বাগেরহাট: ৪০তম বিসিএসে শিক্ষা ক্যাডারে সুপারিশ পেয়ে ভোলার লালমোহন কলেজে অর্থনীতি বিষয়ে প্রভাষক হিসেবে যোগদান করেছিলেন বাগেরহাটের মেধাবী তরুণ পল্লব বসু বাপ্পি।
৪১তম বিসিএসে ফুড ক্যাডারে সুপারিশপ্রাপ্ত হয়েছিলেন।
গত ২৬ ডিসেম্বর প্রকাশিত ৪৩ তম বিসিএসের ফলাফলে প্রশাসন ক্যাডারে সুপারিশপ্রাপ্ত হন পল্লব। স্বপ্ন পূরণ হলেও তা ভোগ করে যেতে পারলেন না এই তরুণ। এই ফল দেখে যাওয়ার সৌভাগ্য হয়নি তার। ফল প্রকাশের সাত দিন আগে ২০ ডিসেম্বর হৃদ্রোগে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু হয়েছে তার।
বাগেরহাটের কচুয়া উপজেলা সদরের মৃত দেবু প্রসাদ বসুর ছেলে পল্লব বসু। খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি ডিসিপ্লিনের ১৪ ব্যাচের শিক্ষার্থী ছিলেন। পরবর্তীতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করেন তিনি।
অদম্য এই যুবকের মৃত্যুতে শোকের ছায়া নেমে এসেছে পরিবার ও এলাকাবাসীর মধ্যে। সেই শোককে আরও বেশি বাড়িয়ে দিয়েছে ৪৩ তম বিসিএসের ফল। বাপ্পির মৃত্যু ও সাফল্য যেন একসঙ্গে গাঁথা। কোনোভাবেই তার মৃত্যু মেনে নিতে পারছেন না পরিবারের সদস্যরা।
পরিবার সূত্রে জানায়, গত ২০ ডিসেম্বর নতুন বাড়ির কাজ শুরু করার জন্য ইট বালু ও রড রেডি করেন বাপ্পি। রাতে ব্যাডমিন্টন খেলতে গিয়ে বুকে ব্যথা অনুভব করেন। সেখানে অসুস্থ হয়ে পড়লে দ্রুত তাকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। তবে পল্লবকে আর বাঁচানো যায়নি।
পল্লব বসুর মা কল্পনা বসু বলেন, ওর বাবা মারা যাওয়ার পর থেকে দুই ভাই বোনকে লেখাপড়া শিখিয়েছি। আমার ছেলে সারা জীবন ভালো রেজাল্ট করেছে। স্বপ্ন ছিল প্রশাসন ক্যাডার হওয়ার। পল্লবের স্বপ্ন পূরণ হলো কিন্তু ও দেখে যেতে পারল না। ভগবান আমার বুকের ধনকে নিয়ে গেল।
সন্তানহারা মা আরও বলেন, আমাদের বসত ঘরটি খুব ভাল না। ছেলে চেয়েছিল ডুপ্লেক্স বাড়ি করতে। বাড়ি করার জন্য সবকিছু রেডি করেছে। এর মধ্যেই তার মৃত্যু হল।
আমার সব পড়ে আছে শুধু আমার ছেলে নেই বলে কান্নায় ভেঙে পড়েন পল্লবের মা।
পল্লব বসুর প্রতিবেশী জাহিদুল ইসলাম বুলু বলেন, পল্লবের মৃত্যু আমাদের খুবই কষ্ট দিয়েছে। এমন মৃত্যু আমরা প্রতিবেশী হয়ে মেনে নিতে পারছি না আর তার পরিবার কীভাবে নেবে। ৪৩ তম বিসিএসের ফল ওর মা যখন জেনেছে তখন থেকেই তিনি স্বাভাবিক নেই। পাগলের মত হয়ে গেছেন, তিনি শুধুই কান্না করছেন। তার দুঃখ যেন আরো বেড়ে গেল।
পল্লবের আরেক প্রতিবেশী তুহিন খান বলেন, পল্লবের অর্জনে আমরা সবসময় গর্ব করেছি। তিনি তিনবার বিসিএস দিয়েছেন। প্রতিবার তার রেজাল্ট ভালো হয়েছে। ব্যক্তি হিসেবে তিনি অত্যন্ত ভালো ছিলেন। মৃত্যুর আগে পল্লব বাড়িতে এসেছিলেন ডুপ্লেক্স বাড়ির কাজ শুরু করতে। বাড়ির সামনের জায়গায় পল্লব একটি ডুপ্লেক্স বাড়ি করতে চেয়েছিলেন। বাড়ির জন্য ইট-বালু রেডি করেছিলেন তিনি। সবকিছু সেভাবেই পড়ে আছে শুধু পল্লব নেই।
বাংলাদেশ সময়: ১৮১৬ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২৯, ২০২৩
এসএএইচ