ঢাকা, শুক্রবার, ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২২ নভেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

চা বাগানেই কুষ্ঠ রোগীর সংখ্যা বেশি

ডিভিশনাল সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট  | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১০৪২ ঘণ্টা, জানুয়ারি ৩১, ২০২৪
চা বাগানেই কুষ্ঠ রোগীর সংখ্যা বেশি

মৌলভীবাজার: বাংলাদেশের যেসব জেলায় কুষ্ঠ রোগের প্রাদুর্ভাব রয়েছে, তার মধ্যে সর্বাধিক মৌলভীবাজারে। ২০২৩ সালে এ জেলায় মোট ২৫৭ জন কুষ্ঠ রোগী শনাক্ত হন।

এর মধ্যে শিশু ১১ জন। পরীক্ষার হার বাড়লে রোগীর সংখ্যাও বাড়বে বলে শঙ্কা সংশ্লিষ্টদের।  

সম্প্রতি মৌলভীবাজারের কুষ্ঠ রোগের একটি প্রতিবেদন তুলে ধরা হয়েছে। এ রোগ নিয়ে বাংলাদেশে কাজ করছে বেসরকারি সংস্থা ‘লেপ্রা’। সংস্থাটির মৌলভীবাজার-হবিগঞ্জের এরিয়া সুপাইভাইজার জিয়াউর রহমান মৌলভীবাজারের কুষ্ঠরোগের অবস্থা নিয়ে বেশ ভয়ের কিছু তথ্য জানিয়েছেন।

কুষ্ঠ রোগে আক্রান্তদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত ধরা হয় ‘গ্রেড টু’ বলে চিহ্নিত রোগীদের। এ রোগীদের মূল চ্যালেঞ্জ ধরে কাজ শুরু করা সংস্থাটি বলছে মৌলভীবাজারে গ্রেড টু রোগীর সংখ্যা আশঙ্কাজনকভাবে বেশি। ২০২৩ মৌলভীবাজার জেলায় সাতজন গ্রেড টু কুষ্ঠ রোগী শনাক্ত হয়েছেন।  

লেপ্রার মৌলভীবাজার-হবিগঞ্জের এরিয়া সুপাইভাইজার জিয়াউর রহমান জানান, ২০২১ সাল থেকে মৌলভীবাজারে কুষ্ঠ রোগীদের নিয়ে কাজ করছে তাদের সংস্থাটি। মাঠ পর্যায়ে গিয়ে কুষ্ঠ রোগী শনাক্ত করার পাশাপাশি বিষয়টি নিয়ে সাধারণ মানুষকে সচেতন করতে ক্যাম্পেইনও করছে তারা।

লেপ্রা জানায়, ২০২২ সালে মৌলভীবাজারে মোট কুষ্ঠ রোগী শনাক্তের সংখ্যা ছিল ১৯৩ জন। ২০২৩ সালে তা বেড়ে দাঁড়ায় ২৫৭ জনে। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি কুষ্ঠ রোগী শনাক্ত হয়েছে কমলগঞ্জ উপজেলায়। এ উপজেলায় ২০২৩ সালে ৬৬ জন কুষ্ঠ রোগী শনাক্ত হন। একই বছর কুলাউড়ায় ৬২ জন, জুড়ীতে ৪৬ জন শ্রীমঙ্গলে ৩৫ জন, বড়লেখায় ২৬ জন, রাজনগরে ১৭ জন এবং সদরে মোট ৯ জন কুষ্ঠ রোগী শনাক্ত হন।

চা শ্রমিকদের কুষ্ঠ রোগে আক্রান্ত হওয়া নিয়ে জিয়াউর রহমান বলেন, মৌলভীবাজারে মোট শনাক্ত হওয়া কুষ্ঠরোগীর বেশিরভাগই পিছিয়ে থাকা চা শ্রমিক। মোট কুষ্ঠ রোগীর ৯৮ শতাংশই আসেন জেলার বিভিন্ন চা বাগান থেকে। এর অবশ্য আরেকটি কারণ আছে। চা বাগানগুলোতে সহজেই রোগীদের পরীক্ষার জন্য একত্র করা যায়। তাই পরীক্ষাও হয় বেশি। এ কারণে শনাক্তের হারও বেশি।

