন ও ভাঙচুরের ঘটনায় জড়িত আরও পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করেছে ডিবি লালবাগ ও মতিঝিল বিভাগ।

এ বিষয়ে হারুন অর রশীদ বলেন, বিএনপির সমাবেশে অংশগ্রহণ করে ধ্বংসাত্মক কার্যক্রমের ভূমিকা পালনকারী বেশ কয়েকজনকে আমরা ধরেছি। অন্যান্য অংশগ্রহণকারী অনেকের নাম পেয়েছি৷ তাদের মধ্যে যুবদলের কেন্দ্রীয় কমিটির কৃষি বিষয়ক সম্পাদক সাইদ হাসান মিন্টুকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তার বাসা থেকে ৮ কেজি গান পাউডার উদ্ধার করা হয়েছে।

মিন্টু স্বীকার করেছে, বাশার এবং মাসুদকে দিয়ে এগুলো বানায়। রবিউল ইসলাম নয়ন ও সুলতান সালাউদ্দিন যে সহায়তা করেছে, তিনি সেটিও স্বীকার করেছেন।

ডিবি প্রধান বলেন, গ্রেপ্তারদের মধ্যে ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় নেতা হাসান হাওলাদার। তিনি প্রথম প্রধান বিচারপতির বাসভবনের সামনে গুলতি নিয়ে পুলিশের ওপর মারবেল নিক্ষেপ করে ও বিআরটিসি বাসে আগুন দেয়।

গ্রেপ্তার কবি নজরুল ইসলাম কলেজ ছাত্রদলের সহ-সভাপতি আবুল হোসেন জুয়েল নাইটেঙ্গেলে মোড়ে পুলিশের ওপরে হামলা করে এর ভিডিও ফুটেজ আমাদের কাছে আছে। পুলিশ হত্যা মামলায় এ দুজন ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দিয়েছেন।

তারা বলেছে, ছাত্রদলের মুগদা থানার সাধারণ সম্পাদক রানা মিয়া পুলিশ হত্যায় অংশগ্রহণ করেছেন। পরে তাকেও আমরা গ্রেপ্তার করেছি।

এছাড়া গ্রেপ্তার কামরুজ্জামান টুকু নিজে স্বীকার করেছে বাস পোড়ানোর কথা। হৃদয় নামে একজন বাংলামোটর, মৌচাক ফ্লাইওভার, কাকড়াইল মোড়ে আগুন লাগিয়েছে। পেট্রল বোমা ও ককটেল সরবরাহ করেছে রবিউল ইসলাম নয়ন। তাদের সবার নেতা সুলতান সালাউদ্দিন টুকু।

গ্রেপ্তারদের জিজ্ঞাসাবাদের ভিত্তিতে তিনি আরও বলেন, সুলতান সালাউদ্দিন টুকুর নেতৃত্বেই গত ২৮ অক্টোবর থেকে চলমান সময় পর্যন্ত বিভিন্ন জায়গায় বাসে আগুন, ককটেল নিক্ষেপ, পেট্রল বোমা বা পেট্রল লাগিয়ে আগুন জ্বালানো হয়।

গত ২৮ অক্টোবর যারা প্রধান বিচারপতির বাসভবনে ককটেল বিস্ফোরণ ঘটায়, বিআরটিসি বাসে আগুন, পুলিশ হাসপাতালে আগুন, অ্যাম্বুলেন্স ভাঙচুর, পুলিশ মার্ডার মামলার আসামিদের অনেকের নাম ও সিসিটিভি ফুটেজের মাধ্যমে অনেকের পরিচয় পাওয়া গেছে। পাশাপাশি গ্রেপ্তাররা আরও অনেকের নাম বলেছেন। তাদের ছবি পেয়েছি, তাদের গ্রেপ্তার অভিযান অব্যাহত আছে বলেও জানান তিনি।

বাংলাদেশ সময়: ১৫১৬ ঘণ্টা, নভেম্বর ০৮, ২০২৩
পিএম/জেএইচ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।