রাজশাহী: রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) আবাসিক হলে পেটের ভেতর ছুরিকাঘাতে আহত হয়েছেন এক শিক্ষার্থী। এ সময় ওই কক্ষে তার কলেজপড়ুয়া আপন ছোট ভাইও ছিলেন।
শুক্রবার (২২ মার্চ) রাত সাড়ে ১১টার দিকে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শাহ মখদুম হলের ৩৪১ নম্বর কক্ষে এ ছুরিকাহতের ঘটনা ঘটে। ঘটনার পর রক্তাক্ত ওই রাবি শিক্ষার্থীকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালের জরুরি বিভাগে নিয়ে যাওয়া হয়। পরে জরুরি বিভাগের চিকিৎসক তাকে ভর্তি নিয়ে ৪নং ওয়ার্ডে স্থানান্তর করেন।
আত্মহত্যার চেষ্টা করা ওই শিক্ষার্থীর নাম জয়দেব কুমার (২২)। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী। তার গ্রামের বাড়ি নোয়াখালী জেলার হাতিয়া উপজেলায়। ঘটনার সময় ওই কক্ষে ছিল তার ছোট ভাই দীপ্র কুমার। তিনি নোয়াখালীর চৌধুরী এসি কলেজের শিক্ষার্থী।
ঘটনার পর ওই হলের শিক্ষার্থীরা জানান, শুক্রবার রাত সাড়ে ১১টার দিকে হঠাৎ করে চিৎকার শুনে আশপাশের শিক্ষার্থীরা শাহ মখদুম হলের ৩৪১ নম্বর কক্ষের সামনে আসেন। এ সময় তারা জয়দেবের পেটের ভেতর ছুরি ঢুকে থাকতে দেখেন। ওই সময় তিনি নিজের শরীরে ছুরিকাঘাত করছিলেন এবং তার ছোট ভাইয়ের দিকে ইশারা করে বলতে থাকেন ‘তুই মেরেছিস’। এ অবস্থায় হলের কয়েকজন তাকে ধরাধরি করে দ্রুতভাবে ছুরিটি বের করেন। পরে পেটে কাপড় বেঁধে তাকে হাসপাতালে পাঠানো হয়।
আহত জয়দেবের রুমমেট বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামের ইতিহাস বিভাগের ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষের সাজ্জাদ হোসেন বলেন, চার-পাঁচ দিন ধরে জয়দেব মানসিকভাবে বিপর্যস্ত ছিলেন এবং অস্বাভাবিক আচরণ করছিলেন। তিনি বাড়িও যেতে চেয়েছিলেন। তবে বিভাগের অ্যাসাইনমেন্টসহ কিছু কাজ থাকায় যেতে পারেননি। শুক্রবার বেলা ১১টার দিকে তার ছোট ভাই ক্যাম্পাসে আসে। তারা দুই ভাই একসঙ্গে দুপুর ও রাতের খাবারও খেয়েছিল। তারপর হঠাৎ করেই রাতে এ ঘটনা ঘটে।
আর আহত রাবি শিক্ষার্থী জয়দেবের ছোট ভাই দীপ্র জানান, শুক্রবারই তিনি তার দাদার কাছে আসেন। রাতে একসঙ্গে খাওয়া-দাওয়াও করেন। দুজন শুয়ে পড়ার কিছুক্ষণ পর কেউ একজন দরজায় নক করেন। এ সময় তিনি দরজা খুলে দেন। তখন ঠিক তার পেছনে দাঁড়িয়েই তার দাদা নিজের পেটে ছুরি দিয়ে আঘাত করছিলেন এবং তাকে দোষারোপ করছিলেন। এরপর পরই অন্যরা সবাই ছুটে এসে এ ঘটনা দেখেন।
এদিকে খবর পেয়ে হল প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক রুহুল আমিন ঘটনাস্থলে যান। তিনি হলের অন্য শিক্ষার্থীদের সঙ্গে নিয়ে ওই কক্ষ পরিদর্শন করেন। পরে পৌনে ১২টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক আসাদুল্লা-হিল-গালিব এবং মতিহার থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোবারক পারভেজও কক্ষটি পরিদর্শন করেন।
এ সময় মতিহার থানার ওসি ওই রক্তাক্ত ছুরিটি উদ্ধার করে থানায় নিয়ে যান।
জানতে চাইলে রাজশাহীর মতিহার থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোবারক পারভেজ বলেন, ছুরিকাহত রাবি শিক্ষার্থীকে বর্তমানে রামেক হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। ঘটনার পর পুলিশ ওই কক্ষ থেকে প্রয়োজনীয় কিছু আলামত সংগ্রহ করেছে। তারা ঘটনাটি তদন্ত করে দেখছেন। ওই শিক্ষার্থী কিছুটা সুস্থ হলে জিজ্ঞাসাবাদ শেষ বোঝা যাবে প্রকৃত ঘটনা কী। তখন তারা সেই অনুযায়ী আইনি ব্যবস্থা নেবেন বলেও জানান ওসি।
বাংলাদেশ সময়: ১৯৪৯ ঘণ্টা, মার্চ ২৩, ২০২৪
এসএস/জেএইচ