ঢাকা, শনিবার, ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

ট্রাফিকের হাতে ক্ষতিকর লেজার লাইট, বাড়ছে দৃষ্টি হারানোর শঙ্কা

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৮৫৩ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১৪, ২০২৪
ট্রাফিকের হাতে ক্ষতিকর লেজার লাইট, বাড়ছে দৃষ্টি হারানোর শঙ্কা

ময়মনসিংহ: সন্ধ্যা নামতেই প্রতিদিন ময়মনসিংহ নগরীর প্রতিটি সড়ক ও মহাসড়কের মোড়ে মোড়ে চোখে পড়ে সবুজ রঙের ক্ষতিকর আলোকরশ্মি। যানজট নিয়ন্ত্রণে এই আলোকরশ্মির ব্যবহার করছে খোদ ট্রাফিক পুলিশ ও সিটি করপোরেশনের যানজট নিয়ন্ত্রণে কর্মরত সদস্যরা।

এতে ট্রাফিক সিগন্যাল ও যানজট নিয়ন্ত্রণে ট্রাফিক সদস্যদের সুবিধা হলেও দৃষ্টি হারানোর শঙ্কা বাড়ছে সাধারণ মানুষ ও যান চালকদের। বিষয়টি নিয়ে ক্ষোভ অসন্তোষ সৃষ্টি হয়েছে ভুক্তভোগীসহ সচেতন মহলে।  

সরেজমিন ঘুরে দেখা যায়, নগরীর গাঙ্গিনাপাড় ট্রাফিক মোড়, নতুন বাজার, পাটগুদাম ব্রিজ মোড়, শম্ভুগঞ্জ বাজার মোড়, রহমতপুর বাইপাস, মাসকান্দা বাইপাস মোড়সহ জেলার ১৩টি উপজেলার প্রতিটি সড়ক ও মহাসড়কের মোড়ে মোড়ে ট্রাফিক সিগন্যাল ও যানজট নিয়ন্ত্রণে সন্ধ্যা নামতেই ব্যবহার হচ্ছে ক্ষতিকর লেজার লাইট।

অথচ এই লাইট ব্যবহারে রয়েছে আইনগত বিধিনিষেধ। কিন্তু ট্রাফিক বিভাগে কর্মরত খোদ পুলিশ সদস্যরাই মানছে না এই বিধিনিষেধ। ফলে পুলিশের পাশাপাশি সাম্প্রতিক সময়ে পাড়া-মহল্লার শিশু-কিশোরদের হাতে হাতে ছড়িয়ে পড়ছে এই ক্ষতিকর লেজার লাইট। প্রকাশ্যে খোলা বাজারে বিক্রিও হচ্ছে নগরীর অলিগলি বা মেলার স্টলগুলোতে। যা ব্যবহারে মনের অজান্তেই নীরবে ক্ষতি করে চলছে মানুষের দৃষ্টি শক্তির।      

এ নিয়ে নগরীর গাঙ্গিনাপাড় ও পাটগুদাম এলাকায় কয়েকজন অটোরিকশা ও মোটরসাইকেল চালকের সঙ্গে কথা হয় বাংলানিউজের।  

তাদের মধ্যে অটোরিকশা চালক মো. জহিরুল ইসলাম (২৭) বলেন, ট্রাফিক পুলিশের লেজার লাইট চোখে পড়লে কয়েক সেকেন্ডের জন্য চোখ ঝাপসা হয়ে যায়। এরপর চোখ স্বাভাবিক হলেও অস্বস্তি লাগে অনেকক্ষণ।

মো. মোশারফ হোসেন (২৫) নামে অপর এক অটোরিকশা চালক বলেন, এই লাইটের আলো চোখে পড়লে খুব খারাপ লাগে। কিন্তু এইটা ক্ষতিকর কি-না, তা আমি জানি না। তবে চোখ অনেক সমস্যা করে, আমি নিজেই এর প্রমাণ পেয়েছি।    

এ সময় মোটরসাইকেল চালক ও বেসরকারি চাকরিজীবী মো. তানভীর আহম্মেদ বাংলানিউজকে বলেন, লেজারের আলো চোখে পড়লে গাড়ির ব্রেক না কষে কোনো উপায় নেই। তখন চোখে আর কিছু দেখা যায় না। এতে হঠাৎ করে দুর্ঘটনার সম্ভাবনাও অনেক বেশি। তাছাড়া লেজারের আলো চোখের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর বলেই আমি জানি কিন্তু ট্রাফিক পুলিশ ব্যবহার করলে আমাদের কিছু বলার থাকে না।  

একই ধরনের মতামত দিয়েছেন চক্ষু বিশেষজ্ঞ ও ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ (মমেক) হাসপাতালের আবাসিক সার্জন ডা. মো. ফেরদৌস হাসান।  

তিনি বলেন, লেজারের আলোকরশ্মি চোখের রেটিনার জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর। এতে চোখের ম্যাকুলা বার্ন হয়। ফলে চোখে কম দেখাসহ স্থায়ী অন্ধত্বের শঙ্কা রয়েছে। কেউ উদ্দেশ্য করে এই আলোকরশ্মি চোখে মারলে চোখ ডেমেজ হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনাও প্রবল। তাই লেজার লাইট ব্যবহারে সতর্কতা অপরিহার্য।  

অভিন্ন বক্তব্য মমেক হাসপাতালের একাধিক চক্ষু বিশেষজ্ঞের। তাদের ভাষ্য- লেজার লাইটের আলো চোখে এসে পড়লে তৎক্ষণাৎ চোখ ঝাপসা হয়ে যায়। যা স্বাভাবিক হতে সময় লাগে কয়েক মিনিট। এতে অনেক সময় চোখ জ্বালাপোড়াসহ স্থায়ী অন্ধত্বের ঝুঁকি তৈরি হয়।  

এ বিষয়ে জানতে চাইলে জেলা ট্রাফিক পরিদর্শক (যানবাহন) মো. মাহাবুবুর রহমান বাংলানিউজকে বলেন, লেজার ব্যবহারের কারণে পথচারী ও যান চালকদের ক্ষতি হয়। তাই একসময় ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণে লেজার লাইট ব্যবহার করা হলেও এখন করা হয় না। অনেক আগেই লেজার ব্যবহার নিষেধ করা হয়েছে। তারপরও যদি কিছু থাকে সেগুলোও অতি দ্রুত ক্লোজ করা হবে।

বাংলাদেশ সময়: ০৮৫২ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১৪, ২০২৪
এসএম

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।