ঢাকা, মঙ্গলবার, ১১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ২৪ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

মাদরাসা ছাত্রী হত্যা

সঠিক ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন দিতে দুই লাখ টাকা ‘দাবি’

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৩৩৯ ঘণ্টা, নভেম্বর ২০, ২০২৩
সঠিক ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন দিতে দুই লাখ টাকা ‘দাবি’

টাঙ্গাইল: টাঙ্গাইলের বাসাইল উপজেলার কাঞ্চনপুর গ্রামের মাদরাসা ছাত্রী খাদিজা (১০) হত্যার বিচার চেয়ে দ্বারে দ্বারে ঘুরছেন মা জাহানারা বেগম ও তার স্বজনরা। এদিকে ওই মাদরাসা ছাত্রীর ময়নাতদন্তের প্রতিবেদন দিতে চিকিৎসকরা গড়িমসি করছেন বলে অভিযোগ উঠেছে।

 

শুধু তাই নয়, ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন দিতে খাদিজার পরিবারের কাছে দুই লাখ টাকা দাবি করেছেন টাঙ্গাইল জেনারেল হাসপাতালের নার্সদের সুপারভাইজার হেলেনা বেগম।  

এদিকে হেলেনা বেগম টাকা চাওয়ার কথা অস্বীকার করলেও সব কিছু আরএমও স্যার জানেন বলে স্বীকার করেন।

রোববার (১৯ নভেম্বর) সকালে টাঙ্গাইল প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে এ অভিযোগ করেন খাদিজার মা জাহানারা বেগম।  

লিখিত বক্তব্যে তিনি জানান, তার মেয়ে খাদিজা আক্তারকে টাঙ্গাইল শহরের শিবনাথপাড়া মাদরাসাতুন নুজুম আল ইসলামিয়া মাদরাসায় ভর্তি করা হয়। গত ২৮ অক্টোবর খাদিজাকে মাদরাসায় রেখে আসেন পরিবারের লোকজন। দুইদিন পর ৩০ অক্টোবর সকালে মাদরাসা থেকে তাকে (জাহানারা) মোবাইলে ফোন করে জানানো হয় তার মেয়ে অসুস্থ হয়ে পরায় তাকে টাঙ্গাইল জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। খবর পেয়ে হাসপাতালে গিয়ে মর্গের সামনে খাদিজার মরদেহ দেখতে পান স্বজনরা। পরে মাদরাসার পক্ষ থেকে তাদের জানানো হয় খাদিজা ছাদ থেকে পড়ে মারা গেছে। এ নিয়ে পরিবারের লোকজনের সন্দেহ হলে খাদিজার মরদেহ ময়নাতদন্তের জন্য আবেদন করেন। কিন্তু গত ১২ নভেম্বর ময়নাতদন্তের প্রতিবেদনের জন্য টাঙ্গাইল জেনারেল হাসপাতালে গেলে সেখানে দায়িত্বরত চিকিৎসক খাদিজার মৃত্যু বিষয়ে বিস্তারিত জানতে চান পরিবারের সদস্যদের কাছে। পরে তাদের বাইরে অপেক্ষা করতে বলেন। কিছুক্ষণ পর নার্সদের সুপারভাইজার হেলেনা একটি চিরকুটে দুই লাখ টাকা লিখে খাদিজার পরিবারকে দেখিয়ে বলেন সঠিক ময়নাতদন্তের প্রতিবেদন পেতে হলে এই টাকা লাগবে। পরে তারা একটু সময় চেয়ে টাকা দেওয়ার কথা স্বীকার করে সেখান থেকে চলে আসেন। পরদিন সকালে হেলেনার সঙ্গে মোবাইল ফোনে কথা হলে তিনি দুই লাখ টাকা নিয়ে তাড়াতাড়ি হাসপাতালে যেতে বলেন। তিনি (হেলেনা) আরও বলেন, তা না হলে মাদরাসা কর্তৃপক্ষ পাঁচ লাখ টাকা নিয়ে ঘুরছেন। আপনাদের টাকা আনতে দেরি হলে ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন মাদরাসা কর্তৃপক্ষের পক্ষে চলে যাবে। তাই যত তাড়াতাড়ি সম্ভব টাকা নিয়ে হাসপাতালে চলে আসেন।  

এদিকে এই কথোপকথন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়ে যায়। এ কারণে বর্তমানে হেলেনা স্বামীর অসুস্থতার কারণ দেখিয়ে হাসপাতাল থেকে ছুটি নিয়েছেন।

জানতে চাইলে টাঙ্গাইল জেনারেল হাসপাতালের নার্সদের সুপারভাইজার হেলানা বেগম বাংলানিউজকে জানান, এ বিষয়ে তিনি কিছুই জানেন না। তবে যা করেছেন আরএমও স্যারের নির্দেশেই করেছেন এবং সব কিছু তিনিই জানেন।

মাদরাসা কর্তৃপক্ষ বলছেন, খাদিজা সবার অজান্তে ছাদ থেকে লাফিয়ে পড়ে আত্মহত্যা করেছে। তবে তার মৃত্যুর পরপরই পুলিশ মাদরাসাটি বন্ধ করে দিয়েছে।

নিহতের পরিবারের দাবি, খাদিজা আত্মহত্যা করতে পারে না। তাকে হত্যা করা হয়েছে। কারণ ১০ বছরের একটি মেয়ে পাঁচ তলার ছাদ থেকে পড়লে হাত, পা অথবা শরীরের অন্য কোথাও বড় ধরনের আঘাত পাবে। কিন্তু তার কিছুই হয়নি। এখন এটি আত্মহত্যা বলে প্রচার চালাচ্ছে মাদরাসা কর্তৃপক্ষ। এছাড়া এই হত্যাকাণ্ডের বিচার চেয়ে পোস্টার ছাপানো হলে তা লাগাতে বাধা দেওয়া হচ্ছে বলেও অভিযোগ করেন তারা।

ঘটনার পর খাদিজার সুরতহাল প্রতিবেদন তৈরি করেছেন টাঙ্গাইল সদর থানার উপপরিদর্শক (এসআই) লুৎফর রহমান এবং নারী পুলিশ সদস্য পারুল আক্তার। তারা প্রতিবেদনে উল্লেখ করেছেন, নিহত খাদিজার কপালের পাশে ভ্রুর ওপরে সামান্য কালো ফোলা, চোখ দুটি স্বাভাবিক, মুখ সামান্য খোলা দাঁত দেখা যায়, গলা, কাঁধ ও গলার ওপরে সামান্য কালো দাগ, ডান হাতের কব্জির ওপর কালো দাগ, কোমর থেকে পায়ের পাতা পর্যন্ত স্বাভাবিক।  

এছাড়া সুরতহাল প্রতিবেদনে প্রাথমিকভাবে ধর্ষণের আলামত পাওয়া গেছে বলেও উল্লেখ করা হয়েছে। এ কারণে মৃত্যুর সঠিক কারণ নির্ণয় এবং ওই ছাত্রী মৃত্যুর আগে ধর্ষণের শিকার হয়েছে কি না, হয়ে থাকলে তার সোয়াব সংগ্রহ করে ডিএনএ টেস্টের জন্য বলা হয়।

বাংলাদেশ সময়: ১৩৩২ ঘণ্টা, নভেম্বর ২০, ২০২৩
আরএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।