ঢাকা, মঙ্গলবার, ১১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ২৪ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

পোশাকশ্রমিকদের রেশনিংয়ের জন্য বাজেটে বরাদ্দের দাবি

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫০২ ঘণ্টা, এপ্রিল ২৯, ২০২৪
পোশাকশ্রমিকদের রেশনিংয়ের জন্য বাজেটে বরাদ্দের দাবি

ঢাকা: স্বল্প আয়ের মানুষের জন্য সরকার যেভাবে এক কোটি টিসিবির কার্ডের ব্যবস্থা করেছে। একই ভাবে পোশাকশ্রমিকদের রেশনিং ব্যবস্থা নিশ্চিত করার জন্য আসন্ন বাজেটে আলাদা বরাদ্দের দাবি জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।

সোমবার (২৯ এপ্রিল) জাতীয় প্রেসক্লাবের তোফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়া মিলনায়তনে ‘গার্মেন্টস শ্রমিকদের জন্য রেশনিং ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে আসন্ন বাজেটে বরাদ্দ’ শীর্ষক গোলটেবিল বৈঠকে বক্তারা এ দাবি জানান। এ গোলটেবিল বৈঠকের আয়োজন করে বাংলাদেশ গার্মেন্টস ও সোয়েটার্স শ্রমিক ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্র।  

শ্রমিক নেতা আবুল হোসেন বলেন, প্রধানমন্ত্রী যেহেতু ১ কোটি লোকের জন্য রেশনিং ব্যবস্থা করেছেন, সে জায়গায় আরও ৪৭ লাখ শ্রমিকের রেশনিং ব্যবস্থা করা প্রধানমন্ত্রী জন্য তেমন একটা কঠিন বিষয় হবে না। এখানে মালিক পক্ষ যদি সরকারের সঙ্গে এ বিষয়ে কথা বলে তাহলে হয়তো বিষয়টা কার্যকর হতে পারে।

আসছে বাজেটে আলাদা করে রেশনিং ব্যবস্থার ওপর আলাদা বরাদ্দ থাকার প্রয়োজন আছে মন্তব্য করে সিপিডির সম্মানীয় ফেলো ড. মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, আমাদের দেশে ট্রেড ইউনিয়ন করতে অনেক কষ্ট করতে হয়। সেখানে রাষ্ট্র ও মালিক পক্ষ বাধা হিসেবে দাঁড়ায়। দেশের অর্থনীতি ও ট্রেড ইউনিয়নের অধিকার আমি আলাদা করে দেখতে পারি না, দুটোই এক। দেশে শ্রমিকের মজুরি নাকি ৫৬ শতাংশ বেড়েছে, সে তুলনায় বাজার মূল্য কি মজুরির সঙ্গে সামঞ্জস্য হয়েছে?

তিনি বলেন, শ্রমিক যদি ভালো থাকে তাহলে যেমন মালিক পক্ষের সুবিধা তেমনি রাষ্ট্রেরও সুবিধা হয়। কারণ শ্রমিক সুস্থ থাকলে তার থেকে আরও বেশি আউটপুট পাওয়া যাবে, উৎপাদনশীলতা বাড়বে। শ্রমিকের জন্য রেশনিং ব্যবস্থা চালু করলে তার ক্রয়ক্ষমতা বাড়বে, পাশাপাশি মালিকের ওপরও চাপ অনেক অংশে কমবে। আমরা আশা করব, আসছে বাজেটে রেশনিং ব্যবস্থার ওপর আলাদা বরাদ্দ থাকবে। শুধু রেশনিং ব্যবস্থা চালু করলেই হবে না, সুনির্দিষ্টভাবে বলতে হবে কোন ধরনের বা কী উপায়ে রেশনিং ব্যবস্থা করা হবে।

মহিলা পরিষদের সভাপতি ডা. ফৌজিয়া মোসলেম বলেন, নারীরা ঘর থেকে বেরিয়ে এসে গার্মেন্টস সেক্টরে ঢুকেছে বলে কারাকানাগুলো এত কম মূল্যে শ্রমিক পাচ্ছে এবং এই সেক্টর এতটা বিকশিত হয়েছে। তবে একজন নারীর ক্ষেত্রে গার্মেন্টসে কাজ করা অবস্থায় ৩৫ বছর হয়ে গেলে সে তখন আর কাজ করতে পারে না। মোট কথা তারা একটা বয়সে কর্মঅক্ষম হয়ে পড়বে। গার্মেন্টস সেক্টরে যে প্রণোদনা দেওয়া হয়, সেটা কোন খাতে ব্যবহার করা হয় তা দেখতে হবে। এটা কি বিনিয়োগ বাড়াতে ব্যবহার হয় নাকি শুধু বিদেশে পাচার করার জন্য ব্যবহার করা হয়। মোট কথা সামগ্রিক লক্ষটা যদি সুন্দর না হয় তাহলে কোনো কাজই পরিপূর্ণ সুন্দর হয় না।  

