ঢাকা, শনিবার, ১৩ পৌষ ১৪৩১, ২৮ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৫ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

জাতীয়

অভিযানে গিয়ে ‘পুলিশের হামলার শিকার’ মৎস্য অধিদপ্তরের সদস্যরা

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২১০৫ ঘণ্টা, এপ্রিল ৪, ২০২৪
অভিযানে গিয়ে ‘পুলিশের হামলার শিকার’ মৎস্য অধিদপ্তরের সদস্যরা

বরিশাল: হিজলা উপজেলায় অভিযানে গিয়ে ‘পুলিশের হামলার শিকার’ হয়েছেন মৎস্য অধিদপ্তরের নেতৃত্বাধীন অভিযানিক দলের সদস্যরা। হরিনাথপুর ফাঁড়ি পুলিশের সদস্যরা এ হামলা করে বলে অভিযোগ উঠেছে।

হামলার ঘটনাটি ঘটে বৃহস্পতিবার (৪ এপ্রিল)। ঘটনার একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। তবে, ঘটনাটি অস্বীকার করেছেন হরিনাথপুর পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ আব্দুর রহিম।

জানা গেছে, মৎস্য অধিদপ্তর ও নৌ পুলিশের সদস্যরা গোপন সংবাদের ভিত্তিতে হিজলার হরিনাথপুরে অবৈধ জাল উদ্ধারের জন্য অভিযানে যায়। এটিকে কেন্দ্র করেই পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জের বিরোধ থেকে বিকেলে হামলার ঘটনাটি ঘটে।

হিজলা উপজেলার জ্যেষ্ঠ মৎস্য কর্মকর্তা মোহাম্মদ আলম জানান, বিপুল পরিমাণে অবৈধ জাল রয়েছে এমন সংবাদের ভিত্তিতে নৌ পুলিশের সদস্যদের সহযোগিতায় মৎস্য অধিদপ্তরের লোকজন হরিনাথপুর পুলিশ ফাঁড়ি সংলগ্ন এলাকায় একটি বাড়িতে অভিযানে যায়। সেখানে গিয়ে কোনো পুরুষ মানুষ পাওয়া যায়নি। পরে বাড়ির নারী সদস্যদের সাথে কথা বলে এক বস্তা অবৈধ জাল পায় অভিযানিক দল।

ওই বাড়ির নারীরা জানান, প্রায় এক সপ্তাহ আগে হিজলা ফাঁড়ি পুলিশের ইনচার্জসহ সদস্যরা অবৈধ জাল ও টাকা পয়সা নিয়ে গেছে। সম্প্রতি হরিনাথপুর ফাঁড়ি পুলিশ কোনো অভিযান চালিয়ে অবৈধ জাল পুড়িয়েছে বা ধ্বংস করেছে এমন তথ্যও মৎস্য বিভাগের কারও কাছে ছিল না।

মোহাম্মদ আলম বলেন, বিষয়টি জানার পর আমি হরিনাথপুর পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ আব্দুর রহিমকে ফোন দিয়ে ঘটনাস্থলে আসতে বলি। কাছাকাছি হওয়ায় তিনি অল্প সময়ের মধ্যেই আসেন, এ সময় তার সামনেই জাল নিয়ে যাওয়ার বিষয়টি আবারও উপস্থাপন করেন স্থানীয়রা। সেইসাথে অভিযানিক দলের সদস্যরাও তার কাছে এ বিষয়ে জানতে চান। এতে ফাঁড়ির ইনচার্জ আব্দুর রহিম ক্ষিপ্ত হয়ে যান এবং আমাদের অভিযানিক দলের সাথে থাকা মাঝিদের গালাগাল শুরু করেন এবং সবার সাথে খারাপ আচরণ শুরু করে।

তিনি আরও বলেন, এরপর ঘটনাস্থল থেকে হিজলা সদরে চলে আসার পথে হরিনাথপুর পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ আব্দুর রহিমসহ একাধিক পুলিশ সদস্য সিভিল ড্রেসে আমাদের যানবাহনের গতিরোধ করে। যার মধ্যে দুজন পুলিশ সদস্য নেমেই থ্রি-হুইলারের সামনে থাকা মাঝি সাইফুল ইসলামকে গালাগাল ও মারধর করে। একপর্যায়ে এক পুলিশ সদস্য লাঠি নিয়ে তেড়ে গেলে অন্যরা তাতে বাধা দেয়। তখন মাঠ কর্মী হানিফ, মাঝি ইয়াসিনসহ বেশ কয়েকজন তাদের হামলার শিকার হন। একই সময়ে মোটরসাইকেল থেকে নেমে পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ আব্দুর রহিম আমাকে গালাগাল করেন এবং দেখে নেওয়াসহ বিভিন্ন ধরণের হুমকি ধমকি দিতে থাকেন। পরে বিষয়টি হিজলা থানা পুলিশ ও নৌ-পুলিশের ওসিকে বিষয়টি জানিয়ে সেখান থেকে চলে আসি।

