ঢাকা, শনিবার, ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

থাকেন গুহায়, ১২ বছর কথা বলবেন না এই সাধু

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৭০৬ ঘণ্টা, এপ্রিল ৮, ২০২৪
থাকেন গুহায়, ১২ বছর কথা বলবেন না এই সাধু রঞ্জিত সাধু

নীলফামারী: ফলমূল শাক-সবজি খেয়ে জীবন নির্বাহ করেন তিনি। এভাবে তিন বছর কাটিয়ে দিয়েছেন অন্ধকার গুহায়।

আরও ৯ বছর থাকবেন সেই গুহায়। নাম তার রঞ্জিত সাধু।

জীবনের প্রয়োজনে যা কিছু প্রয়োজন তা ইশারায় ও লিখে জানান। এজন্য কথা বলেন না কারো সঙ্গে।

২০১৯ ও ২০২০ পর পর দুবার ভারতে তীর্থস্থান ভ্রমণ করতে গিয়ে এমন প্রতিজ্ঞা করেছেন রঞ্জিত সাধু নামের ওই ব্যক্তি। ভাতের পরিবর্তে কলা, ভুট্টার গুঁড়া, চালের গুঁড়া, শাকসবজি খেয়ে একাকী নদীর ধারে বাড়ি ও উপাসনালয় তৈরি করে বসবাস করছেন তিনি। তার বাড়ি নীলফামারীর জলঢাকা উপজেলার ধর্মপাল বাইটকা টারির এলাকায়।

পারিবারিক সূত্র জানায়, তিন বছর আগে ভারতে তীর্থস্থান ভ্রমণে যান রঞ্জিত সাধু। পরে সেখান থেকে ফিরে এসে বলেন, সংসার হলো কামনা-বাসনা। সেখানে থেকে ধর্মীয় কাজ সিদ্ধ করা সম্ভব না। তাই সংসারের মায়া থেকে দূরে গিয়ে একাকিত্বভাবে জীবন অতিবাহিত করবেন। সাধুদের কথা না বলাই শ্রেয়।  

এভাবেই গুহায় বসবাস করছেন রঞ্জিত সাধু

এজন্য তিনি কথা বলবেন না, ভাতও খাবেন না। তবে প্রয়োজনে ইশারায় ও খাতায় লিখে নিজের মনের ভাব প্রকাশ করেন রঞ্জিত।

এ বিষয়ে তার ভাতিজা নন্দী রায় বলেন, কাকা ভারতের সাধুদের জীবনযাপন অনুসরণ করে এমন সংকল্প করেছেন। আমরা তাকে নিয়ে গর্ববোধ করি। কারণ আমরা ওনার মতো ধর্মপালন করতে পারি না। তিনি খাদ্য হিসেবে শুধু শাকসবজি, ডাল, ভুট্টা গুঁড়া খেয়ে বেঁচে আছেন।

রঞ্জিত সাধুর বড় ছেলে হীরেন্দ্র নাথ রায় বলেন, বাবা ভারত থেকে আসার পর জানান, তিনি ১২ বছর বাসায় আসবেন না, কথাও বলবেন না। আরও জানান, তিনি ভাতও খাবেন না।

বিষয়টি আমাদের প্রথমদিকে একটু খারাপ লাগলেও এখন আর কষ্ট হয় না। তিনি আরও বলেন, একাকী বসবাসের জন্য বাবা নদীর পাড়ে খড়ের ঝুপড়ি ঘর তৈরি করেছিলেন। পরবর্তী সময়ে বৃষ্টি ও ঝড়ে ঘরটি ভেঙে গেলে আমরা নতুন করে একটি উপাসনালয় ও থাকার মতো একটি টিনের ঘর নির্মাণ করে দিই। গুহাটি প্রায় ১০ ফুট মাটির নিচে। এভাবে তিনি খেয়ে পড়ে ভালো আছেন। কোনো ডাক্তার দেখাতে হয়নি।

রঞ্জিত সাধু খাতায় লিখে জানায়, সংসার হলো কামনা-বাসনা। ১২ বছর পার হলেও আমি আর সংসারে ফিরে যাব না। তখন আমি কথা বলব সবার সঙ্গে। এখানে আমি জীবন শেষ করতে চাই। আমাকে যেন সংসারে ফিরিয়ে না নেওয়া হয়। এ কারণে ১২টি বছর সংসার জীবন থেকে দূরে থাকব। কামনা-বাসনাও পরিত্যাগ করেছি, করেছি পরিবারের মোহ ত্যাগ।

রঞ্জিতের পরিবারে স্ত্রী, তিন ছেলে ও এক মেয়ে রয়েছেন। তিনি গুহার ভেতরে বসে ধর্মীয় কাজ ও লেখালেখি করে সময় কাটান।

বাংলাদেশ সময়: ১৭০৬ ঘণ্টা, এপ্রিল ০৮, ২০২৪
এসএএইচ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।