বাঙালি জাতিকে শোষণের পর গণবিক্ষোভ দমনে গণহত্যা চালিয়েছিল পাকিস্তানের হানাদার শাসকরা। সেই বর্বরতা-নৃশংসতার বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়ে পাকিস্তানকেই পর্যুদস্ত করে স্বাধীনতা ছিনিয়ে এনেছে এদেশের মুক্তিকামী মানুষ।
সম্প্রতি নানা সূচকে পাকিস্তানের চেয়ে বাংলাদেশের এগিয়ে থাকা, এর নেপথ্য কারণসহ বিভিন্ন বিষয় তুলে ধরে একটি প্রতিবেদন করেছে বিবিসি উর্দু। তানভীর মালিকের করা প্রতিবেদনটি তুলে ধরা হলো।
ব্রিটিশদের শাসন থেকে ১৯৪৭ সালের ১৪ আগস্ট স্বাধীনতার পর পাকিস্তানের পশ্চিম ও পূর্ব অংশ একসঙ্গে রাষ্ট্র হিসেবে যাত্রা শুরু করে। কিন্তু পরবর্তী ১০-১২ বছরে দুটি অংশের মধ্যে সামাজিক ও অর্থনৈতিক ব্যবধান প্রসারিত হতে থাকে।
এ সম্পর্কে জেনারেল ইয়াহিয়া খানের সরকারের মন্ত্রী জি ডব্লিউ চৌধুরী ‘লাস্ট ডেইজ অব ইউনাইটেড পাকিস্তান’ বইতে লিখেছেন, ‘১৯৬০ সালে পশ্চিম পাকিস্তানের মাথাপিছু আয় পূর্ব পাকিস্তানের মাথাপিছু আয়ের চেয়ে ৩২ শতাংশ বেশি ছিল এবং পরবর্তী ১০ বছরে এই পার্থক্য ৮১ শতাংশে গিয়ে দাঁড়ায়। ’
১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর পূর্ব পাকিস্তান যখন ‘বাংলাদেশ’ নামে অস্তিত্ব লাভ করে, ওই সময় পাকিস্তান ও বাংলাদেশের অর্থনৈতিক সূচকে ব্যাপক পার্থক্য ছিল, যার মধ্যে ছিল দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির হার, দেশের আয়তন, অর্থনীতি, মাথাপিছু আয়, রপ্তানি ইত্যাদি। ওই সময় বাংলাদেশ থেকে পাকিস্তান যথেষ্ট এগিয়ে ছিল।
তবে গত দুই দশকে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের কারণে স্বাধীনতার ৫২ বছর পর বাংলাদেশ অর্থনৈতিক সূচকে পাকিস্তানের তুলনায় অনেক বেশি উন্নতি করেছে। বিগত ৫২ বছরে বাংলাদেশ অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে পাকিস্তানের চেয়ে ভালো পারফরম্যান্স করেছে। একদিকে বৈদেশিক বাণিজ্য বৃদ্ধি করেছে, অন্যদিকে দারিদ্র্যের হারও হ্রাস পেয়েছে, এছাড়া অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে নারীর উন্নয়ন হয়েছে পাকিস্তানের চেয়ে বেশি।
গত কয়েক বছর ধরে পাকিস্তানে রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা ও সন্ত্রাসবাদ এবং খারাপ আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির কারণে একদিকে শিল্প বিকাশের চাকা থমকে গেছে, অন্যদিকে দেশটি তার বৈদেশিক বাণিজ্য, জিডিপি প্রবৃদ্ধি, মাথাপিছু আয় হারিয়েছে এবং দারিদ্র্য বিমোচনে কোনো বিশেষ পারফরম্যান্স দেখায়নি।
যদি ৫২ বছর পর পাকিস্তান ও বাংলাদেশের অর্থনৈতিক অবস্থার তুলনা করা হয়, তবে বাংলাদেশ কিছু খাতে, বিশেষ করে পোশাক রপ্তানি খাতে পাকিস্তানের চেয়ে অনেক এগিয়ে রয়েছে, যেখানে বাংলাদেশ বর্তমানে চীনের পরে বিশ্বে সবচেয়ে বেশি রপ্তানিকারক দেশ, অন্যদিকে পোশাক রপ্তানিতে শীর্ষ পাঁচটি দেশের মধ্যেও পাকিস্তান নেই।
