ঢাকা, মঙ্গলবার, ১১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ২৪ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

শীতে দুর্ভোগ বেড়েছে ছিন্নমূল মানুষের

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২১১০ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১৩, ২০২৪
শীতে দুর্ভোগ বেড়েছে ছিন্নমূল মানুষের ছবি: জি এম মুজিবুর

ঢাকা: শীত খুব অতিরিক্ত পড়ছে দুইদিন থিকা। শীতের মইদ্দে কাজকাম কম।

প্যাসেঞ্জার কম, তাই আয়ও কম, সংসার চালাতে কষ্ট হচ্ছে, বলছিলেন রিকশাচালক আব্দুল্লাহ।

আবহাওয়া অধিদপ্তর বলছে, কয়েকটি জেলা বাদে কোথাও শৈত্যপ্রবাহ না চললেও প্রচণ্ড শীতে ঢাকাসহ সারাদেশেই জনজীবন পর্যুদস্ত। আবহাওয়াবিদরা বলছেন পুরো জানুয়ারিজুড়েই শীতের প্রকোপ থাকবে।

এদিকে শীতের তীব্রতা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ছিন্নমূল মানুষের দুর্ভোগও বেড়েছে। ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন শহরে রাস্তায়, ফুটপাতে, রেলস্টেশনে, মসজিদের বারান্দায় আশ্রয় নেওয়া ছিন্নমূল মানুষের শীত নিবারণের জন্য পর্যাপ্ত গরম কাপড়ের অভাব রয়েছে। এতে তারা কনকনে ঠান্ডায় কাবু হয়ে পড়ছেন।

এ অবস্থায় সবচেয়ে কষ্টে আছেন শ্রমজীবী, খেটে খাওয়া ও নিম্নআয়ের মানুষ। শীত ও ঠান্ডার কারণে কাজে বের হতে না পারায় দুর্ভোগে পড়েছেন তারা। শহর কিংবা গ্রামে শীতের দাপটে অনেকেই খড়কুটো জ্বালিয়ে শীত নিবারণের চেষ্টা করতে দেখা গেছে। গত ৩ সপ্তাহ ধরে তাপমাত্রা ১০ ডিগ্রি থেকে ১৮ ডিগ্রি সেলসিয়াসে ওঠানামা করছে।

ঢাকার কারওরান বাজারের ফুটপাতে রাতযাপন করেন এক নারী ও তার দুই শিশু। তারা জানান, তাদের কাছে গরম কাপড় নেই। তাই রাতে তারা রাস্তার পাশে আগুন জ্বালিয়ে শীত নিবারণ করেন। কিন্তু তাতেও শীতের কষ্ট কমছে না। রাজধানীর আরেক ছিন্নমূল ব্যক্তি নাম প্রকাশ না করে জানান, তিনি দিনমজুরি করেন। শীতের কারণে তার রোজগার কমে গেছে। তাই গরম কাপড় কেনার সামর্থ্য তার নেই।

ষাটোর্ধ্ব বৃদ্ধ ম‌তিলাল বলেন, দিনে থাকা গে‌লেও রাই‌তে জাড়ে (প্রচন্ড শীত) ঘুমে আইসে না। সরকার গরিব মাই‌নসেক (মানুষকে) কম্বল দেয় শুনেছু, ‌কোনো সময় একখানও পাইনি। আর অটোচালক জা‌হেদুল ইসলাম বলেন, শীতের জন্য রাস্তায় বেশিক্ষণ থাকা যাচ্ছে না। আর রাস্তায় মানু‌ষের চলাফেরাও ক‌মে গে‌ছে। এ কারণে রোজগার একেবারেই কমে গেছে।

এদিকে, ছিন্নমূল মানুষের দুর্ভোগ লাঘবে সরকার ও বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা বিভিন্ন উদ্যোগ নিয়েছে। তবে তা  পর্যাপ্ত নয় বলে মনে করছেন অনেকে। সরকারের সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনী কর্মসূচির আওতায় ছিন্নমূল মানুষদের মধ্যে কম্বল, গরম কাপড় ও খাদ্য সহায়তা প্রদান করা হচ্ছে। এছাড়াও, বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা ছিন্নমূল মানুষের জন্য শীতবস্ত্র বিতরণ করছে।

তবে, সরকার ও স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার এ উদ্যোগগুলো ছিন্নমূল মানুষের সব দুর্ভোগ লাঘব করতে সক্ষম হচ্ছে না বলে মনে করছেন অনেকে। তারা মনে করেন, ছিন্নমূল মানুষের জন্য স্থায়ী সমাধানের জন্য সরকারকে আরও কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে।

এদিকে, সর্বোচ্চ এবং সর্বনিম্ন তাপমাত্রার পার্থক্য যদি ১০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে আসে, সেখানে শীতের অনুভূতি বাড়তে থাকে। কিন্তু পার্থক্য যদি পাঁচ ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে নেমে আসে তবে শীতের অনুভূতি প্রকট থেকে প্রকটতর হয়। অর্থাৎ হাড়কাঁপানো শীত অনুভূত হয় বলে জানান বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তরের আবহাওয়াবিদ ড. মুহাম্মদ আবুল কালাম মল্লিক।

বাতাসের গতিবেগ তুলনামূলকভাবে একটু বেশি থাকার কারণে রাজশাহী, রংপুর, ময়মনসিংহ, সিলেট এবং ঢাকার পশ্চিমাঞ্চল ও খুলনার ওপরের দিকে যশোর, সাতক্ষীরা, কুষ্টিয়া, চুয়াডাঙ্গা- এসব অঞ্চলে শীতের অনুভূতি তীব্র থেকে তীব্রতর হচ্ছে বলে জানান এ আবহাওয়াবিদ। এছাড়াও ঊর্ধ্ব আকাশের বাতাস খুব ঠান্ডা হওয়ায় কোনো কোনো ক্ষেত্রে ‘জেড স্ট্রিম’ বা প্রচণ্ড গতিবেগ সম্পন্ন বাতাস কখনো নিচে নেমে আসছে, কখনো উপরে উঠে যাচ্ছে, যেটা ভাইব্রেট (কম্পন) হচ্ছে। অর্থাৎ ঊর্ধ্ব আকাশের বাতাসের নিম্নমুখী বিচরণ হচ্ছে। এ নিম্নমুখী বিচরণও অনেক সময় শীতের অনুভূতিকে বাড়িয়ে দিচ্ছে বলে জানান আবহাওয়াবিদ ড. মুহাম্মদ আবুল কালাম মল্লিক।

বাংলাদেশ সময়: ২১১০ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১৩, ২০২৪
এইচএমএস/জেএইচ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।