সিলেট: ভারী বর্ষণ ও উজানের পাহাড়ি ঢলে সৃষ্ট বন্যার পানিতে নিমজ্জিত হয় সিলেটের সীমান্তবর্তী উপজেলাগুলো। সর্বনাশা ঢলের পানি নেমে যাওয়ার পরে অনেক স্থানে ভেসে উঠছে ক্ষতচিহ্ন।
শুক্রবার (৩১ মে) সীমান্তবর্তী উপজেলাগুলোর অনেক জায়গায় পানি কমতে শুরু করে। বানের পানি নেমে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে সড়কে ভেসে উঠছে ক্ষতচিহ্ন।
ঢলের পানির স্রোতের তোড়ে রাস্তাঘাট, বাড়িঘর, ব্রিজ-কালভার্ট ভেঙে বিশালাকারের গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। কোথাও ঢালাই রাস্তার পিচ উঠে গেছে। সেই সঙ্গে সড়কের পাশের সারি সারি গাছ শেকড় বেরিয়ে ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় আছে।
বিশেষ করে সিলেট-সালুটিকর-গোয়াইনঘাট সড়ক, রাধারনগর-জাফলং সড়ক, হাতিরপাড়া-মানিকগঞ্জ সড়কের সবকটি ভেঙে যানবাহন চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। ফলে এসব এলাকার যোগাযোগ ব্যবস্থা বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে। মানুষজন পায়ে হেঁটে ও কোথাও কোথাও ইঞ্জিন নৌকায় করে চলাচল করছেন।
উজানের সৃষ্ট ঢলে গত বুধবার (২৯ মে) ও বৃহস্পতিবার (৩০ মে) নৌকা ও বৈদ্যুতিক দুর্ঘটনায় দুইজনের মৃত্যু হয়েছে বলে জানা গেছে।
বুধবার বিদ্যুতের তারে জড়িয়ে কামাল উদ্দিন (২৭) নামে এক যুবকের মৃত্যু হয়। তিনি লেঙ্গুড়া ইউনিয়নের লেঙ্গুড়া গ্রামের সুরুজ আলীর ছেলে। পরদিন বৃহস্পতিবার বন্যার সময় নৌ দুর্ঘটনায় শামসুন্নাহার (৪২) নামে এক নারীর মৃত্যু হয়েছে। তিনি উপজেলার নন্দীরগাও ইউনিয়নের আরিফ উল্লাহর স্ত্রী।
এদিকে শুক্রবার পানি নেমে যাওয়া ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা পরিদর্শন করেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. তৌহিদুল ইসলাম। তিনি উপজেলার মধ্য জাফলং, পূর্ব জাফলং, লেংগুড়া, সদর ইউনিয়ন, পূর্ব আলীরগাঁও, ডৌবাড়ি ও পশ্চিম আলীরগাঁও এলাকা পরিদর্শন করেন।
জেলা প্রশাসনের তথ্য মতে, বন্যায় গোয়াইঘাটসহ কানাইঘাট, জৈন্তাপুর, কোম্পানীগঞ্জ, জকিগঞ্জ ছাড়াও বিয়ানীবাজার, গোলাপগঞ্জ ও সিলেট সদর উপজেলার ৬ লাখ ৪৩ হাজার ৪৭০ জন মানুষ বন্যা আক্রান্ত হন। দুর্গত এলাকাগুলোতে ৫৪৭টি আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হয়। এসব আশ্রয়কেন্দ্রে ৩ হাজার ৭৩৯ জন মানুষ আশ্রয় নেন।
দুর্গত এলাকাগুলোর মধ্যে জকিগঞ্জে নয়টি ইউনিয়নের আটটি প্লাবিত হয়। মোট ২ লাখ ৬৭ হাজার ৩০৯ জন জনসংখ্যার ১ লাখ ৪৮ হাজার ৫০০ জন বন্যা আক্রান্ত হন। জৈন্তাপুরে ছয় ইউনিয়নের মধ্যে তিনটি প্লাবিত হয়। মোট ২ লাখ ১২৮ জনের মধ্যে ৬৫ হাজার বন্যা আক্রান্ত হন। গোয়াইনঘাটে ১৩ ইউনিয়নের সবকটি প্লাবিত হয়। মোট জনসংখ্যার ৩ লাখ ৫৫ হাজার ৯৬৯ জনের মধ্যে বানবাসী হন ২ লাখ ৪৫ হাজার ৭৫০ মানুষ। কানাইঘাটে ১০টি ইউয়নের ৯টি প্লাবিত হয়ে মোট ৩ লাখ ১৭ হাজার ৫৭৪ জনের জনসংখ্যার ৮০ হাজার ৬০০ জন বানবাসী হন। কোম্পানীগঞ্জের ছয়টি ইউনিয়নের মধ্যে তিনটি প্লাবিত হয়ে মোট জনসংখ্যার ১ লাখ ৯২ হাজার ৩৪৪ জনের জনসংখ্যার ৯৩ হাজার মানুষ বন্যা আক্রান্ত হন। বিয়ানীবাজারে ১০ ইউনিয়নের মধ্যে পাঁচটি প্লাবিত হয়ে মোট ২ লাখ ৬০ হাজার ৫৯৭ জনের জনসংখ্যার ৫ হাজার ৫০০ জন বন্যা কবলিত হন। গোলাপগঞ্জ উপজেলায় ১১টি ইউনিয়নের মধ্যে প্লাবিত একটি। মোট ৩ লাখ ৩১ হাজার ৩৫৮ জনের জনসংখ্যার ৩ হাজার ৫০০ জন বন্যা আক্রান্ত হন সেখানে। এছাড়া সিলেট সদরের সাতটি ইউনিয়নের মধ্যে ছয়টি প্লাবিত হয়। উপজেলায় ৪ লাখ ৪৪ হাজার ৯১২ জনের জনসংখ্যার মধ্যে বন্যা আক্রান্তের সংখ্যা এক হাজার ৬২০ জন।
এসব উপজেলায় খোলা আশ্রয়কেন্দ্রের মধ্যে জকিগঞ্জে ৫৫টিতে আশ্রয় নেন ১৯৮ জন, জৈন্তাপুরে ৪৮টিতে আশ্রয় নেন ৬৭৫ জন, গোয়াইনঘাটে ৫৬টিতে এক হাজার ২৪২ জন আশ্রয় নেন। কানাইঘাটে ৩১টি আশ্রয় কেন্দ্রে এক হাজার ৪৭৬ জন আশ্রয় নেন, কোম্পানীগঞ্জ ৩৫ আশ্রয় নেন ৭৩ জন, বিয়ানীবাজারে ৬৭ আশ্রয় কেন্দ্রে ৬০ জন, গোলাপগঞ্জ ৫৭টি আশ্রয় কেন্দ্র খোলা হয় এবং তাতে আশ্রয় নেন ১৫ জন।
বাংলাদেশ সময়: ১১২৫ ঘণ্টা, জুন ০১, ২০২৪
এনইউ/এফআর