বাংলাদেশ তুলা উৎপাদনকারী দেশ না হলেও পোশাক রপ্তানিতে বিস্ময়কর সাফল্য অর্জন করেছে, কিন্তু একটি প্রধান তুলা উৎপাদনকারী দেশ হওয়া সত্ত্বেও পাকিস্তান বর্তমানে পোশাক রপ্তানিতে বাংলাদেশের চেয়ে অনেক পিছিয়ে রয়েছে।
৫২ বছর পর পাকিস্তান ও বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের পরিমাপে উভয় দেশের সরকারি প্রতিষ্ঠান এবং বিশ্বব্যাংক প্রকাশিত তথ্য ও উপাত্তের ভিত্তিতে জিডিপি, মাথাপিছু আয়, বৈদেশিক বাণিজ্য এবং দারিদ্র্য বিমোচনের ক্ষেত্রে দুটি দেশকে তুলনা করা হয়েছে।
বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের অর্থনৈতিক উন্নয়ন
১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর বিজয়ের পর প্রথম বছর ১৯৭২ সালে, বাংলাদেশ নেতিবাচক ১৩ শতাংশ অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির হার রেকর্ড করে। বিশ্বব্যাংকের ওয়েবসাইটের তথ্য অনুযায়ী, একই বছরে পাকিস্তানের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির হার ছিল প্রায় এক শতাংশ।
যুদ্ধের কারণে উভয় অঞ্চলের অর্থনীতি বিধ্বস্ত হলেও পরের বছর পাকিস্তানের অর্থনৈতিক উন্নয়নের প্রবৃদ্ধি ছিল সাত শতাংশ, যেখানে বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধি ছিল নেতিবাচক।
বাংলাদেশ ও পাকিস্তানে প্রতি বছরের ১ জুলাই অর্থবছর শুরু হয় এবং পরের বছরের ৩০ জুন শেষ হয়। ৫২ বছর পর, ৩০ জুন, ২০২৩-এ শেষ হওয়া অর্থবছরে অর্থনৈতিক সমীক্ষা অনুসারে, পাকিস্তানের অর্থনীতির প্রবৃদ্ধির হার ছিল এক শতাংশের কম অর্থাৎ ০.২৯ শতাংশ। অন্যদিকে এ অর্থবছরে বাংলাদেশের অর্থনীতির প্রবৃদ্ধির হার ছিল ৬ শতাংশ।
এটি উল্লেখ্য যে, বাংলাদেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির হার গত ১২-১৩ বছর ধরে ক্রমাগত ছয় শতাংশের বেশি হারে বাড়ছে। অন্যদিকে, পাকিস্তানের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি গত ১০-১২ বছরে তিন থেকে চার শতাংশের মধ্যে ছিল। গত দুই বছরে এটি ছিল এক শতাংশেরও কম।
বর্তমানে বাংলাদেশের অর্থনীতির আকার ৪৫৪ বিলিয়ন ডলার এবং পাকিস্তানের অর্থনীতির আকার ৩৪০ বিলিয়ন ডলার।
যুক্তরাজ্যের অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটির অর্থনীতির অধ্যাপক আদিল মালিক বিবিসিকে বলেন, বাংলাদেশের অর্থনীতির প্রবৃদ্ধির হার ১৯৯০ সালে ০.২ শতাংশ ছিল, তারপরে এটি উন্নত হতে শুরু করে এবং ২০২২ সাল পর্যন্ত প্রতি বছর বৃদ্ধি পেতে থাকে, যা ছয় শতাংশের পর্যায়ে পৌঁছেছে।
বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের মাথাপিছু আয়
গত ৫২ বছরে পাকিস্তান ও বাংলাদেশের মাথাপিছু আয়ের ক্ষেত্রেও অনেক পার্থক্য হয়েছে। বিশ্বব্যাংকের তথ্য ও উপাত্ত অনুযায়ী, ১৯৭২ সালে বাংলাদেশের মাথাপিছু আয় ছিল ৯০ ডলার, যেখানে পাকিস্তানের মাথাপিছু আয় ছিল ১৫০ ডলার। বাংলাদেশের মাথাপিছু আয়ের গ্রাফ ক্রমাগত বৃদ্ধি পাচ্ছে এবং পাকিস্তানের মাথাপিছু আয়ের গ্রাফ এই সময়ের মধ্যে ওপরে-নিচে ওঠা-নামা করছে।
