মাদারীপুর: সমুদ্রপথে ইতালি যাওয়ার সময় ভূ-মধ্যসাগরের তিউনিসিয়ার উপকূলে নৌকাডুবিতে মৃত মাদারীপুরের পাঁচ যুবকসহ আটজনের মরদেহ বাড়ি দেশে আনা হয়েছে। এখন ঢাকা থেকে মরদেহগুলো বাড়িতে নেওয়ার অপেক্ষায় আছেন স্বজনরা।
বৃহস্পতিবার (২ মে) দুপুর ১২টা ২০ মিনিটের দিকে সৌদিয়া এয়ারলাইন্সের একটি ফ্লাইটে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে আট যুবকের মরদেহ আনা হয়। মরদেহ নিতে ভিড় করেন নিহতের স্বজনরা। কিন্তু ময়নাতদন্তের জন্য মরদেহগুলো পাঠানো হয় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল মর্গে। ফলে স্বজনদের শেষ দেখা পেতে অপেক্ষা করতে হচ্ছে আরও একদিন। শুক্রবার সকালে ময়নাতদন্তের পর পরিবারের কাছে মরদেহ বুঝিয়ে দেওয়ার হচ্ছে। এদিকে মৃত আটজনের মধ্যে পাঁচজনই মাদারীপুরের রাজৈর উপজেলার বাসিন্দা। অন্যরা পার্শ্ববর্তী গোপালগঞ্জের মুকসুদপুরের বাসিন্দা।
নিহতরা হলেন- মাদারীপুর জেলার রাজৈর উপজেলার কোদালিয়া গ্রামের মিজানুর রহমান কাজীর ছেলে সজীব কাজী (১৯), পশ্চিম স্বরমঙ্গল গ্রামের ইউসুফ আলী শেখের ছেলে মামুন শেখ (২২), সেনদিয়ার গ্রামের সুনীল বৈরাগীর ছেলে সজল বৈরাগী (২২), উত্তরপাড়ার পরিতোষ বিশ্বাসের ছেলে নয়ন বিশ্বাস (২৪), কেশরদিয়া গ্রামের কাওসার (২২), গোপালগঞ্জের মুকসুদপুর উপজেলার বড়দিয়া গ্রামের দাদন মিয়ার ছেলে রিফাদ (২১), ফতেয়পট্টি এলাকার মো. রাসেল (২০) ও গয়লাকান্দি গ্রামের পান্নু শেখের ছেলে ইসরুল কায়েস আপন (২২)।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, গত ১৪ জানুয়ারি মাদারীপুর জেলার রাজৈর ও গোপালগঞ্জ জেলার মুকসুদপুর উপজেলার বেশ কয়েকজন যুবক ইতালির উদ্দেশে বাড়ি থেকে বের হন। প্রথমে তারা প্লেনে করে লিবিয়া পৌঁছান। পরে গত ১৪ ফেব্রুয়ারি লিবিয়া থেকে দালালদের মাধ্যমে একটি ইঞ্জিনচালিত নৌকায় ইতালির উদ্দেশ্যে রওয়ানা দেন তারা। মাঝপথে তিউনিসিয়ার ভূ-মধ্যসাগরে নৌকার ইঞ্জিন ফেটে আগুন ধরে যায়। পরে ভূ-মধ্যসাগরেই যুবে যায় নৌকাটি। এতে রাজৈরের কোদালিয়ার সজীব কাজী, পশ্চিম স্বরমঙ্গল গ্রামে মামুন শেখ, সেনদিয়ার সজল বৈরাগী, কদমবাড়ির নয়ন বিশ্বাস ও কেশরদিয়া গ্রামের কাওসার, গোপালগঞ্জের মুকসুদপুরের রিফাদ, রাসেল ও আপনের মৃত্যু হয়। । এছাড়া এক পাকিস্থানী নাগরিকও মারা যান। খবর পেয়ে কয়েকজনকে জীবিত উদ্ধার করে স্থানীয় কোস্টগার্ড।
স্বজনদের অভিযোগ, মানবপাচারকারী চক্রের সক্রিয় সদস্য গোপালগঞ্জের মুকসুদপুরের গজারিয়া গ্রামের রহিম শেখ ও সুন্দরদী গ্রামের বাদশা কাজীর ছেলে মোশারফ কাজী প্রলোভন দেখিয়ে প্রত্যেকের কাছ থেকে নেন ১০-১৫ লাখ টাকা। পরে অতিরিক্ত যাত্রী বোঝাই করে ইঞ্জিনচালিত নৌকায় ইতালির উদ্দেশে রওনা করলে ঘটে এ দুর্ঘটনা।
ঢাকা থেকে ফোনে নিহত মামুন শেখের বড় ভাই সজীব শেখ বলেন, আমার ভাইসহ আট যুবকের মরহেদ দেশে এসেছে। এখন মরদেহ ময়নাতদন্তের জন্য ঢাকা মেডিকেলে নিয়েছে। একবার তিউনিসিয়ায় ময়নাতদন্ত হয়েছে, এরপরও আমাদের দেশে এটা করার প্রয়োজন ছিল না। বাড়িতে সবাই লাশের জন্য অপেক্ষা করছে, কখন যে যেতে পারব, বুঝতে পারছি না।
নিহত সজীবের বাবা মিজানুর রহমান কাজী বলেন, ছেলে মারা গেছে ফেব্রুয়ারি মাসে এখন মে মাস। লাশ দেশে আনা হলো দেরি করে, তারপরও ভোগান্তি। কখন আমার ছেলের মুখটা দেখতে পাব, সবাই লাশের অপেক্ষা করছে।
রাজৈর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আসাদুজ্জামান হাওলাদার বলেন, তিউনিসিয়ায় দুর্ঘটনায় নিহতদের পরিবারের পক্ষ থেকে কোনো আইনগত সহযোগিতা চাইলে করা হবে। এরই মধ্যে সরকারিভাবে মরদেহ দেশে আনা হয়েছে। পরিবারের অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে দালালদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
বাংলাদেশ সময়: ১১৫০ ঘণ্টা, মে ৩, ২০২৪
এসআই