ঢাকা, মঙ্গলবার, ১১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ২৪ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

ভুয়া ভিসায় ধরা, দালালের বাড়িতে ৬ যুবকের অনশন

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৭০৬ ঘণ্টা, মার্চ ৩০, ২০২৪
ভুয়া ভিসায় ধরা, দালালের বাড়িতে ৬ যুবকের অনশন দালালে বাড়ি ৬ যুবকের অনশন

জয়পুরহাট: দালালের খপ্পরে পড়ে ভুয়া ভিসায় শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে ধরা পড়েন জয়পুরহাটের কালাই উপজেলার ছয় যুবক।  

এরপর থেকে তারা দালালের বাড়িতে অবস্থান করছেন।

গত ছয়দিন ধরেই সেই বাড়িতে অবস্থান করা এসব যুবকের দাবি, আর বিদেশ নয়, টাকা ফেরত নিয়ে নিজ বাড়িতে ফিরতে চান।  

টাকা না দিলে দালালের বাড়িতেই সবাই শরীরে কেরাসিন ঢেলে আগুন জ্বালিয়ে আত্মহুতির হুমকিও দিয়েছেন তারা।

বৃহস্পতিবার (২৮ মার্চ) সকালে উপজেলার জিন্দারপুর গ্রামের বাসিন্দা ও দালাল সুলতান মাহমুদ ওরফে মাবুদের বাড়িতে গেলে ওই ছয় যুবকের অবস্থান করতে দেখা যায়।

দালালের বাড়িতে অবস্থানরত যুবকেরা হলেন - উপজেলার পাঁচগ্রামের আতিকুল ইসলাম,খায়রুল ইসলাম,আব্দুল ওয়াদুদ, আলামিন তালুকদার, মোলামগাড়ীহাটের মেহেদি হাসান, জিন্দারপুর গ্রামের আবু তাহের।  

জানা যায়, জিন্দারপুর গ্রামের আব্দুর রাজ্জাকের ছেলে সুলতান মাহমুদ মাবুদের দীর্ঘদিন ধরে বিভিন্ন দেশে লোক পাঠান। আড়াই বছর আগে একই এলাকার পাঁচগ্রাম, মোলামগাড়ীহাট ও জিন্দারপুর গ্রামের ছয়জন যুবক একসঙ্গে মালয়েশিয়ায় যাওয়ার জন্য সাড়ে ৫ লাখ টাকা করে মোট ৩৩ লাখ টাকায় মাহমুদের সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ হন।

চুক্তির টাকাও তারা পরিশোধ করেন। কিন্তু ছয় মাস আগে মালয়েশিয়া নয়, তাজিকিস্তান পাঠানোর কথা বলেন মাহমুদ। তাতেও রাজি হন ওই যুবকেরা।

অনেক দেরিতে হলেও চলতি বছরের ১৮ মার্চ তাদের বাড়ি থেকে ঢাকায় নিয়ে যাওয়া হয় তাজিকিস্তানের উদ্দেশ্যে। ২০ মার্চ রাতে টিকিটসহ কাগজপত্র হাতে পেয়ে শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে উপস্থিত হন ওই ছয় যুবক।  
কিন্তু এয়ারপোর্টে চেকিংয়ে গিয়ে জানতে পারেন ম্যানপাওয়ার, ভিসা, বিএমইটি স্মার্টকার্ড জালিয়াতি করে তাদের ভুয়া কাগজপত্র দিয়েছেন দালাল মাবুদ। শুধু বিমানের টিকিটটাই আসল ছিল। এরপর এয়ারপোর্ট থেকে তাদের ফেরত আসতে হয়।

যুবকেরা আর নিজ বাড়িতে ফিরে না গিয়ে মাবুদের বাড়িতে অবস্থান নেন।

এদিকে দালাল সুলতাম মাহমুদের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, ছয়জন যুবক ওই বাড়িতে তাদের লাগেজ নিয়ে অবস্থান করছেন। সব ঘরের দরজা বন্ধ। বাড়িতে মা, বড় ভাই ও মামা রয়েছেন কিন্তু সুলতান মাহমুদই নেই।

এ সময় ভুক্তভোগী যুবকেরা বলেন, আমরা সবাই নিঃস্ব। এয়ারপোর্ট থেকে সরাসরি এসে এ বাড়িতে অবস্থান নিয়েছি। বুধবার রাতে মাহমুদের সঙ্গে দেখা হয়েছে। সমস্যা সমাধানের জন্য মাহমুদ বাড়িতে বৈঠকও করেছেন। কিন্তু পরে সুকৌশলে মাহমুদ বাড়ি ছেড়ে পালান।  