পাকিস্তানের অর্থনৈতিক সমীক্ষা অনুযায়ী, গত অর্থবছরের শেষে পাকিস্তানিদের মাথাপিছু আয় ছিল এক হাজার ৫৬৮ ডলার। এর বিপরীতে, অর্থনৈতিক পর্যালোচনা অনুযায়ী বাংলাদেশের নাগরিকদের মাথাপিছু আয় ছিল দুই হাজার ৬৮৭ ডলার।
বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের রপ্তানি
বৈদেশিক বাণিজ্যের ক্ষেত্রেও পাকিস্তান ও বাংলাদেশের পারফরম্যান্সে গত ৫২ বছরে অনেক পরিবর্তন হয়েছে। বিশ্বব্যাংকের মতে, ১৯৭২ সালে বাংলাদেশের রপ্তানি ছিল ৩৫ কোটি ডলার, যেখানে পাকিস্তানের রপ্তানি ওই বছর বাংলাদেশের তুলনায় প্রায় দ্বিগুণ ছিল, যা ওই সময়ে ৬৭ দশমিক ৫ কোটি ডলার ছিল।
তবে ৫২ বছরে বাংলাদেশের রপ্তানি খাতের প্রবৃদ্ধি বিস্ময়কর। বিশেষ করে গত ২০ বছরে এর প্রবৃদ্ধি অনেক বেশি হয়েছে। গত অর্থবছরে বাংলাদেশের পণ্য ও সেবার রপ্তানি হয়েছে ৬৪ বিলিয়ন ডলার, যার মধ্যে ৫৫ বিলিয়ন ডলারের পণ্য এবং ৯ বিলিয়ন ডলারের সেবা রপ্তানি হয়েছে।
এর বিপরীতে, গত অর্থবছরে পাকিস্তানের মোট রপ্তানি ছিল ৩৫ বিলিয়ন ডলার, যার মধ্যে ২৭ বিলিয়ন ডলারের পণ্য এবং ৮ বিলিয়ন ডলারের সেবা রপ্তানি হয়েছে।
বাংলাদেশ ও পাকিস্তানে দারিদ্র্যের মাত্রা
পাকিস্তান ও বাংলাদেশের দারিদ্র্যের মাত্রা তুলনা করলে গত ৫২ বছরে অনেক পরিবর্তন দেখা যায়। বিশ্বব্যাংকের মতে, ২০১৬ সালে বাংলাদেশে দারিদ্র্যের হার ছিল ১৩ দশমিক ৪৭ শতাংশ এবং ২০২২ সালে এ হার কমে ১০ দশমিক ৪৪ শতাংশে নেমেছে।
বিশ্বব্যাংকের মতে, গত অর্থবছরে পাকিস্তানে দারিদ্র্যের হার ৩৯ দশমিক ৪ শতাংশে পৌঁছেছে। যেখানে ২০১৮ সালে পাকিস্তানে দারিদ্র্যের হার ছিল ২২ শতাংশ।
পাকিস্তানের চেয়ে বাংলাদেশ অর্থনৈতিকভাবে এগিয়ে যাওয়ার কারণ কী?
চলতি শতাব্দীর শুরু থেকে অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে পাকিস্তানের ওপর বাংলাদেশের শ্রেষ্ঠত্বের কারণ সম্পর্কে অর্থনীতিবিদদের প্রশ্ন করা হলে অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক আদিল মালিক বলেন, ‘যদি বর্তমান শতাব্দীতে বাংলাদেশের উন্নয়ন এবং পাকিস্তানের পশ্চাৎপদতার কারণগুলো খতিয়ে দেখা হয়, তবে সবচেয়ে বড় কারণ দুই দেশের বর্তমান অভিজাতদের চিন্তাভাবনা ও দৃষ্টিভঙ্গির পার্থক্য। ’
এর ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশে এলিট যারা, রাজনৈতিক দল হোক বা ব্যবসায়ী, তারা একটা বিষয়ে একমত যে দেশে শিল্পের প্রসার ঘটিয়ে রপ্তানি বাড়াতে হবে। এ বিষয়ে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী থেকে শুরু করে কারখানার শ্রমিক পর্যন্ত সবাই একমত। অন্যদিকে, পাকিস্তানের রাজনৈতিক, সামরিক এবং বেসামরিক এলিটরা সবাই রিয়েল এস্টেট সেক্টরের দিকে মনোনিবেশ করেছে এবং সবাই এতে কাজ করছে। ’
