চাঁদপুর: বাংলাদেশের প্রথম ও একমাত্র সচল সেচ প্রকল্প সংযুক্ত নেভিগেশন হচ্ছে চাঁদপুরের ‘চরবাগাদী পাম্প হাউজ’। আর এটি ১৯৭৮ সালে পানামা খালের আদলে তৈরি করা হয়।
সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, আবাদযোগ্য জমিতে সেচ, বন্যা নিয়ন্ত্রণ ও নিষ্কাশন ব্যবস্থাদির মাধ্যমে আধুনিক পদ্ধতিতে কৃষি উৎপাদন বৃদ্ধি করার লক্ষে পানি সম্পদ মন্ত্রণালয় ও বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড চাঁদপুর জেলার তিনটি ও লক্ষ্মীপুর জেলার তিনটিসহ মোট ছয় উপজেলা প্রকল্পভুক্ত করেন। এই সেচ প্রকল্পটি দেশের অন্যতম একটি সেচ প্রকল্প।
সেচ প্রকল্প এলাকায় ৫৩ হাজার হেক্টর, ২৮ হাজার ৫০০ হেক্টর চাষযোগ্য এবং ২২ হাজার হেক্টর সেচযোগ্য জমিতে ফসল উৎপাদন হয় ৩.৫৭ লাখ টন। উৎপাদিত ফসলের মধ্যে অন্যতম হয়েছে ধান এবং আলু। সেচ খাল হিসেবে ডাকাতিয়া নদীর ৫৮ কিলোমিটার ব্যবহার হচ্ছে এই প্রকল্পে। পাশাপাশি ডাকাতিয়া নদীর সঙ্গে ৭৫৪ কিলোমিটার সেকেন্ডারি খাল হিসেবে সংযুক্ত রয়েছে। এসব খালের ওপর নির্মাণ হয়েছে ২৮টি ব্রিজ। সেচ সুবিধার জন্য সেকেন্ডারি খালে পানি সরবরাহের জন্য পাম্প রয়েছে এক হাজার ৬০০টি।
যোগাযোগ ব্যবস্থা উন্নত হওয়ার পূর্বে একমাত্র এই নেভিগেশন পার হয়ে সেচ প্রকল্পের আওতাধীন চাঁদপুর জেলার চাঁদপুর সদর, ফরিদগঞ্জ ও হাইমচর উপজেলা এবং লক্ষ্মীপুর জেলার লক্ষ্মীপুর সদর, রায়পুর ও রামগঞ্জ উপজেলার অংশে বসবাসকারী ১০ লাখ মানুষ নৌপথের সুবিধাভোগ করে আসছে। অধিকাংশ মানুষ নৌকা ও ইঞ্জিন চালিত নৌকার মাধ্যমে খাদ্য শস্যসহ বাণিজ্যিক পণ্য পরিবহনে সেচ প্রকল্প এলাকার ডাকাতিয়া নদীর ৫৮ কিলোমিটার ব্যবহার করে আসছিল। পরিবহণ খরচ কম হওয়ায় বর্তমানে বাড়িঘর নির্মাণ সামগ্রীবাহী নৌযানগুলো এই নেভিগেশন গেট ব্যবহার করছে।
স্থানীয় বাসিন্দা গোলাপ খান বলেন, ছোট বেলায় স্লুইচগেট নির্মাণ হতে দেখেছি। এটি হওয়ায় আমাদের সেচ প্রকল্পের অভ্যন্তরে ধান আবাদ, অন্যান্য ফসল উৎপাদন এবং মৎস্য চাষে সুবিধা হয়েছে।
একই এলাকার বাসিন্দা মিজানুর রহমান বলেন, এটির ফলে এই অঞ্চলের লোকজনের চাষাবাদে অনেক উপকার হচ্ছে। অনেক মানুষের কর্মসংস্থান হয়েছে। বন্যা হলেও আমাদের ফসলের তেমন ক্ষতি হয় না।
সরেজমিন এবং স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, পানামা খালের আদলে এই স্লুইচগেট ও নেভিগেশন কার্যক্রম চালু অবস্থায় এটি দেখার জন্য বহু বছর থেকেই সাধারণ মানুষের আগ্রহ রয়েছে। বিশেষ করে বিকেল বেলায় বিভিন্ন অঞ্চলের মানুষে এখানে এসে কিছুটা সময় অবস্থান করেন এবং এটির নির্মাণ শৈলী উপভোগ করেন।
নেভিগেশন অপারেটর মনমোহন জানান, ১৯৭৮ সাল থেকে এই নেভিগেশন অপারেট চলছে। এই সময়ের মধ্যে আমি সহকারী অপারেটর থাকলেও মূল অপারেটর না থাকায় আমি এটির অপারেটরের দায়িত্ব পালন করছি।
চরবাগাদী পাম্প হাউজের নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা আনসার মো. মাইনুদ্দিন জানান, এটি রক্ষণাবেক্ষণে নিরাপত্তার দায়িত্বে আরও বেশি আনসার সদস্য থাকার কথা থাকলেও বর্তমানে ১২ জন দায়িত্ব পালন করছেন। জনবল বাড়ানো হলে আমাদের কাজ আরও সহজ হবে।
পানি উন্নয়ন বোর্ড চাঁদপুরের নির্বাহী প্রকৌশলী (যান্ত্রিক) মো. রুহুল আমিন বলেন, এই নেভিগেশন লক গেট এবং পাম্প হাউজের মাধ্যমে সেচ ও নিষ্কাশন মৌসুমে সাধারণ পানির যে তারতম্য থাকে তা নিয়ন্ত্রণ করা হয়। পানির তারতম্য সচল রাখার জন্য এই নেভিগেশন কার্যক্রম পরিচালনা করা হচ্ছে।
তিনি আরও বলেন, এই পাম্প হাউজে দুটি নেভিগেশন লক গেইট। যার দুপাশে চারটি লক রয়েছে। একটি লকের ওজন ২৫ টনের অধিক। প্রতিটি গেটর দৈর্ঘ্য ৯ মিটার এবং প্রস্থ ৭ মিটার। আমেরিকা ও জাপানের দুটি কোম্পানির মাধ্যমে এই নেভিগেশন স্থাপন করা হয়। এটি প্রতিবছর নির্দিষ্ট সময়ে মেরামত করা হয়। এই নেভিগেশন প্রকল্পটি ইজারার মাধ্যমে সরকার বার্ষিক ২২ লাখ টাকা রাজস্ব আয় করে।
বাংলাদেশ সময়: ১০৪৯ ঘণ্টা, জানুয়ারি ৩১, ২০২৪
এসএম