ময়মনসিংহ: ময়মনসিংহের নান্দাইল উপজেলার বাসিন্দা সুরাইয়া খাতুন (৫২) র্যাব হেফাজতে মারা গেছেন। এ ঘটনার ময়নাতদন্ত শেষে একদিন পর তার দাফন করা হয়েছে।
শনিবার (১৮ মে) বিকেল ৩টার দিকে উপজেলার চন্ডিপাশা ইউনিয়নের বরুনাকান্দি গ্রামে মৃতের জানাজা শেষে পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয়।
এর আগে গত ১৬ মে রাতে রেখা আক্তার (২০) নামে এক গৃহবধূ হত্যা মামলার প্রধান আসামি নিহতের স্বামী তাইজুল ইসলাম মিলন ও তার মা সুরাইয়া খাতুনকে আটক করেন ভৈরব র্যাব ক্যাম্পের সদস্যরা। সেখান থেকে গতকাল শুক্রবার (১৭ মে) সকাল ৭টায় সুরাইয়া খাতুনকে ভৈরব উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
স্থানীয় চন্ডিপাশা ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান মো. শাহাব উদ্দিন ভূইয়া বাংলানিউজকে বলেন, শুনেছি ছেলেসহ মা সুরাইয়া খাতুনকে র্যাব ধরে নিয়ে যাওয়ার সেখানে অসুস্থ হয়ে তিনি মারা যান। এ ঘটনায় মরদেহ বাড়ি নিয়ে এলে নিহতের দুই মেয়ে ও পরিবারের স্বজনরা একটু আবেগপ্রবণ হয়ে দাফনে আপত্তি জানিয়েছিল। পরে স্থানীয় মুরুব্বিরা তাদের বুঝিয়ে মৃতের দাফন করা হয়েছে। এর আগে মৃতের সুরতহাল ও ময়নাতদন্ত হয়েছে।
রিপোর্ট পেলে মুত্যুর সঠিক কারণ জানা যাবে বলেও যোগ করেন তিনি।
নান্দাইল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আব্দুল মজিদ বলেন, কিশোরগঞ্জ জেলার নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ইসরাত জাহানের উপস্থিতিতে মৃতের সুরতহাল ও ময়নাতদন্ত করে মরদেহ সুন্দরভাবে দাফন করা হয়েছে। এনিয়ে কারো কোনো অভিযোগ বা আপত্তি নেই। ময়নাতদন্ত রিপোর্টেই মৃত্যুর সঠিক কারণ জানা যাবে।
র্যাব-১৪ ময়মনসিংহের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া অফিসার ও সহকারী পুলিশ সুপার মো. আব্দুল হাই চৌধুরী জানান, গত ১৬ মে রাতে গৃহবধূ রেখা আক্তার হত্যা মামলার আসামি স্বামী তাইজুল ইসলাম মিলন ও তার মা সুরাইয়া খাতুনকে আটক করেন ভৈরব ক্যাম্পে নিয়ে যায় র্যাব সদস্যরা। সেখানে সুরাইয়া খাতুন হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়লে র্যাব সদস্যরা ক্যাম্প থেকে তাকে হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন। ঘটনাটি নিয়ে ব্রিফ করে বিস্তারিত পরে জানানো হবে।
ভৈরব উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. বুলবুল আহমেদ সাংবাদিকদের জানান, শুক্রবার সকাল ৭টায় সুরাইয়া খাতুন নামের এক নারীকে হাসপাতালে নিয়ে আসেন র্যাব সদস্যরা। তাকে আনার পর কর্তব্যরত চিকিৎসক বিনিত দাস তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
মৃত অবস্থায় ওই নারীকে হাসপাতালে আনা হয়েছিল বলে জানান তিনি।
সূত্র জানায়, প্রায় দেড় বছর আগে নান্দাইল উপজেলার ভেড়ামারি গ্রামের কৃষক হাসিম উদ্দিনের মেয়ে রেখা আক্তারের সঙ্গে একই উপজেলার চন্ডিপাশা ইউনিয়নের বরুনাকান্দি গ্রামের আজিজুল ইসলামের ছেলে তাইজুল ইসলাম লিমনের বিয়ে হয়। বিয়ের পর থেকে তার স্বামী তাইজুল ইসলাম দুই লাখ টাকা যৌতুকের জন্য রেখাকে চাপ সৃষ্টি করেন। এরপর অটোরিকশা কিনতে রেখার পরিবার তার স্বামীকে ১ লাখ ৮০ হাজার টাকা দিলেও তিনি অটোরিকশা কেনেননি বলে রেখার পরিবারের অভিযোগ। পরে আরও একলাখ টাকা যৌতুক দাবি করলে টাকা দিতে অস্বীকার করেন স্ত্রী রেখা ও তার পরিবার। এরই মধ্যে গত ২৬ এপ্রিল রাতে যৌতুকের টাকার জন্য স্বামী তাইজুল ইসলাম লিমন, শ্বশুর আজিজুল ইসলাম ও শাশুড়ি সুরাইয়া খাতুন অন্তঃসত্ত্বা রেখাকে নির্যাতন করেন। এতে তিনি অসুস্থ হয়ে পড়লে ওই রাতেই তাকে পার্শ্ববর্তী ইশ্বরগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসার জন্য নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন। এ সময় তার স্বামী ও শাশুড়ি হাসপাতালে মরদেহ রেখে পালিয়ে গেলেও শ্বশুর আজিজুল ইসলামকে হাসপাতালের কর্মচারীরা আটক করে পুলিশে সোপর্দ করেন।
পরে শ্বশুরবাড়ির লোকজন গৃহবধূ রেখা ফাঁস নিয়ে আত্মহত্যা করেছে বলে জানায়। তবে হাসপাতালের চিকিৎসক জানায়, মৃতের গলায় ও শরীরে আঘাতের চিহ্ন আছে। এ ঘটনার খবর পেয়ে রেখার পরিবারের লোকজন মরদেহ হাসপাতাল থেকে নিয়ে ময়নাতদন্তের পর দাফন করে। এ ঘটনায় নান্দাইল থানায় গত ২ মে রেখার মা রমিছা বেগম ময়মনসিংহের নারী ও শিশু নির্যাতন দমন বিশেষ ট্রাইব্যুনালে মৃত রেখার স্বামী, শাশুড়ি ও শ্বশুরকে আসামি করে একটি মামলা দায়ের করেন।
পরে আদালতের বিচারক শুনানি শেষে নান্দাইল থানার ওসিকে মামলাটি এফআইআর করে তদন্তের নির্দেশ দিলে গত ১৩ মে নান্দাইল থানায় মামলাটি রেকর্ড করা হয়। বর্তমানে মামলাটি তদন্ত করছেন নান্দাইল থানার এস.আই নাজমুল হাসান।
বাংলাদেশ সময়: ২১৩৯ ঘণ্টা, মে ১৮, ২০২৪
এসএএইচ