তিনি বলেন, ‘সাবেক রাষ্ট্রপতি ও সেনাপ্রধান পারভেজ মোশাররফের আমলে প্রচুর বিদেশি অর্থ পাকিস্তানে এলেও সব রিয়েল এস্টেটে দৃশ্যমান হয়ে ওঠে এবং একই সঙ্গে বাংলাদেশ উৎপাদন খাতে মনোযোগ দিয়ে আমাদের চেয়ে এগিয়ে যায়। ’
আদিল মালিক বলেন, ‘বাংলাদেশের উচ্চবিত্তদের স্বার্থ শিল্পের সঙ্গে জড়িত এবং পাকিস্তানের উচ্চবিত্তদের স্বার্থ রিয়েল এস্টেটের সঙ্গে জড়িত এবং এটাই সবচেয়ে বড় কারণ, যা গত ২০ বছরে দুই দেশের ভিন্ন অর্থনৈতিক পরিস্থিতি তৈরি করেছে। পাকিস্তান ও ভারতের তুলনায় বাংলাদেশকে আলাদা করে তোলার আরেকটি কারণ হলো, একদিকে সেখানে ভূমির ব্যবস্থাপনা সংস্কার করে জমিদারি প্রথা বিলুপ্ত করা হয়েছে, অন্যদিকে ভারতের মতো বর্ণপ্রথা নেই। সেখানে, একটি কারখানার মালিক থেকে তার কর্মী পর্যন্ত সামাজিক মর্যাদা সমান এবং একজন শ্রমিকেরও আগামীকাল একটি কারখানা গড়ে তোলার সুযোগ রয়েছে। ’
আদিলের মতে, বাংলাদেশের শিক্ষা ব্যবস্থাকে সার্বজনীন করা হয়েছে, যাতে প্রত্যেকের শিক্ষার সুযোগ রযেছে। তাই আজকে পরিস্থিতি এমন যে পাকিস্তানে দুই কোটি ২০ লাখ শিশু স্কুলে যায় না, অথচ বাংলাদেশে এ ধরনের শিশুর সংখ্যা মাত্র ৭২ হাজারের কাছাকাছি।
আদিল বলেন, ‘সর্বোপরি বাংলাদেশে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা ও আইনশৃঙ্খলার একটি ভালো পরিস্থিতি রয়েছে, যার কারণে সেখানে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি সম্ভব হয়েছে, অন্যদিকে গত তিন থেকে চার দশক ধরে পাকিস্তান রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা ও সন্ত্রাসবাদে ভুগছে, আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি ও নিরাপত্তার সমস্যায় ভুগছে যা অর্থনীতিকে খারাপভাবে প্রভাবিত করেছে এবং পাকিস্তানে নীতির ধারাবাহিকতার অভাব রয়েছে। ’
পাকিস্তান ইনস্টিটিউট অব ডেভেলপমেন্ট ইকোনমিকসের বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ ড. হাফসা হিনা বলেন, ‘পাকিস্তানের অনেক চ্যালেঞ্জ রয়েছে, যার মধ্যে সবচেয়ে বড় সমস্যা হলো বিনিময় হার, যা সর্বদা নিয়ন্ত্রণ করার চেষ্টা করা হয়েছে। এটা পাকিস্তানের রপ্তানি খাতকে ক্ষতির দিকে নিয়েছে। ’
ড. হাফসা হিনা মনে করেন, পাকিস্তানের শিল্পকে রক্ষা করার জন্য খুব বেশি শুল্ক ধার্য করা হয়েছিল। যার ফলে দেশটির শিল্প আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতার জন্য প্রস্তুত হতে পারেনি। স্থানীয় ভোগের ওপর নির্ভরশীলতার কারণে রপ্তানি খাত গড়ে উঠতে পারেনি। অন্যদিকে, পাকিস্তানে জ্বালানির দাম শিল্পের ওপর ব্যাপক নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছিল, যার ভিত্তিতে এটি বিশ্বের প্রতিযোগিতামূলক দৌড়ে এগিয়ে যেতে পারেনি।
পোশাক রপ্তানিতে বাংলাদেশ কীভাবে পাকিস্তানকে ছাড়িয়ে গেল?
