খুলনা: ‘আমার সব ভাঙ্গে গেছে। একদম নদীতে গেওরেসে (চলে গেছে) আমি এহন আরাক জনের ঘরে আইসে উঠিছি।
রোববার (২ জুন) খুলনার দাকোপ উপজেলার সুতারখালী ইউনিয়নের কালাবগীর ঝুলন্ত পাড়ার বাসিন্দা ফজর আলী গাজীর স্ত্রী রূপবান বিবি বাংলানিউজের কাছে ঘূর্ণিঝড় রিমালের আঘাতে তিনি কতটা অসহায় হয়ে পড়েছেন তার বর্ণনা দেন এভাবে।
কান্না জড়িত কণ্ঠে তিনি জানান, তিনি এখন পর্যন্ত কোনো সাহায্য সহযোগিতা পাননি। সরকারের কাছে তার আবেদন খুব দ্রুত যেন তার ঘরটি মেরামত করে দেওয়া হয়।
বৃদ্ধা রূপবান বিবির প্রতিবেশী জিল্লুর রহমান বলেন, ঝড়ে এ পাড়ার প্রায় অর্ধশত ঘর লণ্ডভণ্ড হয়ে গেছে। যাদের মধ্যে রূপবান বিবির ঘরও রয়েছে। প্যারালাইজড স্বামী নিয়ে ঝড়ের পর থেকে তিনি অন্যের ঘরে রয়েছেন। তাদের ছেলে-মেয়ে রাঙামাটি থাকে। হতদরিদ্র রূপবান বিবির ঘর মেরামতের সামর্থ নেই। যার কারণে ৮ দিনেও ঘরে ফিরতে পারেননি তিনি।
অপর এক প্রতিবেশী রহমত আলী বলেন, ‘এহানে ঝড় একদিন না তিন দিন ধরে হইছে। ঝড়ের দিন কেউ ছিলনা বিভিন্ন জায়গায় আশ্রয় নিছিলো। ঝড় থামি যাওয়ার পরে রূপবান বিবি এসে দেহে ঘরের ভিতর কিছু নাই। শুধু ঘর খান ফেলানো আছে। মালামাল কিছু নাই স্বামীডা পঙ্গু এভাবে আরেক জনের বাড়ি আশ্রয় নিয়ে গুটিয়ে আছে। এখনো ঘরে যায় নাই। ’
জানা যায়, কালাবগীর ৮ ও ৯ নম্বর ওয়ার্ডের প্রায় তিন কিলোমিটারজুড়ে ঝুলন্তপাড়ায় ৬০০-৭০০ পরিবারের বাস। পুরো পাড়ার একটি ঘরও মাটির ওপর নেই। বাঁশের খুঁটি আর বেড়া দিয়ে তৈরি ঝুলন্ত টংঘর। ১৯৮৮ সালের প্রলয়ংকরী ঘূর্ণিঝড়ের পর থেকেই এই এলাকায় ঝুলন্ত ঘর তৈরি শুরু হয়। ঝুলন্ত ঘরের কারণে এ এলাকাকে ঝুলন্তপাড়া নামে ডাকা হয়। ভূমিহীন এসব পরিবারের জীবিকা চলে সুন্দরবন সংলগ্ন নদী থেকে বাগদা ও গলদার রেণু পোনা সংগ্রহ করে এবং মাছ ধরে। সুন্দরবনে মধু, কাঠ ও গোলপাতা সংগ্রহ করেন এখানকার অনেকেই।
সরেজমিনে দেখা গেছে, প্রলংকারী ঘূর্ণিঝড় রিমাল ঝুলন্ত পাড়ার সবখানে রেখে গেছে ধ্বংসের ক্ষত চিহ্ন। টাকার জন্য অনেকে ভেঙে পড়া বাড়ি-ঘর ঠিক করতে পারছেন না। যে কারণে ঝড় হওয়ার ৮ দিন অতিবাহিত হলেও কেউ কেউ প্রতিবেশির ঘরে এখনো মানবেতর জীবনযাপন করছেন। আবার অনেকে কোন মতে ক্ষত মেরামত করে ঘরে উঠতে শুরু করেছেন। কিন্তু সরু বিধ্বস্ত রাস্তাগুলোর কাঁদাপানি মাড়িয়ে চলতে হচ্ছে তাদের। খরস্রোতা শিবসা নদীর তীরে টংঘরের বাসিন্দারা এমনিতেই মানবেতর জীবন যাপন করেন। তার উপর এ ঝড়ে তাদের অবর্ণনীয় ক্ষয় ক্ষতি হয়েছে।
বাংলাদেশ সময়: ০৮০২ ঘণ্টা, জুন ৩, ২০২৪
এমআরএম/এমএম