স্থানীয় থানায় কোনো অভিযোগ দিতে চান না ভুক্তভোগীরা।  

অবস্থানরত যুবক আতিকুল ইসলাম বলেন, ‘জমি বন্ধক রেখে সুলতান মাহমুদ মাবুদকে সাড়ে ৫ লাখ টাকা দিয়ে আজ বড় বিপদে পড়েছি। সবকিছু শেষ হয়ে গেছে। ছয়দিন ধরে এ বাড়িতে অবস্থান করছি। পুলিশ নয়, আমরা নিজেরাই এর সমাধান চাই। টাকা না পাওয়া পর্যন্ত এই বাড়ি থেকে যাব না। কপালে যা আছে তাই হবে। ’

আরেক যুবক আবু তাহের বলেন, ‘মালয়েশিয়াতে যাওয়া হয়নি তাতে কোনো সমস্যা নেই। তাজিকিস্তানে যাওয়ার দিন কেন ভুয়া কাগজপত্র দিয়ে আমাদের ফাঁসানো হলো? আমরা আর বিদেশ যাব না, টাকা ফেরত চাই। ’

তিনি অভিযোগ করেন, ‘মাবুদের সঙ্গে সমাধানের জন্য আমরা বসেছিলাম। কিন্তু ৯৯৯-এ ফোন করলে মাবুদকে পুলিশ এসে থানায় নিয়ে যায়। পরে আমরাও থানায় গিয়েছিলাম। পুলিশ মাবুদের বিরুদ্ধে অভিযোগ দিতে বলেছিল। কিন্তু আমরা অভিযোগ করিনি। পরে পুলিশ তাকে ছেড়ে দিয়েছে। এরপর থেকে মাবুদকে দেখছি না। ’   

ভুক্তভোগী যুবক আলআমিন বলেন, ‘২০ মার্চ রাতে একবুক স্বপ্ন নিয়ে এয়ারপোর্টে যাই। চেকিংয়ে গিয়ে জানতে পারি ম্যানপাওয়ার, ভিসা, বিএমইটি স্মার্ট কার্ড ভুয়া। শুধু বিমানের টিকিট ছিল আসল। তখন এয়ারপোর্টেই আমাদের আটক করতে চেয়েছিল পুলিশ। আমরা অনেক কাকুতি- মিনতি করে সেখান থেকে ফিরে আসি। তাই বাধ্য হয়ে দালালের বাড়িতে অবস্থান করছি। ’

জিন্দারপুর ইউনিয়ন পরিষদের ৪নং ওয়ার্ড সদস্য ও ওই গ্রামের বাসিন্দা রাজা মিয়া বলেন, ‘এ বিষয়ে সবকিছুই জানি। সুলতান মাহমুদ মাবুদ ধোঁকাবাজ। যারা আজ অবস্থান করছেন তারা সবাই দরিদ্র পরিবারের ছেলে। আসলে কেন যে যুবকেরা পুলিশের কাছে অভিযোগ না করে এই বাড়িতে অবস্থান করছেন তা বুঝে আসছে না। ’ 

অভিযোগের বিষয়ে দালাল সুলতান মাহমুদ ওরফে মাবুদ বলেন, ‘আমি যে এজেন্সির মাধ্যমে তাদের পাঠিয়েছি মূলত তারাই এসব ভুয়া কাগজপত্র তৈরি করেছে। তারা যে ভুয়া কাগজপত্র করেছে তার কিছুই আমি জানি না। টাকা ফেরত দেওয়ার ব্যাপারে আমি তাদের কাছে সময় চেয়েছি। বৈঠকে তারা আমাকে প্রাণনাশের হুমকি দিয়েছে, তাই আমি ৯৯৯ এ কল দিয়েছি। পুলিশ এসে আমাকে উদ্ধারের পর ছেড়ে দিয়েছে। ’

ছয় মাস আগে মালয়েশিয়াতে যাদের পাঠিয়েছেন তারা এখন বন্দি এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘তারা এখনো কাজ পায়নি, আমার হেফাজতেই তারা রয়েছেন। খরচ যা লাগছে দিচ্ছি। কয়েকদিনের মধ্যেই তাদেরও ব্যবস্থা হবে। ’  

এ বিষয়ে কালাই থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ওয়াসিম আল বারী বলেন, জরুরি সেবা ৯৯৯-এ কল পেয়ে পুলিশ পাঠিয়ে ওই দালালকে উদ্ধার করা হয়। প্রতারিত যুবকদের অভিযোগ দিতে ডাকা হয়েছিল কিন্তু তারা অভিযোগ দিতে নারাজ। সুলতান মাহামুদ মাবুদের বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ না থাকায় তাকে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। ’

বাংলাদেশ সময়: ১৬৫৭ ঘণ্টা, মার্চ ৩০, ২০২৪
এসএএইচ
 

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।