গার্মেন্টস সেক্টরে রেশনিং ভর্তুকি দিলে সরকারের সুনাম বাড়বে উল্লেখ করে বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (বিআইডিএস) মহাপরিচালক বিনায়ক সেন বলেন, দক্ষিণ এশিয়ায় গার্মেন্টস সেক্টরে উৎপাদনের মধ্যে বাংলাদেশ হচ্ছে ২১ শতাংশ। যেখানে ভারত ও পাকিস্তান হচ্ছে ১৪ শতাংশ। আর  সর্বোচ্চ হচ্ছে চীনের ২৯ শতাংশ। ভিয়েতনাম ২৪ শতাংশ। সে তুলনায় দক্ষিণ এশিয়ায় আমরা এগিয়ে থাকলেও আমাদের আরও অনেক দূর যেতে হবে। সর্বশেষ তথ্য মতে দেশের খাদ্যে মূল্যস্ফীতি ১২ শতাংশ। যে কারণে এখন থেকে শ্রমিকদের জন্য রেশনিং ব্যবস্থা চালু করা খুবই জরুরি। বিবিএস-এর জরিপেও দেখা যায় আমাদের দেশে আয় বৈষম্য অনেক বেড়েছে।

বাংলাদেশ ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্রের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আবুল কালাম আজাদ বলেন, রেশনিংয়ের বিষয়ে শ্রমিক কর্মচারী ঐক্য পরিষদের পক্ষ থেকে নিয়মতান্ত্রিক আন্দোলন করে দাবি জানানো হয়েছিল। এখনো দাবি জানানো হচ্ছে। এ বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী বরাবরও বলা হয়েছে। কিন্তু দুঃখের বিষয় হচ্ছে, এ বিষয়ে কোনো কিছুই হয়নি। বঙ্গুবন্ধু দেশের শ্রমিকদের যে নজরে দেখেছেন, তার কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সেই নজরে দেখেন কি না, তা নিয়ে সন্দেহ আছে। কারণ ট্যানারি ট্রান্সফার করে যখন সাভেরের দিকে নিয়ে যাওয়া হয় তখন প্রধানমন্ত্রী মালিকদের বলেছেন শ্রমিকদের বাসস্থানের ব্যবস্থা করার জন্য। কিন্তু আজ অবদি এর কোনো ব্যবস্থা করা হয়নি। তার মানে বোঝা যাচ্ছে প্রধানমন্ত্রীর কথা মালিকরা শুনছেন না। বর্তমান সরকারের সম্পর্কে শ্রমিকদের ধারণা হলো, সরকার আর মালিক পক্ষ হচ্ছে এক, যা কখনই সুখকর নয়। শ্রমিকদের বেতন যদি সময়মতো দেওয়া হয় তাহলেই অর্ধেক শ্রমিক অসন্তোষ কমে যাবে।

বিজিএমইএ’র ভারপ্রাপ্ত সভাপতি নজরুল ইসলাম বলেন, শ্রমিকদের রেশনিং ব্যবস্থা করতে হলে সরকারকে অবশ্যই এগিয়ে আসতে হবে। সাধারণ মানুষকে টিসিবির পণ্য কম মূল্যে দিয়ে যে সুবিধা দেওয়া হচ্ছে, সেখানে যাদের ওপর দেশের অর্থনৈতিক অবস্থা নির্ভর করে তাদের জন্য সামান্য রেশনিং ব্যবস্থা চালু এত বড় কোনো বিষয় নয়। আমাদের শ্রমিকরা ট্রেড ইউনিয়ন থাকলে যে সুবিধা পাওয়ার কথা, সেখানে তারা তা পায় না। অনেকটা মিস ইউজ হয়। কোনো মালিক ট্রেড ইউনিয়নের বিপক্ষে না। তারা ভয় পায় ট্রেড ইউনিয়নের বাইরে থেকে যারা কলকাঠি নাড়ে তাদের।

মূল্যস্ফীতি বেড়ে গেলে শ্রমিকদের খাদ্য চাহিদা মেটাতে রেশনিং ব্যবস্থা চালুর প্রয়োজন আছে বলে মনে করেন বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক এম এম আকাশ। তিনি বলেন, গার্মেন্টস সেক্টরের ভ্যালু অ্যাডের একটি অংশ বিদেশিরা নিয়ে যায়। এর সামান্যটুকু যদি দেশে আনা যায় তাহলে শ্রমিকদের বেশির ভাগ চাহিদাই পূরণ করা যাবে। যখন ইনফ্লেশন বেড়ে যাবে তখন শ্রমিকদের খাদ্য চাহিদা মেটাতে রেশনিং ব্যবস্থা চালু করতে হবে। রেশনিংয়ের দাবিটা এত সামান্য দাবি, যা নিয়ে সরকারের কোনো চিন্তার কারণ নেই। কিন্ত কথা হচ্ছে, এই সামান্য দাবি কে পূরণ করবে? মালিক ও শ্রমিক পক্ষ সবাই বলছে, এটা সরকারকে দিতে হবে। বাজেটে এই টাকা বরাদ্দ দিতে দিতে তো ইনফ্লেশনের বাজারে শ্রমিকের কী হবে? তাই সরকারকে সুনির্দিষ্ট করতে হবে একজন শ্রমিক কী পরিমাণ রেশন পাবে, তার পরিবারের সদস্যরা কী পরিমাণ পাবে, তার শিশু বাচ্চা কী পরিমাণ পাবে তাও দেখতে হবে।

গোলটেবিল বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন বাংলাদেশ গার্মেন্টস ও সোয়েটার্স শ্রমিক ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্রের সভাপতি ইদ্রিস আলী। সঞ্চালনা করেন সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক কাজী রুহুল আমিন।

বাংলাদেশ সময়: ১৫০০ ঘণ্টা, এপ্রিল ২৯, ২০২৪
ইএসএস/এমজেএফ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।