নড়াইল: ‘আপত্তিকর ভিডিও’ ছড়িয়ে দেওয়ার হুমকি দিয়ে নড়াইলের লোহাগড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) অনিমেষ বিশ্বাসের কাছে চাঁদা দাবি করেন অজ্ঞাতপরিচয় ব্যক্তি। দাবি অনুযায়ী ইউএনওর স্ত্রী বিপাশা বিশ্বাস ওই অজ্ঞাত হুমকিদাতার অ্যাকাউন্টে ১০ লাখ টাকা দেন।
গত ১২ মার্চ লোহাগড়া থানায় দেহরক্ষী আকাশ বিশ্বাসের নাম উল্লেখ্যসহ অজ্ঞাত আসামিদের নামে চাঁদাবাজির অভিযোগ এনে একটি মামলা দায়ের করেন ভুক্তভোগী বিপাশা বিশ্বাস। সেই মামলায় আকাশ বিশ্বাসকে গ্রেপ্তার দেখিয়ে বৃহস্পতিবার (১৪ মার্চ) কারাগারে পাঠানো হয়েছে।
শুক্রবার (১৫ মার্চ) ওই আনসার সদস্যকে গ্রেপ্তারের বিষয়টি বাংলানিউজকে নিশ্চিত করেছেন লোহাগড়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কাঞ্চন কুমার রায়।
গ্রেপ্তার আকাশ খুলনার ডুমুরিয়া উপজেলার রংপুর গ্রামের মৃত. নিহার বিশ্বাসের ছেলে। গত দুই বছর ধরে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার দেহরক্ষী হিসাবে দায়িত্ব পালন করে আসছিলে এই আনসার সদস্য আকাশ।
মামলার বিবরণীতে ইউএনও’র স্ত্রী বিপাশা বিশ্বাস জানায়, গত ১৭ ফেব্রুয়ারি অজ্ঞাতনামা এক ব্যক্তি আমার স্বামী লোহাগড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার ব্যবহৃত ব্যক্তিগত নম্বরের হোয়াটসঅ্যাপে কল করে জানায় তাদের কাছে একটি অশ্লীল ভিডিও আছে। ১০ লাখ টাকা না দিলে ভিডিওটি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল করে দেওয়া হবে।
এরপর একাধিকবার আমাদের স্বামী-স্ত্রীর মোবাইলফোনে হুমকি দেন অজ্ঞাতনামা চাঁদাবাজ। এক পর্যায়ে আমার ম্যাসেঞ্জারে একটি অশ্লীল ভিডিও সেন্ড করে চাঁদাবাজ চক্রটি। ভিডিওটি পুরোপুরি দেখার আগেই আনসেন্ড করে দেওয়া হয়।
বিপাশা জানান, বিষয়টিতে আমার স্বামী গুরুত্ব না দিলেও আমি আমার স্বামীর সম্মানসহ তার জীবনের নিরাপত্তায় কথা ভেবে দুশ্চিন্তায় পড়ি। তাৎক্ষণিক অন্যের কাছ থেকে টাকা নিয়ে আমার স্বামীর গাড়িযোগে লক্ষ্মীপাশা বাজারস্থ ব্র্যাক ব্যাংকের একটি বুথে গেলে গাড়িতে থাকা আনসার সদস্য আকাশ বিশ্বাস আমাকে বলেন, ‘ম্যাডাম, ব্র্যাক ব্যাংকের বুথ থেকে ডাচ বাংলা ব্যাংকে টাকা পাঠানো যায় না। ডাচ বাংলা ব্যাংকের বুথে গেলে টাকাটা পাঠানো যাবে। ’ তার এই বক্তব্যে আমি অবাক হই। কারণ, আমি ও আমার স্বামী ছাড়া এই ঘটনা আর কেউ জানে না। ডাচ বাংলার অ্যাকাউন্টে টাকা দিতে হবে সে কথা দেহরক্ষী জানলেন কীভাবে? তারপরও দ্রুত টাকা পাঠানোর জন্য দেহরক্ষী আকাশের কথামতো লক্ষ্মীপাশা বাজারস্থ ডাচ বাংলা ব্যাংকের বুথে গিয়ে ৬ লাখ ৯৪ হাজার টাকা হুমকিদাতার ডাচ বাংলা অ্যাকাউন্টে সেন্ড করি। পরে পর্যায়ক্রমে হুমকি দাতার অ্যাকাউন্টে সর্বমোট ১০ লাখ টাকা দিই। পরে আকাশের সেই পরামর্শের সূত্র ধরে তাকে সন্দেহ করি ও তার নামে মামলা করি।
ঘটনার বিষয়ে জানতে ইউএনও’র স্ত্রী বিপাশা বিশ্বাসের সঙ্গে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করেও সম্ভব হয়নি।
তবে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা অনিমেষ বিশ্বাস বাংলানিউজকে বলেন, বিষয়টি এখন বিচারাধীন। ফলে এ নিয়ে কোনো কথা বলতে চাই না।
এ বিষয়ে লোহাগড়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কাঞ্চন কুমার রায় বলেন, একটি চাঁদাবাজি মামলায় সম্পৃক্ততার কারণে ইউএনও’র দেহরক্ষী আকাশকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। প্রাথমিকভাবে তার জড়িত থাকার প্রমাণ পাওয়া গেছে। বিষয়টি সংশ্লিষ্ট বিভাগকে জানানো হয়েছে। সঙ্গবদ্ধ চাঁদাবাজচক্রকে ধরতে অভিযান অব্যাহত রয়েছে।
জেলা আনসার কমান্ড্যান্ট বিকাশ চন্দ্র দাস বাংলানিউজকে বলেন, ঘটনাটি শুনেছি, এটা আমাদের বাহিনীর জন্য স্পর্শকাতর।
এটা বিভাগীয় বিষয় হলে মামলা কিংবা আটকের আগে বিভাগীয় অনুমোদন প্রয়োজন কিনা? এ প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, অবশ্যই এটা আনসার বিভাগকে অবগত করা উচিত ছিল।
বাংলাদেশ সময়: ১৫৪৬ ঘণ্টা, মার্চ ১৫, ২০২৪
এসএএইচ