গত দুই দশকে বাংলাদেশ পোশাক খাতে ব্যাপক প্রবৃদ্ধি দেখিয়ে সবাইকে অবাক করেছে। বাংলাদেশ গত বছর বিশ্বে ৪২ বিলিয়ন ডলারের পোশাক রপ্তানি করেছে, যেখানে পাকিস্তানের ১০ বিলিয়ন ডলারের পোশাক রপ্তানি হয়েছে। পোশাক খাতে চীনের পর বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম দেশ বাংলাদেশ। অধ্যাপক আদিলের মতে, শুধু পোশাক খাতে বাংলাদেশে সাড়ে তিন বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ হয়েছে। বিশ্বের অন্যান্য দেশ ছাড়াও পাকিস্তান থেকেও বাংলাদেশে বিনিয়োগ হয়েছে।
পাকিস্তানের পাঞ্জাব প্রদেশের গার্মেন্টস সেক্টরের শিল্পপতি ফারুখ ইকবালেরও বাংলাদেশে বিনিয়োগ আছে এবং সেখানে তার একটি অফিসও আছে। বিবিসিকে তিনি বলেন, ‘মূল কারণ হল সেখানে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ভালো, তারা কাউকে পিস্তলের লাইসেন্স পর্যন্ত দেয় না। দ্বিতীয়ত, সহনশীলতার উপাদানটি খুব বেশি, যার একটি উদাহরণ এই যে, সেখানে যদি কোনো বিদেশি বিনিয়োগকারী আসে তবে তার খুব যত্ন নেওয়া হয়। ’
নিজের অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে তিনি বলেন, সেখানে শ্রম খুবই সস্তা এবং তাদের পণ্যের মান খুবই ভালো এবং গ্যাস-বিদ্যুতের সরবরাহ নিরবচ্ছিন্ন ও সস্তা।
বাংলাদেশে সিন্ধু থেকে গার্মেন্টস সেক্টরে বিনিয়োগকারী আদনান জাফর বলেন, বাংলাদেশে বিনিয়োগের যে সুবিধা রয়েছে তা থেকে অনুমান করা যায় যে, সেখানে দুই দিনে বিদ্যুৎ, গ্যাস ও পানির সংযোগ পাওয়া যায়। পাকিস্তানে এই সময়ে গ্যাস সংযোগ পাওয়া যায় না এবং বিদ্যুৎ সংযোগ পেতে দুই বছর সময় লাগে।
তিনি জানান, তিনি পাকিস্তান থেকে বসে অনলাইনের মাধ্যমে বাংলাদেশে তার কারখানার কাজ দেখছেন এবং এখন পর্যন্ত কোনো সমস্যার সম্মুখীন হননি।
পাকিস্তানের গার্মেন্টস সেক্টরের রপ্তানিকারক সংস্থার সাবেক চেয়ারম্যান ইজাজ খোখার বলেন, ‘পোশাক খাতে বাংলাদেশের অগ্রগতির অন্যতম কারণ হল এর পণ্যের লাইন। তারা এই খাতে প্রচুর পণ্য তৈরি করছে অথচ আমরা এখন পর্যন্ত মাত্র চার-পাঁচটি পণ্য রপ্তানি করতে পেরেছি। ’
তিনি বলেন, ‘পাকিস্তানে শার্ট, বিশেষ করে নারীদের শার্ট খুব কমই তৈরি হয়, যেখানে বাংলাদেশ নারীদের অন্তর্বাসের ক্ষেত্রে অনেক এগিয়ে গেছে। সবচেয়ে বড় পার্থক্য তাদের কর্মশক্তি। বাংলাদেশে গার্মেন্টস সেক্টরের ৮০ শতাংশ কর্মী নারী, যেখানে পুরুষের সংখ্যা ২০ শতাংশ। নারীরা আট ঘণ্টার শিফটে সাড়ে সাত ঘণ্টা কাজ করেন, অন্যদিকে পুরুষদের ক্ষেত্রে এই হার পাঁচ থেকে ছয় ঘণ্টার মধ্যে। পাকিস্তানে পোশাক খাতের কর্মক্ষেত্রে নারী মাত্র ১০ শতাংশ। এছাড়া বাংলাদেশে বড় পোশাক কারখানার সংখ্যা অনেক বেশি এবং তা ৩০ থেকে ৪০ শতাংশের মধ্যে, যেখানে পাকিস্তানে মাত্র সাত শতাংশ। ’
পাকিস্তানে শিল্প খাতে কর্মরত নারীদের সম্পর্কে ড. হাফসা বলেন, ‘বাংলাদেশের গল্প খুবই চিত্তাকর্ষক, কিন্তু পাকিস্তানে এর বিপরীত। কোনো কারিগরি শিক্ষা ছাড়া নারীদের সরকার কয়েক হাজার টাকা দেয় যা বিভিন্ন সরকারি প্রকল্পের মাধ্যমে দেওয়া হয়। এমন পরিস্থিতিতে নারীরা কীভাবে উৎপাদন ব্যবস্থার অংশ হতে পারে?’
বাংলাদেশ সময়: ১৬৫৩ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২৬, ২০২৩