এ বিষয়ে হরিনাথপুর পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ পরিদর্শক আব্দুর রহিম বলেন, মৎস্য অধিদপ্তর ও নৌ পুলিশের সদস্যদের অভিযানের বিষয়টি আমার জানা নেই। তখন আমি অফিসে ছিলাম। বিকেল ৪টার দিকে মৎস্য বিভাগের কর্মকর্তা আমাকে ফোন দিয়ে সেখানে যেতে বলেন। আমি গেলে মৎস্য বিভাগের কর্মকর্তারা জানায়, আমি নাকি ওই বাড়িতে কয়েকদিন আগে অভিযান চালিয়েছি। তখন আমি বলেছি, জাল ও মাছের বিষয় মৎস্য বিভাগ দেখে বলে এ ধরণের কোনো বিষয় আমরা অগ্রিম কিছু করি না। এরপর ওই বাড়ির মহিলারাও আমার সামনে অভিযোগের বিষয়টি অস্বীকার করেন।

তিনি বলেন, এরপর সেখান থেকে থানায় চলে আসার পথে অভিযানিক দলের সাথে আবারও দেখা হয় এবং কথা হয়। তখন মৎস্য বিভাগের মাঝি ওই এলাকার লোকদের ডাক দিয়ে আমাদের মারতে বলে। সে সময় আমি মৎস্য বিভাগের কর্মকর্তাকে বিষয়টি শান্ত করতে বলি এবং আমার ফোর্সরাও পরিস্থিতি শান্ত করার চেষ্টা করে। বিষয়টি আমি আমার থানার ওসিকেও জানিয়েছি।

তবে প্রকাশ পাওয়া ভিডিওতে দেখা গেছে, একটি মোটরসাইকেল থেকে নেমে পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ আব্দুর রহিম মৎস্য কর্মকর্তাকে শাসাচ্ছেন। তার দুই সহযোগী অভিযানিক দলের সদস্যদের অকথ্য ভাষায় গালাগাল ও বেদম মারধর করছে। নৌ পুলিশের সদস্যরা সবাইকে ছাড়ানোর চেষ্টা করছেন।

প্রকাশ্যে এভাবে কাউকে মারধর পুলিশ সদস্যরা করতে পারে কি না জানতে চাইলে পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ আব্দুর রহিম বলেন, মারধর নয় পরিস্থিতি শান্ত করেছে পুলিশ সদস্য এনাম ও শাকিল। আমরা সবাইকে সরিয়ে দিয়েছি, আপনি পুরো ভিডিও ভালোভাবে দেখেন।

পুরো বিষয়ে হিজলা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জুবাইর আহমেদ কিছুই জানেন না বলে জানিয়েছেন। তবে প্রকাশ্যে কোনো পুলিশ সদস্য কাউকে মারধর করলে কিংবা সরকারি কর্মকর্তাকে লাঞ্ছিত করলে সে বিষয়ে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার সাথে কথা বলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলেও তিনি জানান।

জেলা পুলিশের শীর্ষ কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, ভিডিও পাওয়ার পর বিষয়টি খতিয়ে দেখার জন্য বলা হয়েছে।

হিজলা নৌ পুলিশের ইনচার্জ তরিকুল ইসলাম জানিয়েছেন, অভিযানে গিয়ে থানা পুলিশের সাথে মৎস্য বিভাগের কর্মকর্তাদের ঝামেলা ও হাতাহাতি হয়েছে। ঘটনাস্থলে নৌ পুলিশের সদস্যরা ছিল, তবে পুরো বিষয়টি এখনও বিস্তারিত জানি না। আর যেহেতু থানা পুলিশের সদস্যদের সাথে হয়েছে তাই আমরা এ বিষয়ে এখন পর্যন্ত কাউকে জানাইনি।

বাংলাদেশ সময়: ২১০৬ ঘণ্টা, এপ্রিল ৪, ২০২৪
এমএস/এমজে

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।