মৌলভীবাজার সিভিল সার্জন অফিস সূত্র জানায়, জেলায় ২০২৩ সালে শনাক্ত ২৫৭ জন কুষ্ঠ রোগীর মধ্যে চিকিৎসার আওতায় রয়েছেন ২১৭ জন। এর মধ্যে শিশু ১১ জন। দুজন মারা গেছেন। বাকিরা সুস্থ হয়ে গেছেন। কিন্তু, আক্রান্তের পরিমাণ আশঙ্কাজনক।

জিয়াউর রহমান বলেন, সিভিল সার্জনের উদ্যোগে পোর্টেবল এক্সরে সুবিধা চালু করায় এখন এক্সরে টিম নিয়ে ভ্রাম্যমাণ অবস্থায়ও রোগী শনাক্ত করা হয়। টিমটি যেখানে যায়, সেখানে ক্যাম্পেইনও করে। আমরা সার্ভে বাড়াতে পারলে কুষ্ঠ রোগী শনাক্তের সংখ্যা আরও বাড়বে।  

কুষ্ঠ রোগে আক্রান্ত রোগী বিনয় চাষা বলেন, আমার কুষ্ঠ হয়েছে এটা আমি নিজেও জানতাম না। শুধু পায়ে কিছু ঘা হয়েছিল দেখেছিলাম। আমি ফার্মেসি থেকে এর জন্য ওষুধও কিনে খাই। কিন্তু, দীর্ঘদিন ওষুধ খাওয়ার পরও আমার এই ঘা কমছিল না। অবশেষে, মৌলভী চা বাগানের এক ডাক্তার আমার এই রোগ শনাক্ত করেন। তিনি আমাকে জানান যে আমার কুষ্ঠ হয়েছে। পরে তিনি আরও দুইজন ডাক্তার নিয়ে আসেন। তারা আমাকে চিকিৎসা দেন। প্রায় এক বছর আমি ওষুধ খাই। এতে আমি কিছুটা সুস্থ হয়ে উঠি। পরে আরও ছয় মাস ওষুধ খাওয়ার পর এখন মোটামুটি আমি সুস্থ আছি।

মৌলভীবাজারের সিভিল সার্জন ডা. চৌধুরী জালাল উদ্দিন মোর্শেদ বলেন, কুষ্ঠ রোগে আক্রান্তের দিক দিয়ে দেশে শীর্ষ জেলা মৌলভীবাজার। বর্তমানে জেলায় যেসব রোগী রয়েছেন তাদের মধ্যে অপ্রাপ্তবয়স্করাই বেশি। মৌলভীবাজারে কুষ্ঠ রোগে আক্রান্তদের মধ্যে চা-বাগান এলাকাতেই রয়েছেন ৯০ শতাংশের বেশি।

তিনি আরও বলেন, সংক্রামক এ রোগ সম্পর্কে বিভিন্ন কুসংস্কার রয়েছে। অধিকাংশ রোগী সমাজ ও নিজের পরিবারে বৈষম্যের শিকার হচ্ছেন। আমরা চিকিৎসার পাশাপাশি রোগী ও তাদের পরিবারকে সচেতন করার কাজও চালিয়ে যাচ্ছি। পরিস্থিতির উন্নয়নে স্বাস্থ্য বিভাগ সক্রিয় রয়েছে। শনাক্ত কুষ্ঠ রোগীদের বিনামূল্যে চিকিৎসা সেবা দেওয়া হচ্ছে।

 বাংলাদেশ সময়: ১০৩৮ ঘণ্টা, জানুয়ারি ৩১, ২০২৪
বিবিবি/আরএইচ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।