বগুড়া: বগুড়ায় দীর্ঘ ৪৩ বছর ধরে ফাঁকা পড়ে থাকা ভারী শিল্প কারখানার অধিগ্রহণকৃত ১৫ একর জমিতে অবশেষে স্টিল মিল স্থাপনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
বাংলাদেশ ইস্পাত ও প্রকৌশল করপোরেশন (বিএসইসি) এই জায়গায় ‘ঢাকা স্টিল ওয়ার্কস লিমিটেড’ নামে কারখানা স্থাপনের উদ্যোগ গ্রহণ করেছে।
সূত্র জানায়, গত শতাব্দীর ষাটের দশকে বগুড়া শহরের ফুলবাড়িতে ১৪ দশমিক ৫ একর জায়গা নিয়ে বিসিক শিল্পনগরী গড়ে তোলা হয়। বিসিকের ৭৯টি প্লটের সবগুলো দ্রুতই বরাদ্দ হয়ে যায়। ১৯৮০ সালে বিসিক শিল্পনগরী সম্প্রসারণের জন্য নতুন করে ১৮ দশমিক ৬৭ একর জমি অধিগ্রহণ করা হয়। একই সময় শিল্প-কলকারখানার ব্যাপক চাহিদা এবং দক্ষ শ্রমিকের কর্মসংস্থানের লক্ষ্যে বগুড়া-সান্তাহার সড়কের পাশে ছয়পুকুরিয়া মৌজায় ভারী শিল্প প্রতিষ্ঠার জন্যও ১৫ একর জমি অধিগ্রহণ করা হয়। পরের বছর অর্থাৎ ১৯৮১ সালের শুরুতে তৎকালীন রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান বগুড়ায় বিএসইসির ভারী শিল্প প্রকল্পের ভিত্তি স্থাপন করেন। তবে পরবর্তীকালে সেই প্রকল্প আর আলোর মুখ দেখেনি। এ কারণে ভারী শিল্পের জন্য কেনা ওই জায়গা কখনো ফাঁকা পড়ে থাকতো, কখনো হতো ধান চাষ।
২০১৬ সালের শেষ নাগাদ সেখানে প্রাচীর নির্মাণ করে উন্মুক্ত জায়গাটি ঘিরে নেয় বিএসইসি কর্তৃপক্ষ। পরবর্তীকালে সেখানে ট্রাক্টরসহ কৃষি যন্ত্রাংশ নির্মাণ কারখানা স্থাপনে আগ্রহী হয় বিএসইসি। এ কারণে নির্মিত প্রাচীরে ‘নর্দান এগ্রো মেশিনারিজ প্রকল্পে’র নির্ধারিত স্থান লেখা সাইনবোর্ড ঝুলিয়ে দেওয়া হয়। সেইসঙ্গে শেরে বাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল শিক্ষককে প্রকল্পের গবেষক হিসেবে নিযুক্ত করে বিএসইসি। এই প্রকল্পের গবেষক দল ২০২০ সালে সুপারিশমালাসহ ইতিবাচক একটি প্রতিবেদন বিএসইসির কাছে জমা দেন। ওই সুপারিশমালার আলোকে ছয়পুকুরিয়ার জায়গাটিতে স্টিল মিল স্থাপনের উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়।
বুধবার (০৩ এপ্রিল) দুপুরে বগুড়ায় উত্তরাঞ্চলের মধ্যে প্রথম স্টিল মিল স্থাপনের লক্ষ্যে ইতোপূর্বে পরিচালিত সমীক্ষা রিপোর্ট নিয়ে জনমত যাচাই ও এক মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়।
পরিবেশ অধিদপ্তরের রাজশাহী বিভাগীয় পরিচালক মুহা. আহসান হাবিবের সভাপতিত্বে ওই সভায় প্রধান অতিথি ছিলেন বিএসইসি’র পরিচালক (অর্থ) বদরুন নাহার। বিশেষ অতিথি ছিলেন বগুড়া সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আবু সুফিয়ান শফিক ও সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ফিরোজা পারভীন।
মতবিনিময় সভা শেষে বিএসইসির পরিচালক (অর্থ) বদরুন নাহার বলেন, এখানে শিল্পকারখানা স্থাপনের জন্য দীর্ঘদিন ধরেই চেষ্টা চলছে। এজন্যই সমীক্ষা রিপোর্ট প্রণয়ন করা হয়। সেখানে ইতিবাচক মতামত পাওয়ায় পরিবেশ ছাড়পত্রের জন্য মন্ত্রণালয়ে বলা হয়। বগুড়ায় যে স্টিল মিল স্থাপন করা হবে তা অবশ্যই পরিবেশবান্ধব হবে। পরিবেশের ওপরে যেসব ক্ষতিকর প্রভাব পড়তে পারে বিশেষ করে শব্দ দূষণ, বায়ু দূষণ ও পানি দূষণ হওয়ার যে আশঙ্কা তা নিয়ে স্টাডি করা হয়েছে। সেসব এড়িয়ে কীভাবে কাজ করা যায় সেই উদ্যোগ নেওয়া হবে। এজন্য দ্রুত সময়ের মধ্যে প্রকল্প সারপত্র পরিকল্পনা কমিশনে জমা দেওয়া হবে। প্রকল্পের সম্ভাব্য ব্যয় এক হাজার ৮০০ কোটি টাকা ধরা হয়েছে বলেও জানান তিনি।
বাংলাদেশ সময়: ১৯২৫ ঘণ্টা, এপ্রিল ০৩, ২০২৪
আরএ